‘রাজ্য হস্তশিল্প মেলা’ জানুয়ারির ২৪ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল জলপাইগুড়ি শহরে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার শিল্পীরা হাজির হন তাঁদের পশরা সাজিয়ে। খদ্দের সামলানোর ফাঁকে চলছিল তাঁদের অপূর্ব শিল্পসৃষ্টি! পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নাড়াজোল গ্রাম থেকে এসেছিলেন পটচিত্রশিল্পী হারু চিত্রকর। শক্ত সমর্থ ছোটখাটো চেহারা, বয়স ৪৫। মণ্ডপের বারান্দায় চলছিল পটচিত্রের কাজ। কংসাবতী ও শিলাবতী নদীর মাঝে তাঁদের বসত। ফলে অতিরিক্ত বর্ষায় বা বন্যায় ভয়াল নদী বাড়িঘর ভাসিয়ে নেয় ফি-বছরেই। সমস্ত প্রতিবন্ধকতার মাঝে তবু ওঁর পটশিল্পের কাজ চালিয়ে যান হারুবাবু। ২ সন্তান-সহ পরিবার চালাতে প্যান্ডেল তৈরি, ভ্যান রিকশা চালানো ইত্যাদি কাজ তাঁকে করতে হয়। সমান দক্ষতায় তিনি মাটির পুতুল তৈরি করে, রং দিয়ে তা সাজান! যদিও শোনা গেল মাটি জোগাড়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে। |
হারুবাবু কাজ শিখেছেন তাঁর বাপ-ঠাকুরদার কাছে। এটা তাঁদের পরম্পরা। মাটির পাত্র বা হাতপাখার উপর তুলির টানে ফুটিয়ে তোলেন পুরাণে বর্ণিত চরিত্র। ব্যবহার করেন তরি-তরকারি-ফুল-লতাপাতা থেকে প্রাপ্ত জৈব রং। পুতুলের জন্য রং সংগ্রহ করেন বাজার থেকে। পটশিল্পের বাজার অনিশ্চিত, এই প্রাচীন কলা সংরক্ষণের কোনও সামাজিক উদ্যোগ নেই। তবুও স্রেফ প্রাণের টানেই নিজের গ্রামের ১৩ জন শিল্পীকে পটশিল্পে তালিম দিচ্ছেন। হারুবাবুর আশা, নগরবাসীদের দেওয়ালে দেওয়ালে যদি এক দিন তাঁদের শিল্প ঠাঁই পায়, তবে তাতে শুধু সেই সব ড্রইংরুমের শোভা বৃদ্ধিই হবে না একই সঙ্গে প্রান্তিক এক শিল্পী সমাজও স্বীকৃতি পাবে এবং পাশাপাশি সচ্ছলতার মুখ দেখবে কিছু পরিবার! প্রশান্ত নাথ চৌধুরী, জলপাইগুড়ি
|
১৩ কি অশুভ? না, সংখ্যাতত্ত্ববিদদের আলোচনায় নয়, এটা সাধারণ ধারণা। সংস্কারের বেড়াজালে সংখ্যার প্রচলিত স্থবিরতা। তবে যারা গতানুগতিকতাকে মনে করে মরণ, গভীর অন্ধকারের কালোকে দু’পায়ে মাড়িয়ে আলোর পথযাত্রী যারাতাদের আছে দুর্বার গতি। কোনও সংখ্যার নিয়মে আটকে যাওয়া তাদের বারণ। কারণ, তারা যে আঠেরোর প্রতিনিধি। তাই ২০০০ সালে তাদের যে উদ্যম যাত্রা শুরু করেছিল আগামীর পথে, ২০১৩-তে তা বহমান! লক্ষ্য ক্রমশ ক্রমবর্ধমান। ঋতব্রতরা জানে না থামা। সভ্যতা, সংস্কৃতি আর সাহিত্যের মেলবন্ধনে আত্মনিয়োগ: ‘স্টুডেন্টস অ্যাকাডেমি’।
ওরা মানে ঋতব্রত, উজ্জ্বল, অর্পণ, শুভজিত্, পঙ্কজ, আশিস, বিশাল, প্রীতম, অভিজিত্, সৌরভ (নন্দী), সৌরভ (কুণ্ডু)। সম্প্রতি ওরা প্রকাশ করল বার্ষিক পত্রিকা ‘স্বপ্নতরী’-র দ্বিতীয় বছরের সংখ্যাটি। ৯টি কবিতা ও ১টি সংক্ষিপ্ত গদ্যে বিষয়বস্তুর গন্তব্য সর্বব্যাপী। জীবনের নানা পল, অনুপল, গতিময়তা, আপন জন, নস্টালজিয়া, মৃত্যুর মুখোমুখি, রাখিবন্ধন এবং স্বামী বিবেকানন্দর সার্ধশতবর্ষে পুনরুজ্জীবনের প্রেক্ষিত ছুঁয়েছে ওরা হৃদয়ের উষ্ণতায়, সম্পর্কের বন্ধনে, স্মৃতিকথার আঙিনা ও অনুপ্রেরণার আলোকবর্তিতায়!
২০০০ সাল থেকে রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুল জন্মবার্ষিকী উদযাপন, সঙ্গীত ও সাহিত্য চর্চা, খেলাধুলার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে নানা রকম ভাবনার পাশাপাশি ওদের অগ্রাধিকারে রয়েছে সমাজের নিগূঢ় তত্ত্ব, সমস্যার চিহ্নিতকরণ এবং সমাধানের ইঙ্গিতচেতনা।
কৈশোর কালটাই যারা এখনও পেরোয়নি পুরোপুরি, যারা ভবিষ্যতের নব্য যুবক, নিত্য দিনের পড়াশোনার আবহেও মনের ভিতরে যাদের বাজে দেশমাতৃকার চির-আহ্বান তারাই তো জানবে, ‘আমরা শক্তি আমরা বল, আমরা ছাত্রদল’। আর তারাই তো তাদের নিয়ে গড়া এই স্বপ্নতরী স্টুডেন্টস অ্যাকাডেমিকে ঘিরে-ধরা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে গড়ে তুলবে আত্মবিশ্বাসী লড়াই। এ বার ‘স্বপ্নতরী’-তে প্রকাশ হল সেই সব পাওয়া-না-পাওয়ার গভীর ইতিকথা!
হাজার ঝড়েও তরী যেমন সুনির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে চায়, স্টুডেন্টস অ্যাকাডেমি তাদের স্বপ্নতরীকে সেই ভাবেই নিয়ে যেতে চায়। সময় ও সমাজের জলছবিতে রাখতে চায় ওদের চিন্তা আর মননের ছাপ। মানব সমাজের এ সব অনন্য সম্পদ আগলে রেখে ওদের বইঠা দিয়েই এগিয়ে দেব, এ হোক বর্তমান ও ভবিষ্যতের অঙ্গীকার!
তুহিনশুভ্র মণ্ডল, বালুরঘাট |