আজকের শিরোনাম |
রেল বাজেট ২০১৩-১৪ |
|
রেলভাড়া কি বাড়বে ফের?
এ বারের বাজেটে পশ্চিমবঙ্গ নতুন কী কী পেতে চলেছে?
বহু বছর পর কংগ্রেসের হাতে রেল মন্ত্রক। রেলের ক্ষেত্রেও কি তারা সংস্কারের রাস্তায় হাঁটবে?
এমনই নানা জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রেল বাজেট পেশ করলেন রেলমন্ত্রী পবনকুমার বনশল। সকালবেলাতেই তিনি রেল ভবনে পৌঁছে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে সোয়া এগারোটা নাগাদ পৌঁছেছেন সংসদে। বেলা বারোটা দশ নাগাদ সংসদে বাজেট পেশ শুরু করেন রেলমন্ত্রী।
রেলমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথমে বাজেটে পবনকুমার বনশল জানিয়েছেন—
|
সম্ভাষণ |
• চার মাসের রেলমন্ত্রীত্বের সময়ে তিনি নতুন ট্রেন-সহ রেলের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য সমাজের নানা স্তর থেকে প্রস্তাব পেয়েছেন। সবটা করে ওঠা তাঁর পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তবে যতটা তাঁর সাধ্যের মধ্যে আছে তিনি নিশ্চয়ই চেষ্টা করবেন।
• আর্থিক বুনিয়াদ সুদৃঢ় না হলে রেলের উন্নয়ন কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।
• রেল চালানোর খরচ প্রতি দিন বাড়ছে। কিন্তু তা সামাল দিতে এত দিন রেলের পণ্য মাশুলই শুধু বাড়ানো হয়েছে।
আর তাতেই রেলের আর্থিক পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে।এর প্রভাব পড়েছে যাত্রী সুরক্ষাতেও।
• কুম্ভমেলায় আসা পূণ্যার্থীদের ইলাহাবাদ স্টেশনে দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে তিনি গভীর ভাবে দুঃখপ্রকাশ করেছেন।
• ভবিষ্যতে এই ধরনের বৃহত্ মেলার আয়োজনের ক্ষেত্রে রেল আরও সদর্থক ভূমিকা নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পবনকুমার।
• ২০১১-১২ আর্থিক বছরে রেলের ২২ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এই আর্থিক বছরে তাঁর আশা সেটা আরও ৪০০ কোটি টাকা বাড়বে।
• আর্থিক দিক থেকে রেলের আরও শক্তিশালী হওয়া জরুরি বলে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ রেল বাজেটে জানিয়েছেন পবনকুমার বনশল। |
|
|
যাত্রী সুরক্ষা |
• রেল সুরক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অত্যাধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা ও রেল লাইন
বসানোর বিষয়ে দেওয়া হবে যথেষ্ট গুরুত্ব।
• তিনি জানান, রেল দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছে।
তবে ‘দুর্ঘটনা শূন্য অবস্থা’ তৈরি করতে রেলকে আরও কাজ করতে হবে। এবং পবনকুমারের দফতর বেশ তত্পরতার সঙ্গে সেই কাজ শুরু করেছে।
• ‘ট্রেন কলিশন অ্যাভয়ডাল সিস্টেম’ চালু করার কথা জানিয়েছেন বনশল। এই ব্যবস্থায় দুর্ঘটনার হার যথেষ্ট কমবে বলে তাঁর আশা।
• রেলের বেশির ভাগ দুর্ঘটনা লেভেল ক্রসিং-এ হয় বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। তাই ওই সমস্ত জায়গায় ওভারব্রিজ ও আন্ডারব্রিজ করে দুর্ঘটনা এড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
