এক দশকেরও বেশি সময় বল নিয়ে মাঠে নামেননি। শুক্রবার সকালে যখন বল নিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের মাঠে নামলেন তখন অন্য ভূমিকায়। ফুটবলার থেকে কোচ। বন্দনা পাল থেকে বনি পাল। এ দিন কোচিং ক্যাম্পের জন্য খেলোয়াড় বাছাই পর্ব শুরু হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৮০ জন কোচিং ক্যাম্পে আসে। ১৫ জনকে বাছা হয়েছে। মঙ্গলবারের মধ্যে আরও ১৫ জনকে বাছা হবে। তার পর থেকেই অনুশীলন হবে। বহুদিন পরে মাঠে নেমে আপ্লুত বনি বলেন, “দারুণ লাগছে। যেন পুরনো জগৎ ফিরে পেয়েছি। এ বার অবশ্য আমার ভূমিকাটা অন্য। আমি যেটা করতে পারিনি, তা যাতে ওঁরা করতে পারে সে জন্য লড়াই করে যাব।”
১৯৯৬ সালে বাংলার মহিলা ফুটবল দল সন্তোষ ট্রফি জিতেছিল তাঁরই সোনার গোলে। তখন তিনি বন্দনা। ১৯৯৯ সালের এশিয়াডে খেলার কথা ছিল। দলের সঙ্গে রওনাও হয়েছিলেন। পরে তিনি মেয়ে না পুরুষ তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ফিরে যেতে হয়। তার পর অনেক জল গড়িয়েছে। |
কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে অনুশীলন করাচ্ছেন বনি পাল। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
২০০০ সালে কলকাতার দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোবরডাঙার বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছেন। তার পর অজ্ঞাতবাস। কৃষ্ণনগর-সহ নানা জায়গায় ঘুরে ডেরা বাঁধেন শিলিগুড়ির মাটিগাড়ায়। সেটাও অজানাই ছিল। গত বছর ফের প্রকাশ্যে আসেন। তত দিনে লিঙ্গ পরিবর্তন বলে বন্দনা হয়েছেন বনি পাল। বিয়ে করেছেন কৃষ্ণনগরের মেয়ে স্বাতীকে। জীবন চালাতে বেছে নিয়েছেন মূর্তি তৈরির কাজ। গত পুজোয় শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার মায়াদেবী ক্লাবের মূতিও গড়েছেন।
শিলিগুড়িতে তার থাকার বিষয়টি জানাজানি হতেই বনির প্রতিভাকে কাজে লাগাতে উদ্যেগী হন শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপরতন ঘোষ। ক্লাবের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন। আইএফএ’র সহায়তার মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে যে ফুটবল কোচিং শিবির চলে সেখানে কোচ করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় পুজোর আগেই। পুজোর পরে সেই দায়িত্ব দেওয়ার কথা ঠিকও হয়েছিল। তবে সব কিছু চূড়ান্ত করতে আরও কিছুটা সময় পেরিয়ে যায়। কবে থেকে সেই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে তা শুধু সময়ের অপেক্ষায় ছিল। আজ, শুক্রবার সকালেই সেই প্রতীক্ষার পালা পেশ হল বনির। বলে পা দিতেই মুখে হাসি ফুটল। কচিকাঁচাদের নিয়ে মাতলেন তিনি। |