বহরমপুর কোর্ট স্টেশনে রেল পুলিশের এক কনস্টেবলের বিরুদ্ধে যাত্রীকে পিটিয়ে মারার তদন্ত ভার হাত বদলে এখন সিআইডি-র হাতে।
সিআইডি’র দুই অফিসার ডিএসপি অমরনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ও ইন্সপেক্টর সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার ঘুরেও গিয়েছেন বহরমপুর। তবে তদন্তের ব্যাপারে বিশদ মুখ খুলতে চাননি তাঁরা। অমরনাথবাবুর সংক্ষিপ্ত উত্তর, “তদন্তের ব্যাপারে যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানাবে।”
ওই সন্ধ্যায় তাঁরা বহরমপুর থানায় গিয়ে ধৃত রেল পুলিশের কনস্টেবল পরিতোষ বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেন। জিজ্ঞাসাবাদ করেন ঘটনার রাতে জিআরপি থানায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের।
গত ১১ মার্চ গভীর রাতে এক জন যাত্রীকে স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে রেল লাইনের উপরে ঠেলে ফেলে দেয় রেল পুলিশের কনস্টেবল পরিতোষ। ঘটনাস্থলেই মারা যান বনগাঁর বাসিন্দা দীপক ঘোষ নামে ওই যাত্রী। পরে দীপকবাবুর স্ত্রী রমাদেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হন ওই কনস্টেবল। তাঁর বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে রেল পুলিশ। ধৃত পুলিশ কর্মীকে আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার রাতে ওই কনস্টেবল ‘মদ্যপ’ অবস্থায় ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। তা সত্ত্বেও ধৃত ওই পুলিশ কর্মীর ‘ব্রিদিং টেস্ট’ করানো হয়নি কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিআইডি’র কর্তারা। তদন্তে নেমে ওই পুলিশ কর্মীর আচরণে বেশ কিছু অসঙ্গতিও দেখতে পেয়েছেন সিআইডি কর্তারা। যেমন, রাত ১২টা থেকে ২টো পর্যন্ত ‘সেন্ট্রি’র দায়িত্বে ছিলেন পরিতোষবাবু। সেই দায়িত্বে থাকা কোনও পুলিশ কর্মীর থানা থেকে বের হওয়ার নিয়ম নেই। কোনও জরুরি ভিত্তিতে যদি থানার বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে ডিউটি অফিসার বা ওসি-র অনুমতি নিয়ে বাইরে যেতে হবে। কিন্তু প্ল্যাটফর্মে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ওই পুলিশ কর্মী কারও অনুমতি নেননি। এমনকী বাইরে যাওয়ার জন্য বিষয়টি কাউকে জানাননি। এ ছাড়া সেন্ট্রির ডিউটি করলে সঙ্গে বন্দুক বা রাইফেল থাকা জরুরি। কিন্তু ওই কনস্টেবল তা বাড়িতেই রেখে এসেছিলেন জানতে পেরে হতবাক সিআইডি কর্তারা।
একই ভাবে ওই রাতে পরিতোষবাবু টিকিট পরীক্ষার নামে কয়েক জন যাত্রীকে হেনস্থা করেন বলেও সিআইডি কর্তারা জেনেছেন। সন্দেহজনক বলে মনে হলেও কোনও যাত্রীর টিকিট পরীক্ষার অধিকার রেল পুলিশের নেই। বহরমপুরের এক শ্রেণির রেল পুলিশ বহরমপুর থেকে রাতের ট্রেনে চড়ে ‘সরকারি কাজে’ বের হন। কিন্তু সরকারি কাজে বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে জেনারেল ডায়েরি-তে কাজের বিস্তারিত বিবরণ-সহ থানা থেকে বের হওয়া এবং কাজ শেষে থানায় ঢোকার নির্দিষ্ট সময় লিখে রাখার কথা। সাধারণত ডিউটি অফিসার ওই কাজ করে থাকেন। কিন্তু এক শ্রেণির পুলিশ কর্মী ওই নিয়মের তোয়াক্কা করেন না বলেও সিআইডি কর্তাদের নজরে এসেছে।
বহরমপুর প্ল্যাটফর্মের ‘খুনের’ ঘটনার তদন্তে নেমে সিআইডি কর্তারা জানতে পারেনওই ঘটনার দু’দিন আগে ৯ মার্চ রাতে রেল পুলিশের এক জন কনস্টেবল বহরমপুর থেকে বেলডাঙা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে নামতেন বেলডাঙা থানার পুলিশ সাদা পোশাকে রেল পুলিশের ওই কনস্টেবলকে আটক করেন। কারণ, বেলডাঙা থানার পুলিশের কাছে খবর ছিল, রেল পুলিশের ওই কনস্টেবল হেরোইন বিক্রির জন্য ট্রেনে বেলডাঙায় আসছেন। যদিও তল্লাশি চালিয়ে ওই কনস্টেবলের কাছে কোনও মাদক মেলেনি। এর আগে, রেল পুলিশের এক কনস্টেবল সব্জি বিক্রিতাদের কাছ থেকে প্রায় জোর করে সব্জি নামিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়া সত্ত্বেও ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তি নেয়নি রেল পুলিশ। বর্তমানে ওই পুলিশ কর্মী নৈহাটি জিআরপিতে কর্মরত।
এ দিকে পরিতোষবাবুকে এ দিন আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এই অবস্থায় ওই কনস্টেবলকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করার প্রয়োজন আছে কি না, তা সিআইডি কর্তারা কেস ডায়েরি দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গিয়েছে। |