• তবে এই লেভেল ক্রসিং সংক্রান্ত উন্নয়নে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। যার সংস্থান এক বছরের মধ্যে রেলের পক্ষে করা অসম্ভব। তাই ধীরে ধীরে এই প্রকল্পে উন্নয়নের কথা ঘোষণা করেন পবনকুমার।
এই প্রকল্পে তিনি কেন্দ্রীয় ‘রোড ফান্ড’-এর সাহায্য চেয়েছেন।
• দুর্ঘটনাস্থলে দ্রুত ‘রিলিফ’ পাঠাতে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার বেগে চলা একটি বিশেষ ট্রেন চালুর কথা বলেন রেলমন্ত্রী।
• দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দুর্বল সেতুগুলিকে খুব দ্রুততার সঙ্গে সারানোর কাজ শুরু করা হবে। এর ফলে রেলের সুরক্ষা অনেকটা বাড়বে বলে তাঁর আশা।
• রেল চলাচলের ক্ষেত্রে তিনি অগ্নি নিরোধক ব্যবস্থা আরও জোরদার করার কথা ঘোষণা করেন।
• ২০১৪ সাল থেকে দশ বছরের জন্য ‘কর্পোরেট সেফটি প্ল্যান’-এর সূচনা করেন রেলমন্ত্রী।
• কাকোদকর ও পিত্রোদা কমিটির সুপারিশ রূপায়ণের চেষ্টা চলছে।
• রেলের সুরক্ষা বাহিনীতে মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন পবনকুমার।
• শহর ও শহরতলীতে শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য যে বিশেষ ‘লেডিজ স্পেশ্যাল’ ট্রেন চলে, সেখানে শুধুই মহিলা আরপিএফ থাকবে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী।
|
|
|
যাত্রী পরিষেবা |
• প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সংখ্যা গত ১০ বছরে প্রায় ৪ হাজার বেড়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। ২০০২ সালে ৮৮৯৭টি প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলত। ২০১১ সালের শেষে সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ১২৩৩৫-এ।
• রেল পরিষেবার ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ক্যাটারিং ব্যবস্থায় যে দুর্বলতা রয়েছে, সে কথা স্বীকার করে নিয়ে রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই পরিষেবা ক্ষেত্রটি রেল যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। ‘ফুড সেফটি অডিট’-এর মাধ্যমে এই পরিষেবা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে, যেটি বাইরের কোনও সংস্থাকে দিয়ে চালানো হবে।
• যাত্রী পরিষেবাকে বিসর্জন দিয়ে তিনি যে নতুন ট্রেন বাড়াতে মোটেও আগ্রহী নন, সে কথা জানিয়েছেন পবনকুমার। যে সমস্ত ট্রেন এখন চলছে, সেগুলির মাধ্যমেই পরিষেবার মান আরও বাড়াতে হবে।
• আধার কার্ডের সঙ্গে যাতে রেল পরিষেবাকে জোড়া যায় সে বিষয়ে তিনি আধার কার্ডের প্রবর্তক নন্দন নিকেলনির সঙ্গে কথা বলবেন।
• যে সমস্ত স্টেশন ১০ লক্ষেরও বেশি যাত্রী ব্যবহার করে, সে রকম ১০৪টি স্টেশনে যাত্রী পরিষেবার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেবে রেল।
• ট্রেনের ভিতরেই যাত্রী পরিষেবার জন্য
ইলেকট্রনিক নোটিস বোর্ড বসানোর কথা বলেন রেলমন্ত্রী। তাতে ট্রেনের ভিতরে বসেই যাত্রীরা জানতে পারবেন কোন স্টেশন আসছে।
• নয়াদিল্লিতে একটি নতুন টার্মিনাল স্টেশনের ঘোষণা করে পবনকুমার।
