দু’টো অদ্ভুত ছবি দেখা গেল শনিবার ডেভিস কাপে। প্রথমটা ডাবলস ম্যাচ আরম্ভের ঘণ্টাদুয়েক আগে। আর পরেরটা, কোরিয়ান জুটি লিম-নামের বিরুদ্ধে ম্যাচটা ৬-৪, ৭-৬ (৭-৫), ৬-২ জিতে লিয়েন্ডার পেজ আর পূরব রাজা ভারতকে এই টাইয়ে শেষ দিন পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখার কয়েক মিনিটের মধ্যেই।
দুপুর দু’টোয় লিয়েন্ডারদের মরণবাঁচনের ডাবলস। অথচ বারোটার সময় সম্পূর্ণ ফাঁকা সেন্টার কোর্টে লিয়েন্ডার পড়েছেন রঞ্জিতকে নিয়ে সিঙ্গলস প্র্যাক্টিসে! টেনিসে সিঙ্গলস আর ডাবলস দুটো সম্পূর্ণ দু’ধরনের ফর্ম্যাট। পুরো কোর্টে আর অর্ধেক কোর্টে খেলার রসায়ন সম্পূর্ণ আলাদা। তো একজন প্লেয়ার একটা ফর্ম্যাটের ম্যাচ খেলতে নামার মাত্র দু’ঘণ্টা আগে কী ভাবে অন্য একটা ফর্ম্যাটে প্র্যাক্টিস করে? যতই তাঁর বিশ্ব পর্যায়ে ডাবলস খেতাব জেতার হাফসেঞ্চুরি থাকুক না কেন। এ যেন সচিন তেন্ডুলকর টি-টোয়েন্টিতে নামার দু’ঘণ্টা আগে টেস্টের নেটে ব্যাট করছেন! আসলে বিশ্বের পাঁচ নম্বর ডাবলস প্লেয়ার লিয়েন্ডার এই ম্যাচে যতই ১৫৫ নম্বরকে নিয়ে খেলুন, তিনি তেইশ বছর ডেভিস কাপ খেলার অভিজ্ঞতায় এক রকম নিশ্চিত ছিলেন বিশ্বের ৪৪৩ আর ৪১০ নম্বর ডাবলস প্লেয়ারদের জুটিকে হারাতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে রবিবার প্রথম রিভার্স সিঙ্গলসে দেশকে আইসিইউ থেকে বের করে জেনারেল বেডে পৌঁছে দেওয়ার (১-২ থেকে ২-২ করা) মহাদায়িত্ব যাঁর ওপর বর্তাবে সেই রঞ্জিতকে ঠিক মতো সাজগোজ করানোই বেশি দরকার ছিল। |
যে জন্য দ্বিতীয় সেটের দ্বাদশ গেমের আগে পর্যন্ত (ওই গেমে বিপক্ষের সার্ভিস ভেঙে সেট বাঁচিয়ে শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ২-০ সেটে এগিয়ে যান ভারতীয়রা) লিয়েন্ডারের খেলায় কিছুটা জড়তা থাকলেও (ততক্ষণে নিজের দু’টো সার্ভিস গেম খোয়ানো, গোটা পাঁচেক ডাবল ফল্ট করা ছাড়াও বেশ কিছু আনফোসর্ড এরর করেছেন), তার পর থেকে শেষ আধ ঘণ্টা তিনি নিজের ছন্দে খেলতেই টাইব্রেকার আর তৃতীয় সেটে উড়ে যায় কোরিয়া। আর তার পরেই টিম ইন্ডিয়া-র উল্লাসের অদ্ভুত ছবি!
সত্তর বছর বয়সি ক্যাপ্টেনের কোলে লাফিয়ে উঠে পড়লেন চিরযুবক লিয়েন্ডার। পরক্ষণেই রিজার্ভ প্লেয়ার শুদ্ধু গোটা দলের গোল হয়ে দাঁড়িয়ে ক্রিকেট টিমের ঢঙে হার্ডল করা। কোর্ট প্রদক্ষিণ করতে করতে লিয়েন্ডারের একের পর এক দামি টেনিস বল গ্যালারিতে পাঠানো। ‘ভারত মাতার’ সন্তানদের কাড়ানাকাড়া বাজানোর ঘটা তো গতকালের মতো ছিলই। আজ তার সঙ্গে যোগ হল পাঁচ হাজার দর্শক-গ্যালারিতে ‘উইকএন্ডের’ দুপুরে লিয়েন্ডারকে দেখতে আসা হাজার তিনেক মানুষের মধ্য থেকে অভাবিত রকেট ছোড়া। যেন কেবল একটা রাবার নয়, ভারত টাই-ই জিতে ফেলেছে। ম্যাচ দেখতে আসা শত্রুঘ্ন সিংহ ততক্ষণে ভাগ্যিস চলে গিয়েছিলেন! |
(আন্তর্জাতিক টেনিস সংস্থার শতবর্ষ উপলক্ষে ‘আইটিএফ ডেভিস কাপ কমিটমেন্ট’ পুরস্কার আজ এই বলিউড তারকাই তুলে দেন জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, লিয়েন্ডার পেজের হাতে।) নইলে ডাবলস জয়োৎসবের বহর দেখে শত্রুঘ্ন হয়তো তাঁর পর্দার সেই বিখ্যাত ডায়লগই বলে বসতেন খামোশ!
লিয়েন্ডার বলছিলেন, “একটা রকেট তো আমার গায়েই লাগছিল। আমার স্পিড ভাল বলে চট করে সরে গিয়েছি। তবে আগের মতো স্পিড নেই এখন।” যাঁর পক্ষে কোর্টের স্পিড কম থাকায় নিজের ‘এ গেম’ খেলা সম্ভব হয়নি। ‘বি গেম’ খেলেছেন। স্বভাবসিদ্ধ অ্যাটাকিং টেনিস খেলার বদলে জমাট বেসিক টেনিস। জয়োৎসব পালনটা একটু বাড়াবাড়ি পর্যায়ের হয়ে গিয়েছে যে, সেটা অবশ্য মানছেন ভারতীয় টেনিসের বহু যুদ্ধের জয়ী ঘোড়া। তবে ডাবলস পার্টনার পুরব আর টিমের ক্যাপ্টেন এসপি মিশ্রর থেকে একবিন্দুও কৃতিত্ব কেড়ে নিতে নারাজ লিয়েন্ডার। “পুরব আর আমি গত দু’বছর ধরে ডাবলস ট্রেনিং করি যে, সেটা অনেকেই জানে না। আমি মুম্বই গেলেই ও বেশ কয়েক মাইল জার্নি করে খার-এ আমার বাড়ি আসে। জিমখানা কোর্টে আমরা ডাবলস খেলি। আর এসপি স্যর তো আমার বাবার মতো। আমাদের অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেনই দলকে সব সময় ঠান্ডা রাখেন। এসপি স্যরের নেতৃত্বে আমার ডেভিস কাপ খেলতে দারুণ ভাল লাগে।” লি-র কথাগুলো হেশের বিদ্রোহী জোটের কানে পৌঁছল কি? |