কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নতুন অ্যাকাডেমিক ভবনে সে দিন হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান চলছে। ২৮ জানুয়ারি, সোমবারের দুপুর। প্রেক্ষাগৃহে একাধিক মন্ত্রী, স্বাস্থ্যকর্তারা উপস্থিত। রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও মূল্যে আপস চলবে না বলে জোর গলায় বলছেন তাঁরা। ঠিক সেই মুহূর্তে ওই ভবনের উল্টো দিকে কিছুটা দূরে হাসপাতালের সুপারের অফিসের সামনে জড়ো হওয়া একটা ভিড় অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ঝিমিয়ে পড়ছে। ৮০-৮৫ জন মা, কোলে সন্তান। বাচ্চাদের গড় বয়স এক সপ্তাহ থেকে এক বছর।
সরকারি নিয়মে মহিলাদের সন্তান হলে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগেই বাধ্যতামূলক ভাবে জননী সুরক্ষা যোজনার টাকা হাতে পেয়ে যাওয়ার কথা। সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে সন্তানের জন্ম দেওয়ায় মায়েদের উৎসাহ দিতেই এই ব্যবস্থা। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে শিশুর জন্ম হওয়া সত্ত্বেও বিপিএল তালিকাভুক্ত ওই মায়েরা টাকা পাননি। দিনের পর দিন বাচ্চা কোলে নিয়েই হাসপাতালে ধর্না দিচ্ছেন, হাসপাতাল ফিরিয়ে দিচ্ছে, আবার আসছেন। নারকেলডাঙার নিলোফার বেগম, সাকিনা বেগম, পিঙ্কি খাতুন, মৌরিগ্রামের টুম্পা লস্কর, আমহার্স্ট্র স্ট্রিটের পুতুল দাম, রাজাবাজারের মহরুম পরভিন, সোনম দাস, তরন্নুম বেগমের মতো অসংখ্য মহিলা তাঁদের প্রাপ্য জননী সুরক্ষা যোজনার টাকার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে চলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। |
শুধু কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ নয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, কলকাতার সব ক’টি মেডিক্যাল কলেজেই এক চিত্র। জননী সুরক্ষা যোজনার টাকা দেওয়ার যে নতুন নিয়ম স্বাস্থ্য দফতর তৈরি করেছে, তার বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে শহরের মেডিক্যাল কলেজগুলি। কী সেই নিয়ম?
২০১১-র অগস্টে ঘোষিত ওই নিয়মে বলা হয়েছিল, জননী সুরক্ষা যোজনার টাকা পেতে হয়রানি ও দেরি এড়াতে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মায়েদের এ বার থেকে ‘বেড সাইড’-এ অর্থাৎ হাসপাতালের শয্যার পাশেই টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। ডিসচার্জ হওয়ার পরে আর টাকা দেওয়া যাবে না। কিন্তু বেঁকে বসেছে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলি। স্বাস্থ্য দফতরকে তারা জানিয়েছে, কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলিতে রোগীর চাপ সর্বোচ্চ। এত রোগী সামলে, এত প্রসব করানোর পরে সদ্যপ্রসূতিদের ডিসচার্জের আগে হাতে-হাতে টাকা দিয়ে দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়, এটা অবাস্তব পরিকল্পনা।
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসের কথায়, “মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ডাক্তার, নার্স, অন্য কর্মীও বেশি। গ্রামীণ হাসপাতাল বা জেলা হাসপাতালগুলি নামমাত্র কর্মী নিয়ে সময়মতো টাকা দিতে পারছে, অথচ কলকাতার মেডিক্যাল কলেজগুলি আপত্তি করছে।” তাঁর আরও বক্তব্য, “আসলে দরকার ভাল পরিকল্পনা ও সদিচ্ছা, যেটা ওরা দেখাতে পারছে না।”
যা শুনে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর বা নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেছেন, “আমাদের একেবারেই লোকবল নেই। তার উপরে কোনও মা শনি বা রবিবার ভর্তি হয়ে সন্তানের জন্ম দিলে তিনি যদি সুস্থ থাকেন, তা হলে সোমবারই ছুটি দেওয়া হয়। কারণ, ডেলিভারির এত চাপে বেশি দিন শয্যা আটকে রাখা যায় না। সেই মা টাকা পাবেন কী ভাবে? কারণ, শনি-রবি অ্যাকাউন্টস বিভাগ বন্ধ থাকে।” কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবার যুক্তি, “অধিকাংশ প্রসূতি বা তাঁদের বাড়ির লোক ভর্তির সময়ে প্রয়োজনীয় সব কাগজ আনতে পারেন না। বিশেষত, যাঁদের দূরে বাড়ি, তাঁদের পরিজনদের পক্ষে মায়ের ডিসচার্জের আগে আবার বাড়ি গিয়ে কাগজপত্র নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। কাগজপত্র ছাড়া বেড সাইডে টাকা দেওয়া যায় না।”
যা শুনে অসিতবাবু বলেন, “শনি-রবিবারের সমস্যা অ্যাকাউন্টস বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে কেন মেটানো হচ্ছে না? আর কাগজপত্রের সমস্যাটা হাসপাতালের অজুহাত। আমরা পইপই করে বলেছি, মা শুধু সন্তানের জন্মের আগেকার শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্ট দেখালে বা জননী সুরক্ষার কার্ডটা দেখালেই তাঁকে টাকা দিতে হবে। সেটা মেডিক্যাল কলেজগুলো মানছে না।”
সে দিন কিন্তু মেডিক্যাল কলেজের ভাঁড়ারে টাকা ছিল। তা হলে কেন মায়েদের টাকা না দিয়ে ফেরত পাঠানো হল? কর্তৃপক্ষের জবাব, “অনেক বেশি মা জড়ো হয়েছিলেন। টাকা দেওয়া শুরু হলে একটা ঝামেলা বাধতে পারত।” তাঁরা প্রত্যেকের ডিসচার্জ সার্টিফিকেট জমা নিয়েছেন। টেলিফোন নম্বর বা ঠিকানাও নিয়ে রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, এক-এক করে ফোনে ডেকে বা চিঠি দিয়ে ডেকে মায়েদের টাকা দেওয়া হবে। যা শুনে টুম্পা-তরন্নুমরা বলেছেন, “এমনিতেই পাঁচ বার ঘুরে যেতে হচ্ছে। সেখানে হাসপাতাল আমাদের ডেকে টাকা দেবে! তা হলেই হয়েছে! ওই টাকা যে আর কোনও দিন পাওয়া যাবে না, সেটা বুঝতে পেরেছি।”
|
তাণ্ডব হাসপাতালে
সংবাদসংস্থা • বনগাঁ |
চিকিৎসায় গাফিলতিতে এক প্রৌঢ়ের মৃত্যুর অভিযোগে বনগাঁ হাসপাতালে শুক্রবার রাতে ভাঙচুর চলল। মৃত ইবাদত মণ্ডল (৫০) বনগাঁর প্রফুল্লনগরের বাসিন্দা। |