• রাত সাড়ে বারোটা থেকে পর দিন রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত ইন্টারনেটের মাধ্যমে যাতে যাত্রীরা টিকিট বুকিং করতে পারেন সে বিষেয়ে রেল উদ্যোগ নিয়েছে ইতিমধ্যে। এর ফলে প্রতি মিনিটে ৭২০০ টি টিকিট বুক করা যাবে। যা আগে ছিল মাত্র ২০০০।
• সংরক্ষিত টিকিটের যাত্রীকে এসএমএস-এর মাধ্যমে যাতে মনে করিয়ে দেওয়া যায় সে বিষয়েও কাজ শুরু করেছে রেল।
• বিদেশি পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে দিল্লি-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শহরে করা হবে ‘এগজিকিউটিভ লাউঞ্জ’।
• কাশ্মীরে পর্যটকদের সুবিধার জন্য রেলের সঙ্গে পাওয়া যাবে বাসের টিকিটও।
• রেলের বিভিন্ন পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য একটি বিশেষ টোল ফ্রি নম্বরের কথা বলা হয়েছে— ১৮০০১১১৩১২। |
|
|
বিশেষ উদ্যোগ |
• যে সমস্ত জায়গায় ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ট্রেন যাতায়াত করে, সেখানে মাঝেমাঝেই হাতি মৃত্যুর ঘটনায় যথেষ্ট উদ্বিগ্ন রেলমন্ত্রী। এই মৃত্যু রুখতে রেল এক বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থার সূচনা করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
• সারা দেশ জুড়ে ১৭৯টি এস্কেলেটর ও ৪০০টি লিফ্ট বসানো হবে। বড় বড় স্টেশনে এই পরিষেবার ফলে উপকৃত হবেন বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী যাত্রীরা।
• রেলে প্রতিবন্ধীদের চাকরির জন্য বিশেষ কর্মসংস্থানের কথা বলেন রেলমন্ত্রী।
• শতাব্দী ও রাজধানী এক্সপ্রেসে ‘অনুভূতি’
নামের একটি বিশেষ কোচ সংযোজিত হবে, তাতে আরও উন্নত ধরনের পরিষেবা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে এই কোচের ভাড়া কী হবে, তা এখনও জানা যায়নি।
• স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এত দিন এক বছর অন্তর কার্ড পুনর্নবীকরণ করতে হত। এ বার থেকে সেটা ৩ বছর পর পর করতে হবে।
স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারের অবিবাহিত
সদস্যরাও এই কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন।
|
|
|
রেল কর্মচারীদের জন্য |
• শুধু যাত্রীদের জন্য নয়, রেলের কর্মচারীরাও যাতে আধার পরিষেবার আওতায় আসতে পারেন সে বিষয়েও সচেষ্ট হবেন মন্ত্রী।
• দ্বাদশ যোজনা কমিশনে পিপিপি-র ক্ষেত্র বাড়ানো হবে। রেলের কর্মচারীদের জন্যও এই পিপিপি মডেল চালু করা হবে।
• রেলে দেড় লক্ষ কর্মসংস্থান পূরণ করার কথা বলা হয়েছে।
• রেলের খেলোয়াড় কর্মচারীদের জন্য গঠিত করা হয়েছে ‘রেলওয়ে স্পোর্টস প্রোমোশন বোর্ড’। পদকবিজয়ী সমস্ত খেলোয়াড়দের দেওয়া হবে একটি বিশেষ কার্ড। এর ফলে শতাব্দী-সহ বিভিন্ন ট্রেনে তাঁরা বিশেষ সুযোগ পাবেন। |
|
|
সরাসরি বাড়ল না যাত্রী ভাড়া |
• ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে রেলে জ্বালানীর খরচ বাড়বে ৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখনই রেলের যাত্রী ভাড়া বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন পবনকুমার। সে ক্ষেত্রে তাঁর মত, প্রতি বছর যদি ৫-৬ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো যায়, তাতে যাত্রীদের উপর খুব একটা চাপ পড়বে না।
