কৃষ্ণনগর-১ ব্লকের ভালুকার বিলকে নির্ভর করে রয়েছেন প্রায় দু’হাজার মত্স্যজীবী এবং তার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে তিন হাজার পরিবার। এই বিলের একদা ভাগীরথী অর্থাত্ গঙ্গার সঙ্গে যোগ ছিল। ‘পাগলার বাঁধ’ বসানোয় সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাই জল চলাচলও বিলুপ্ত। ফলে যে বিলের পরিধি ছিল এগারোশো বিঘা, তা এখন ন’শো বিঘায় এসে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য দু’শো বিঘা জমি চাষিদের দখলে। বছর কুড়ি আগে মন্ত্রী কিরণময় নন্দর সহযোগিতায় পুকুর খনন করা হয়েছিল। তাতে ছোট মাছ তৈরির প্রকল্প শুরু হয়। কিন্তু সেই প্রকল্প ২০০০ সালের ভয়ংকর বন্যায় ভেসে যায়। এখন অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হওয়ার কারণ হল, ভালুকার বিল গঙ্গা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ‘রানি মাছ’ আসার জলপথ সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ। জলপথের যোগাযোগ থাকলে স্রোতে ডিম ভেসে আসার সম্ভাবনাও ছিল। তাও বন্ধ হয়ে যায়। তা ছাড়া পাগলার বাঁধের সুইচ গেট বহু বছর ধরে খারাপ। সেটি মেরামতের জন্যও ভালুকা গ্রাম পঞ্চায়েত শ্রম দান করেন না। দু’হাজার মত্স্যজীবীর আবেদনে ‘ভালুকা ইউনিয়ন মত্স্যজীবী সমবায় সমিতি’ পঞ্চায়েতকে দিয়ে কিছু পানা সংস্কার করায়। যদিও তার কিছু দিনের মধ্যেই পানা আর পাতিবনের শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে।
এই অবস্থায় মাছের চাষ কিছুতেই সম্ভব নয়। তাই জেলে পরিবারগুলি এখন শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। সরকারি সাহায্য প্রার্থনা করেও কোনও কাজ হয়নি। তা ছাড়া, ভালুকা বিলের যে সর্বোচ্চ গভীরতা ছিল ১৮-১৯ ফুটইদানীং তা কমতে কমতে ৩ ফুট গভীরতায় এসে পৌঁছেছে। উপরন্তু বর্তমানে বিলের আশেপাশে শুকিয়ে যাওয়া জমির প্রতি গ্রামের প্রভাবশালী ভূ-সম্পত্তির মালিকদের হামলা লেগেই আছে। ফলে বিলের জমি যত শুকোচ্ছে, ততই তারা সেগুলিকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি বলে দাবি করছে। এমনকী, গরিব মত্স্যজীবীদের জন্য সরকারি অনুদান হিসেবে যে গৃহগুলি দেওয়ার কথা, স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সেগুলির উপযুক্ত বিলিবণ্টন করছে না। এতে প্রকৃত প্রাপকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। অবশ্যই রাজনীতির দৌরাত্ম্য বেড়েছে। ধনী শ্রেণির কিছু মানুষ ভালুকা বিলের কাছে পুকুর খনন করে রেখেছেন এবং বর্ষার সময়ে বিনা মূলধনেই বিল থেকে ভেসে আসা মাছ বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করছেন।
প্রাচীন কাল থেকেই ভালুকা বিলের বাবা বুড়ো শিবকে নিয়ে গাজনের রেওয়াজ আছে। সেই খরচ মত্স্য সমিতি বহন করত। এখন সেই খরচ বহন করার মতো পরিস্থিতি নেই। এর বিশেষ কারণ হল, জেলেরা যেটুকু মাছ ধরেন তার অর্ধেকেরও কম পান। বাকিটা চলে যায় রাজনৈতিক ক্যাডারদের হাতে। একটা সময় ছিল গ্রামের অভাবী মহিলারা সমবায় সমিতির অফিসে বসে কাজ করতেন। তাঁদের উন্নতিকল্পে অনেক অনুদান আসত। এখন তাও বিলুপ্ত হয়েছে। দীর্ঘ ৩৫ বছরের মধ্যে ভালুকা বিলের কোনও সংস্কার হয়নি। সমিতির অফিসের রাস্তাও করুণ অবস্থায় পড়ে আছে। ড্রেনের অবস্থা আরও জঘন্য এবং ধ্বংসের মুখে। মত্স্যজীবীরা বেঁচে থাকার তাগিদে বাধ্য হয়েই পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে ভারতের অন্য রাজ্যে কাজের সন্ধানে ছুটছেন। সরকার থেকে পাওয়া তফসিলি শংসাপত্র থাকলেও দুর্মূল্যের বাজারে তাঁরা ছেলেমেয়েদের সুস্থ ভাবে পড়াশোনা শেখানোর কথা কল্পনা করেন না। সে সব এখন ভ্রান্ত স্বপ্ন ছাড়া অন্য কিছু নয়। এরই মধ্য থেকে গোবরে পদ্মফুল ফোটার মতো দু’একটি ছেলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় ছুটছে বটে, তবে সেখানেও আছে পলিটিক্যাল লিডারদের হাতছানি!
