প্রয়াত চাভেস
তেল দেব না, বলেছিলেন আমেরিকাকে
বেশি খবরদারি করলে ভেনেজুয়েলা থেকে এক ফোঁটাও তেল নিতে দেব না।
আমেরিকাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন তিনি। রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে দাঁড়িয়ে জর্জ বুশকে ‘শয়তান’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। লাতিন আমেরিকার একাধিক দেশে তাঁর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল দ্রুত। টানা ১৪ বছর ধরে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একাধারে সমীহ আদায় করে নেওয়া এবং ভীতি সঞ্চার করা উগো চাভেস মারা গেলেন মাত্র ৫৮ বছর বয়সে।
২০১১ সাল থেকে ক্যানসারে ভুগছিলেন। পরিণতিটা আকস্মিক নয় সে দিক থেকে। কিউবায় নিয়ে গিয়ে বারবার অস্ত্রোপচার হচ্ছিল। কখনও শোনা যাচ্ছিল, অবস্থার অবনতি হচ্ছে। কখনও বলা হচ্ছিল, ক্রমশ সুস্থ হচ্ছেন। সমাজতন্ত্রী দেশনায়কদের ট্র্যাডিশন মেনেই অনেক ধোঁয়াশাও ছিল। শেষ বার ভোটে জেতার পর, ৮ ডিসেম্বর নিজেই তিনি টিভি মারফত জানান, আরও একটা অস্ত্রোপচার হবে। সেই অস্ত্রোপচারের পরই ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। ১৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হয়, কিউবা থেকে কারাকাসে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে প্রেসিডেন্টকে। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার দুপুরে টেলিভিশনে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ভাঙা গলায় জানালেন খবরটা প্রেসিডেন্ট উগো চাভেস প্রয়াত। ভেনেজুয়েলা জুড়ে নিমেষের মধ্যে নেমে এল উদভ্রান্তি।
পাগলের মতো ছুটছে মানুষ। কানে মোবাইল। রাস্তায় থমকে থাকা গাড়ির লম্বা লাইন। হঠাৎ বন্ধ হয়ে গিয়েছে দোকানপাট, শপিং মল। সন্ধে নামতে না নামতেই রাজধানী কারাকাসের মেন স্কোয়ারে জনজোয়ার। সকলেরই এক প্রশ্ন, এ বার কী হবে?
প্রশ্নটা অনিবার্য। কারণ, চাভেস দেশটাকে পাল্টে দিয়েছিলেন। সেটা ভাল না খারাপ, তা নিয়ে অজস্র বিতর্ক আছে। কিন্তু পরিবর্তনটাকে অস্বীকার করতে পারেন না কেউই। চাভেসের আগে ভেনেজুয়েলা ছিল, আমেরিকার বাধ্য তেলভাণ্ডার। সেই পুরনো ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনীতেই যোগ দিয়েছিলেন চাভেস। কিন্তু মাওবাদী গেরিলাদের দমন করার বদলে তাদের সঙ্গেই গড়ে উঠেছিল তাঁর সখ্য। ক্ষমতা দখল করতে চেয়ে ১৯৯২ সালেই অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিলেন। সফল হননি।
১৯৯৮ সালে ফিরে এলেন চাভেস। আর সামরিক অভ্যুত্থান নয়, নির্বাচনে জিতে। তার পর ১৪ বছর ধরে একক জনপ্রিয়তায় ভর করে নিজের ক্ষমতা প্রায় নিরঙ্কুশ করেছেন। নির্বাচন বন্ধ রাখেননি। কিন্তু সংবিধানে পরপর বদল এনে প্রায় একদলীয় ব্যবস্থার ভিত গড়েছেন। সেনাবাহিনী দখলে রেখেছেন। সব রকম বিরোধী স্বর কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছেন।
তেল আর প্রাকৃতিক গ্যাসের একটা বড় অংশ জাতীয়করণ করেছেন। বেশ কিছু মার্কিন সংস্থাকে দেশছাড়া করেছেন। এক বার ৪৮ ঘণ্টার জন্য ক্ষমতাচ্যুতও হয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিবারই ফেরত এসেছেন। কেন? কারণ চাভেসই নিজের দরে আমেরিকাকে তেল বেচেছেন। সেই টাকায় দেশ জুড়ে গরিবদের জন্য সস্তায় খাবার আর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল পিতাপুত্রের মতো। লিবিয়ার মুয়াম্মর গদ্দাফি ছিলেন চাভেসের বন্ধু। এই অক্ষ স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছিল হোয়াইট হাউসের।
এখন কী হবে? আমেরিকার খবরদারি ফিরে আসবে কিনা, সেই প্রশ্ন অনেকেরই। তবে কেউ কেউ বলছেন, ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির পক্ষে একটা আশাও দেখা দিতে পারে। কারণ, তেল আর গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর দিকে ততটা নজর দেননি চাভেস। আমেরিকার সঙ্গে বোঝাপড়ায় আসার সুযোগও নিতে পারে নতুন ভেনেজুয়েলা। সম্ভাবনা উস্কে বারাক ওবামা বলছেন, ভেনেজুয়েলার মানুষের পাশেই আছে আমেরিকা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.