• ২২ জানুয়ারি ভাড়া বাড়ানোয় রেলের প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা আয় বাড়বে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী।
• প্রতি টিকিটে এ বার থেকে লাগবে জ্বালানী সারচার্জ।
বছরে দু’বার সারচার্জ নির্ধারিত হবে। |
|
|
রেলের প্রকল্প ও কারখানা |
• পানীয় জলের জন্য নতুন ৬টি ‘রেল ওয়াটার বটলিং প্ল্যান্ট’-এর ঘোষণা করেন। তবে তার একটিও পশ্চিমবঙ্গে নেই বলে জানা গিয়েছে।
• বারামুলা, অরুণাচল প্রদেশ-সহ বিভিন্ন সীমান্তবর্তী অঞ্চলে লাইন বসানোর কাজে অগ্রাধিকার দেবে রেল।
• মণিপুর নতুন রেল লাইন বসানোর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে।
• ৩৪৭ টি প্রকল্প দেশ জুড়ে অগ্রাধিকার পেয়েছে বনশলের বাজেটে, যার একটিও পশ্চিমবঙ্গে নয়।
• ‘সাপ্লিমেন্টারি বাজেট’
তুলে দেওয়ার ভাবনার কথা জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী।
• লোকোমোটিভ ইঞ্জিনে শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হবে।
• ‘ন্যাশনাল রেলওয়ে মিউজিয়াম’
ঢেলে সাজানো হবে।
• রায়বরেলিতে লৌহ কারখানা করা হবে।
• ভিলওয়াড়াতে ইএমইউ প্রকল্প গড়া হবে।
• অন্ধ্রপ্রদেশে রেলের ওয়ার্কশপ তৈরি করা হবে।
• কালাহান্ডিতে রেলের কোচ ফ্যাক্টরি তৈরি করা হবে।
• গঞ্জামে ওয়াগন ফ্যাক্টরি করা হবে।
• নাগপুরে রেলের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হবে।
• সিকেন্দরাবাদে ‘ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব রেলওয়ে ফাইন্যন্স ডিপার্টমেন্ট’-এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়া হবে।
• মুম্বই শহরতলীতে এ বছর থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লোকাল ট্রেন চালানো হবে।
• দেশ জুড়ে ৫০০ কিলোমিটার নতুন রেল লাইন বসানো হবে।
• পশ্চিমবঙ্গের দমদম-নোয়াপাড়া মেট্রো পরিষেবা শেষ হবে মার্চের মধ্যেই।
• প্রায় সাড়ে সাতশোটি জায়গায় ডবল লাইনের কাজ শুরু হবে।
• কলকাতা ও চেন্নাইয়ে লোকাল ট্রেনের কামরার সংখ্যা বাড়ানো হবে।
• কলকাতায় নতুন ১৮ টি লোকাল ট্রেন চালানো হবে।
• কলকাতার ৪টি মেট্রো প্রকল্পেই
বরাদ্দ ছাঁটাই। |
|
|
রেলমন্ত্রীর লক্ষ্য |
• পণ্য বহন করা হবে ১৪৭ হাজার মিলিয়ন টন।
• যাত্রী সংখ্যা বাড়বে ৫.২ শতাংশ, এর ফলে ভাড়া বাবদ আয় বাড়বে ৪২ হাজার কোটি টাকা।
• রাজস্ব আয় বেড়ে হবে ১৪৩ হাজার কোটি টাকা।
• বছরে খরচ ধরা হয়েছে ৯৬ কোটি টাকা।
• মূল্যের অবনমন ধরা হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা।
• রেল মন্ত্রকের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঋণ নেওয়া হবে ১৫ হাজার কোটি টাকা।
• এ বছর শুরু করা হচ্ছে ঋণ সংক্রান্ত ‘ডেট সার্ভিস ফান্ড’। এ জন্য ধরা হয়েছে ৪ হাজার কোটি টাকা।
• রাশিয়া ও চিনের পর ভারতীয় রেলই ১ বিলিয়ন টন পণ্য পরিবহনের যোগ্যতা অর্জন করবে বলে পবনকুমার আশা প্রকাশ করেছেন।
• রেলের ‘স্ক্র্যাপ’ বিক্রি করে ৪৫০০ কোটি টাকা আয়ের কথা বলা হয়েছে।
• এই আর্থিক বছরের শেষে রেলমন্ত্রীর আশা রেলের লাভ হবে ১২ হাজার কোটি টাকা। |
|
|