রাজকুমার ব্যাধ, ভালুকা
|
নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলা দিয়ে প্রবাহিত জলঙ্গি নদী আজ মজে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। কোথাও হাঁটুজল, কোথাও সেটুকুও নেই। তাই ওই নদীর পুতিগন্ধময় জলে মাছের আকাল। ক’ বছর ধরে আবার ওই নদীর বুকে চলছে ধান চাষ। অথচ ৫০ বছর আগে ওই নদীটি জলপথ পরিবহণের অন্যতম অবলন্বন ছিল। পণ্য বোঝাই বড় বড় পালতোলা নৌকা, আটি বাঁধা বাঁশের লম্বা মাড় ওই নদীর বুকে ভেসে নবদ্বীপ হয়ে কলকাতায় পাড়ি জমাতো। মাঝে মধ্যে ওই নদীর বুকে মোটর লঞ্চের দেখাও মিলতো। সেই জলঙ্গি বর্তমানে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হওয়ায় সে সব আজ ইতিহাস। সাসংদ ও বিধায়কদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় শুনছি, কলকাতায় নদীর পাড় বাঁধিয়ে সবুজায়ন করা হচ্ছে। সাধু পদক্ষেপ। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প থেকে গ্রামেগঞ্জে খালবিল-পুকুর-জলাশয় সংস্কারেরও নাকি কাজ চলছে। সাধু পদক্ষেপ। এ রকম কোনও প্রকল্প থেকে কি জলঙ্গী নদী সংস্কার করা যায় না?
ভক্তিভূষণ বৈরাগ্য, পলাশিপাড়া
|
মুর্শিদাবাদের অন্যতম ব্যস্ত ফেরিঘাটের নাম লোহাদহ। ওই ফেরিঘাটের মাধ্যমে দু’টি মহকুমা বহরমপুর ও কান্দি, দু’টি বিধানসভা ভরতপুর ও রেজিনগর ও দু’টি থানা এলাকা সালার ও শক্তিপুরের মধ্যে সংযোগ তৈরি হয়। জেলার প্রত্যন্ত দু’টি বিস্তীর্ণ এলাকার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে সব থেকে কম দূরত্ব অতিক্রমের মাধ্যম হল ওই ফেরিঘাট। ঘাটের পশ্চিমপ্রান্তের অন্তত কুড়িটি গ্রামের মানুষকে ওই ফেরিঘাটের উপর নির্ভর করতে হয়। ঘাটের পশ্চিমপ্রান্তের লোহাদহ-ভরতপুর রাস্তাটি বেশ কয়েক বছর আগে পাকা সড়কে পরিণত হয়েছে। পূর্বপ্রান্তের রাস্তাটি ঘাট থেকে দেড় কিলোমিটার যাওয়ার পর রামনগরঘাট-বহরমপুর রাজ্য সড়কে মিশেছে। দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় মোরাম বিছানো ওই দেড় কিলোমিটার রাস্তা বর্তমানে চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। রাস্তা জুুড়ে অসংখ্য ছোটবড় গর্ত তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে দু’চাকা ও চার চাকার অসংখ্য গাড়ি যাতায়াত করে। ফলে ওই ভয়াবহ দেড় কিলোমিটার রাস্তা এড়াতে যাত্রীদের প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুরপথ দিয়ে সালার বা কর্ণসুবর্ণ হয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। লোহাদহ ঘাটের উপর নির্ভরশীল পশ্চিমপ্রান্তের ২০টি গ্রামের অসুস্থ ও প্রসূতিদের অবস্থা সব চেয়ে করুণ। ওই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
প্রদীপনারায়ণ রায়, শক্তিপুর |