কোথায় বাসস্টপ
যেমন খুশি দাঁড়াও
বে সিঁড়িতে পা দিয়েছেন আবীর দাস। পুলিশের তাড়ায় বাস তখনই ছেড়ে দিল। কন্ডাক্টর ধরায় কোনওক্রমে সামলে নিলেন তিনি। শুধু আবীরবাবুই নন, হাওড়া শহরে এ অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়েছে। কারণ, এ শহরের অধিকাংশ জায়গায় নির্দিষ্ট বাসস্টপ নেই। ফলে বাস যত্রতত্র যাত্রী তোলে। যাত্রীদের একাংশের সচেতনতার অভাবও এর জন্য দায়ী বলে অভিযোগ।
আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, হাওড়ায় বেসরকারি বাস চলে প্রায় ২৭০০। এর মধ্যে দূরপাল্লার বাস ২২০টি। এ শহরে মহাত্মা গাঁধী রোড, আন্দুল রোড, কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ও শলপ রোডের দু’-একটি জায়গাতেই নির্দিষ্ট বাসস্টপ রয়েছে। অন্যান্য জায়গায় যত্রতত্র বাস দাঁড়িয়ে পড়ে। ফলে যানজট হয়। যেমন, মল্লিক ফটক এবং বঙ্গবাসীর কাছে এ ভাবেই প্রতি দিন বাস দাঁড়িয়ে থাকে। পাশ দিয়ে বাস যেতে গেলেই আটকে যায়।
পথচারীর যাওয়ার জায়গা থাকে না। শুরু হয় যানজট। কাজীপাড়া, শিবপুর ট্রামডিপো, সালকিয়া চৌরাস্তায়ও এমনটাই হয় বলে নিত্যযাত্রীদের ও বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা। নিত্যযাত্রী সৌমেন মজুমদার বলেন, ‘‘বাসস্টপ না থাকায় চলন্ত বাসেই ওঠা-নামা করতে হয়।”
হাওড়া শহরের অন্যতম ব্যস্ত মোড় ডিএম বাংলোর মোড়। হাওড়া স্টেশন এবং কলকাতা থেকে অধিকাংশ বাস বঙ্কিম সেতু পেরিয়ে এই পথেই শহরে ঢোকে। আলমপুর, রামরাজাতলা, হাওড়া ময়দান, মৌড়িগ্রাম, বি গার্ডেন, সাঁকরাইল, রানিহাটি, আমতা, ঝিখিরা রুটের বাস এ পথে যায়। তা ছাড়া দিঘা, ঘাটাল, এগরা, নন্দীগ্রাম-সহ নানা দূরপাল্লার বাসও এ পথে যায়।
অভিযোগ, এখানেও নির্দিষ্ট কোনও বাসস্টপ নেই। যেখানে-সেখানে বাস দাঁড়িয়ে যায়। মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনাও ঘটে। ইন্টার অ্যান্ড ইন্ট্রা রিজিয়ন বাস অ্যাসোসিয়েশন-এর সাধারণ সম্পাদক গৌরাঙ্গ বারিক বলেন, “এক্সপ্রেস বাসের জন্য স্টপের প্রয়োজন নেই। তবে যেখানে-সেখানে বাস দাঁড়ালে সমস্যা হয়। বঙ্কিম সেতু থেকে নামার সময় ঢালের জন্য গাড়ির গতি এমনিতেই বেশি থাকে। তাই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।”
বালিখাল, জগদীশপুর, বটানিক্যাল গার্ডেন, বকুলতলা, বেলগাছিয়া থেকে ধর্মতলা যাওয়ার রুটগুলিতেও নির্দিষ্ট বাসস্টপ নেই বলে অভিযোগ।
বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সম্পাদক সুব্রত ঘোষ বলেন, “শহরে কোথাও বাসস্টপ নেই। বিকল্প ব্যবস্থা না করেই পুলিশ কেস দিচ্ছে।” তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যাত্রী না তুলতে পারলে বাস চালাব কী করে? যাত্রীরা বাসে উঠবেই বা কী ভাবে?” নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, বাসস্টপ কম থাকার পাশাপাশি নিত্যযাত্রীদের একাংশের মধ্যে সচেতনতার অভাবও রয়েছে। তাঁরা নিজেদের সুবিধামতো জায়গায় বাস থামানোর চেষ্টা করেন।
পুরসভার বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের অরুণ রায়চৌধুরীর কথায়: “শহরে পর্যাপ্ত সংখ্যক বাসস্টপ তৈরিতে পুরসভা ব্যর্থ। এ জন্য সাধারণ মানুষের হয়রানি হচ্ছে। পুলিশ ঠিক কাজই করছে।” যদিও হাওড়ার মেয়র সিপিএমের মমতা জয়সোয়াল বলেন, “পুলিশকে বলেছিলাম বাসস্টপের কিছু জায়গা চিহ্নিত করতে। সেই মতো কিছু বাসস্টপ তৈরিও হয়েছে। তবে অনেক জায়গায় জমির অভাবে বাসস্টপ তৈরি করা যায়নি। স্টপ থাকলেও বাসচালকদের একাংশ তা মানেন না। পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি। ”
হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার অজেয় মুকুন্দ রানাডে বলেন, “বাসস্টপ ছাড়া অন্য কোথাও বাস দাঁড়ানো তো একেবারেই উচিত নয়। তাই আইন মেনেই কেস দেওয়া হয়। বাসস্টপ যথেষ্টই রয়েছে।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.