‘বিশ্বরূপম’-এর পুনরাবৃত্তি চাইছে না কেন্দ্রীয় সরকার।
সম্প্রতি কমল হাসনের ছবিটি নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। তামিলনাড়ুতে ছবিটির মুক্তি সাময়িক ভাবে আটকে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। বিষয়টা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। তার পর সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়া ছবিতে আবার নতুন করে কাটছাঁট করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে সমঝোতা হয়।
এক বার সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়ার পর সিনেমা মুক্তি পেতে আর বাধা না আসে, সেটা এ বার নিশ্চিত করতে চাইছে কেন্দ্র। এ জন্য সিনেমাটোগ্রাফ আইন সংশোধন করা দরকার কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য দিল্লি হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মুকুল মুদগলের নেতৃত্বে একটি আট সদস্যের বিচারবিভাগীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মনীশ তিওয়ারি বলেন, “কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের হাতে যে সব ক্ষমতা রয়েছে, আমরা তাকে এক তারে বাঁধতে চাইছি। যাতে নির্দিষ্ট একটি রাজ্যে সিনেমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে প্রযোজকদের বাধার মুখে পড়তে না হয়।”
শুধু অবাধ প্রদর্শন নয়, সিনেমা সংক্রান্ত যাবতীয় ছাড়পত্র দিতে এক-জানলা ব্যবস্থাও চালু করছে কেন্দ্র। আজ দিল্লিতে ‘ইনফোকম-অ্যাসোচ্যাম মেটস ফোরাম’ (মিডিয়া, এন্টারটেনমেন্ট, টেলিকম ও সোশ্যাল মিডিয়া) মঞ্চ থেকে এই ঘোষণা করেন মনীশ। তিনি বলেন, “ভারতের কোথাও সিনেমার শু্যটিং করতে হলে কেন্দ্র ও রাজ্যর থেকে নানা অনুমতি নিতে হয়। চলচ্চিত্র শিল্পের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে ফিল্ম প্রোমোশন ফেসিলিটেশন বোর্ড তৈরি করে এক-জানলা ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এতে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। রাজস্ব আয়ও বাড়বে সরকারের।” মন্ত্রকের সচিব উদয় কুমার বর্মা বলেন, শুধু বিদেশি ছবির শু্যটিংয়ের অনুমতি নয়, এ দেশের সিনেমার জন্যও ছাড়পত্র দেবে নতুন বোর্ড। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশিকা জারি হবে।
ইনফোকম ও অ্যাসোচ্যাম-এর আয়োজনে এই সম্মেলনের উদ্দেশ্যই ছিল, বিভিন্ন মাধ্যমের ভবিষ্যৎ ও তার সুবিধা-অসুবিধাগুলি তুলে আনা। ইনফোকম-এর চেয়ারম্যান তথা এবিপি প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি এবং সিইও ডি ডি পুরকায়স্থ বলেন, “আজকের জীবনযাত্রায় সংবাদমাধ্যম, বিনোদন, টেলিকম ক্ষেত্রের প্রভাব অনস্বীকার্য। সোশ্যাল মিডিয়া সব কিছু বদলে দিচ্ছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে একটার থেকে আর একটাকে আলাদা করা মুশকিল। সেদিকে চোখ রেখেই ইনফোকম-অ্যাসোচ্যাম মেটস ফোরামের আয়োজন।” তাঁকে সমর্থন করে মনীশের বক্তব্য দেড়শো বছরের পুরনো সংবাদমাধ্যম, একশো বছরের চলচ্চিত্রশিল্পের সঙ্গে এখন বিশ বছরের টেলিকম ক্ষেত্র বা ছয়-সাত বছরের সোশ্যাল মিডিয়াকে আলাদা করা মুশকিল। একসঙ্গে এই মাধ্যমগুলিকে নিয়ে ভাবতে হবে। সরকারও সেই চেষ্টাই করছে।
কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রতার মন্ত্রী জানান, সিনেমার দ্রুত ছাড়পত্র, সিনেমার প্রদর্শন সংক্রান্ত বাধা এবং পণ্য-পরিষেবা কর চালু করে কর সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে চাইছে কেন্দ্র। কেব্ল টিভি সম্প্রচারের ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তি চালু করেও গোটা বিষয়ে স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা হচ্ছে। তাঁর মতে, গোটা বিষয়ে মত বিনিময়ের জন্যই ইনফোকম-অ্যাসোচ্যামের মতো মঞ্চের প্রয়োজন। ইনফোকম-চেয়ারম্যানের প্রতিশ্রুতি, এ বার থেকে নিয়মিত এই অনুষ্ঠান দিল্লিতে হবে এবং আরও বড় আকারে।
দু’দিনের সম্মেলনে উপস্থিত অনেকেই জানতেন না, এ বছর জাপানি চলচ্চিত্রেরও শতবর্ষ। জাপানি সিনেমা জগতের এক গুচ্ছ প্রতিনিধিকে নিয়ে এসে ভারতীয় ও জাপানি সিনেমাকে এক মঞ্চে নিয়ে আনার কাজটাও করল ইনফোকম-অ্যাসোচ্যাম। সম্মান জানানো হল ডি রামানায়ডু, বাসু চট্টোপাধ্যায় এবং শাহরুখ খানকে। শাহরুখ নিজে উপস্থিত থাকতে না পারলেও বার্তা পাঠিয়ে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। ভারতীয় সিনেমার শতবর্ষ উপলক্ষে পুরনো হিন্দি ছবির দুষ্প্রাপ্য পোস্টারের প্রদর্শনীও বাহবা কুড়োল সকলের।
|
মমতার বক্তৃতায় ফরাসি সৌরভ |
ফরাসি চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে
ফরাসি কনসাল জেনারেল ফারবিস এতিয়েন। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ আচার্য |
কলকাতার ফরাসি কনসাল জেনারেল ফাবরিস এতিয়েন বা ফরাসি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আলিয়ঁস ফ্রাঁসেজের অধিকর্তা স্তেফান আমালি স্পষ্ট বাংলায় ‘মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’-কে সম্ভাষণ জানিয়েছিলেন। মমতাও ফরাসিতেই তাঁদের ধন্যবাদ জানালেন। শুক্রবার নন্দনে ফরাসি চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী আসরে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় কয়েকটি ফরাসি শব্দও শোনা গেল। ভারত-ফ্রান্স দু’দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ে এখন এ দেশের সাতটি শহরে চলছে ‘বঁজ্যু ইন্ডিয়া’-উৎসব। তার অঙ্গ হিসেবেই রবিবার পর্যন্ত দেখানো হবে ছ’টি সাম্প্রতিক ফরাসি ছবি। সেই আসরে ‘চলচ্চিত্রপ্রেমী মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি আনন্দের অনুভূতি’বলে মন্তব্য স্তেফানের। গোটা গোটা বাংলা বাক্য পড়া ছাড়াও বক্তৃতায় ফরাসিরা সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণালের কথা মনে করালেন। টলিউডও বলিউডের মতো জনপ্রিয় হয়ে উঠুক বলে শুভেচ্ছা জানালেন। আর মমতা বললেন, “আমি ফরাসি জানি না, তা-ও বলার চেষ্টা করছি। আপনাদের মেসি (ধন্যবাদ)! বঁ সোয়া (শুভ সন্ধ্যা)। বঁজ্যু উৎসবকে শুভেচ্ছা জানাই।” দিদির মুখে ফরাসি শুনে মঞ্চে দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস থেকে শুরু করে সবাই হাততালিতে মুখর। ফরাসি-বাংলার হাত ধরাধরিতে অনুষ্ঠান জমজমাট। |