স্মারকলিপি না নেওয়ায় অধীরের সামনেই তাণ্ডব
স্মারকলিপি জমা দিতে মুর্শিদাবাদ জেলাশাসকের কাছে গিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি-সহ জেলা নেতারা। কিন্তু সে সময়ে ঘরে ছিলেন না জেলাশাসক রাজীব কুমার। ‘শাস্তি’ হিসেবে বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমের বাংলো এবং লাগোয়া সাকির্ট হাউস ঘেরাও করে কার্যত তাণ্ডব চালাল কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকেরা।
অভিযোগ, একের পর এক ফুলের টব গুঁড়িয়ে দিয়ে, আসবাবপত্র তছনছ করে, গাড়ির কাচ ভেঙে প্রায় আধ ঘণ্টার এই চরম বিশৃঙ্খলার নেতৃত্বে থাকলেন কেন্দ্রীয় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। মন্ত্রী সে কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, “কংগ্রেস কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে হয়তো দু-একটা ইট পাটকেল ছুঁড়ছে। ভাঙচুর হয়নি। আমিই তো উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেছি।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও একই সুরে বলছেন, “অধীর জেলাশাসকের সঙ্গে দেখাই করতে যাননি। আমরা গিয়েছিলাম। অধীর যান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এ হেন আচরণ নির্বাচনী বিধিভঙ্গ বলেই সরব তৃণমূল। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “এটাই তো চেনা অধীর চৌধুরী। নির্বাচনী বিভি ভেঙে এই গুন্ডামি তো ওই-ই করতে পারে!” মুর্শিদাবাদের রেজিনগরের উপনির্বাচন-প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে অধীর জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করতে পারেন না বলেই তাঁদের দাবি। তবে, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কথায়, “এ ক্ষেত্রে মন্তব্য করাও নির্বাচন বিধি না মানার সামিল।”
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুনীল গুপ্ত অবশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বহরমপুরে এ দিনের ঘটনার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কোনও সম্পর্ক নেই বলে। তাঁর মন্তব্য: “এটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারই নয়।”
কী হয়েছিল এ দিন? খুনের অভিযোগে সফিকুল শেখ (৫২) নামে এক যুবককে ৭ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি এলাকায় পরিচিত কংগ্রেস কর্মী। দিন কয়েক পুলিশ হেফাজতে রাখার পর তাঁর জেল হয়। সেখানেই ৭ জানুয়ারি আচমকাই মারা যান শফিকুল। কংগ্রেসের অভিযোগ, পুলিশ লকআপে মারধরের ফলেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ওই কংগ্রেস কর্মী। ঘটনার বিচারবিভগীয় অথবা সিবিআই তদন্ত দাবি করে এ দিন জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে করে কংগ্রেস। সেখানে থেকেই জেলাশাসকের কাছে ওই স্মারকলিপি জমা দিতে যাওয়ার কথা ছিল।
জেলা কংগ্রেসের দাবি, এ দিন দুপুর তিনটেয় স্মারকলিপি নেবেন বলে জেলাশাসক নিজেই জানান। সেই মতো কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরবের নেতৃত্বে কয়েকজন বিধায়ক স্মারকলিপি জমা দিতে গিয়েছিলেন। জেলাশাসক ঘরে ছিলেন না। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, নির্বাচনের কাজে হঠাৎ বেরিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। কংগ্রেসের স্মারকলিপি নেওয়ার জন্য রয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক।
আগাম সময় দিয়েও স্মারকলিপি নেওয়ার জন্য জেলাশাসকের এই ‘অনুপস্থিতি’কে ‘অপমান’ হিসেবেই দেখছে কংগ্রেস। অধীর বলেন, “কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আগে আমি দলের একএকনিষ্ঠ কর্মী। ফলে দলের প্রদেশ সভাপতি থেকে পরিষদীয় দলনেতাকে অসম্মান করা মানে দলকেই অপমান করা।” ‘অপমানিত’ কংগ্রেস কর্মীরা ফিরলে মঞ্চ থেকেই অধীর হুঁশিয়ারি দেন, “আধ ঘণ্টা দিলাম। স্মারকলিপি না নিলে দেখুন কি হয়!” ঘড়ি ধরে মিনিট পঁচিশ পরেই দলীয় কর্মীদের নিয়ে জেলাশাসকের দফতরের দিকে হাঁটতে থাকেন অধীর।
তা বলে এমন তাণ্ডব? অধীর বলেন, “যদি সত্যিই তাণ্ডব চালাতাম তা হলে ওই বাংলো কিংবা সার্কিট হাউসের একটি ইটও আস্ত থাকত না। জেলা প্রশাসন আগে থেকেই ভাঙচুর চালিয়ে আমাদের অপবাদ দিচ্ছে।” পরিস্থিতি ক্রমেই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে শেষ মূহূর্তে অবশ্য একটি গাড়ির বনেটে উঠে জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে দেখা যায় তাঁকে। অধীর বলেন, “ঝুঁকি নিয়ে গাড়ির বনেটে উঠে আমি তো কর্মীদের শান্ত হতে বলছিলাম।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও বলেন, “জেলাশাসকের বাংলোর সামনে আমিও ছিলাম। কোনও কংগ্রেস কর্মী সেখানে ভাঙচুর করেনি। আমরা স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলাম মাত্র।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.