নিজস্ব সংবাদদাতা • পানাগড় ও কলকাতা |
পানাগড়ে বাইপাস তৈরির সমস্যা তিন মাসের মধ্যে মিটে যাবে বলে আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিধানসভায় তিনি বলেন, “দু’চার জনের জন্য সমস্যা হচ্ছিল। কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে বলেছি, তিন মাসের মধ্যে কাজ করতে হবে।”
যদিও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই) মনে করছেন না, এত কম সময়ের মধ্যে এই কাজ করে ওঠা সম্ভব। বরং কাজে নামতে বছর ঘুরে যাবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। সন্ধ্যায় এনএইচএআই-র পূর্বাঞ্চলের সিজিএম অজয় অহলুওয়ালিয়া বলেন, “আমাদের আশা, আগামী ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে জমি হাতে পাব এবং কাজে নামতে পারব।”
হাওড়ার এক প্রান্ত থেকে দুর্গাপুর হয়ে দিল্লির দিকে চলে যাওয়া ২ নম্বর জাতীয় সড়কে ডানকুনি থেকে বরাকর পর্যন্ত রাস্তা ৪ লেনের হয়েছিল ২০০১-এ। দোকান-বাড়ি ভাঙা পড়বে বলে বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের বড় অংশ আপত্তি করায় বাদ থেকে যায় পানাগড় বাজারের সাড়ে তিন কিলোমিটার। দু’লেনের ওই রাস্তায় প্রায় প্রতি দিনই যানজটে আটকে যায় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের সাবলীল গতি।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “পানাগড়ে জাতীয় সড়ক তৈরির পরিকল্পনায় ‘টেকনিক্যাল’ ভুল ছিল।” সম্প্রতি রাস্তার দু’পাশ কিছুটা চওড়া করা হয়েছে। তার চেয়ে বেশি বাড়ানোর জন্য জমি পাওয়া সম্ভব নয় বুঝে আট কিলোমিটার বাইপাস গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনএইচএআই। ইতিমধ্যেই ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার বারোয়া আড্ডা থেকে পানাগড় পর্যন্ত ১১৪ কিলোমিটার রাস্তা ছয় লেনের করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আনুমানিক খরচ প্রায় ১,৬৬৫ কোটি টাকা। তার জন্য প্রায় ১৯৩ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। বাইপাসের জমি তার মধ্যেই পড়ছে। কোন কোন মৌজায় কত জমি অধিগ্রহণ করা হবে, খবরের কাগজে দু’বার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এনএইচএআই তা জানিয়ে দিয়েছে।
প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী পানাগড় বাইপাস যাবে বর্ধমানের কাঁকসা, পন্ডালি, ধরলা ও সোঁয়াই মৌজার উপর দিয়ে। তার জন্য জাতীয় সড়ক আইনে জমি অধিগ্রহণ হচ্ছে, কিন্তু তা করছে রাজ্য প্রশাসন। এনএইচএআই-এর সিজিএম বলেন, “রাজ্য সরকারই জমির দাম এবং পুনর্বাসন প্যাকেজ ঠিক করছে। তারা জমি অধিগ্রহণ করে দিলে আমরা টাকা দিয়ে দেব।”
গত ২৯ নভেম্বর ভূমি অধিগ্রহণ দফতরের লোকজন পন্ডালি মৌজায় মাপজোক করতে গেলে ক্ষতিপূরণের প্যাকেজ জানতে চেয়ে জমিমালিকেরা তাঁদের বাধা দেন। ৬ ডিসেম্বর গড়া হয় ‘সোঁয়াই-পন্ডালি-ধরলা জমিরক্ষা কমিটি’। তাদের সঙ্গে কথা চালিয়েই জমি নিতে এগিয়েছে প্রশাসন। যদিও এখনও বেশ কিছু জমিদাতা সরকারের প্রস্তাবিত দামে সন্তুষ্ট নন।
এ দিন জমিরক্ষা কমিটির অন্যতম কর্তা কিষাণ কর্মকার জানান, সোঁয়াই মৌজার চাষিরা দাম নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে সহমত হয়েছেন। সব মিলিয়ে একরে গড়ে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা করে পাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু পন্ডালি মৌজার জনা ষাটেক জমিমালিকের অর্ধেকের বেশি প্রস্তাবিত দরে খুশি নন। ধরলা মৌজায় আবার জমি অধিগ্রহণের নোটিস দেরিতে হওয়ায় দাম নিয়ে শুনানির প্রক্রিয়া এখনও চলছে। কাঁকসা মৌজায় এমন চার জন রয়েছেন, বাইপাস হলে যাঁদের বাড়ি ভাঙা পড়বে। তাঁদের বক্তব্য, আগে যথাযোগ্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হোক, তার পরে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পেলে তবেই তাঁরা জমি ছাড়বেন।
এনএইচএআই কর্তারা বলছেন, জমি পেলে তাঁরা যত দ্রুত সম্ভব কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু আগে তো জমি হাতে আসুক। |