তিন উপনির্বাচনে এ বার প্রয়াস সংখ্যালঘু জোটের
বিধানসভার তিন কেন্দ্রের আসন্ন উপনির্বাচনকে ঘিরে নতুন এক সমীকরণের প্রস্তুতি চলছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে।
উপনির্বাচনে মুসলিম ভোট এক জায়গায় আনতে একজোট হওয়ার চেষ্টায় নেমেছে মূলত সংখ্যালঘু-প্রধান তিনটি দল। ওই তিন কেন্দ্রেই প্রার্থী দেওয়ার কথা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে বিজেপি। যার ফলে সংখ্যালঘু-প্রধান দলগুলির জোট বাঁধার প্রয়াস সফল হলে মেরুকরণের এক অন্য রকম ছবি দেখা যেতে পারে বিধানসভার এই উপনির্বাচনে। যা এই রাজ্যের বড় রাজনৈতিক দলগুলির কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেই রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের অভিমত।
সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের (ইউডিএফ) সঙ্গে সমঝোতার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া (এসডিপিআই) এবং ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া (ডব্লিউপিআই)। তাদের এই প্রয়াসের নেপথ্যে জঙ্গিপুরে সাম্প্রতিক লোকসভা উপনির্বাচনের ফলাফল। জঙ্গিপুরে আলাদা সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়ে এসডিপিআই এবং ডব্লিউপিআই প্রায় ১৭ হাজার ভোট পেয়েছিল। এ বার তাদের লক্ষ্য, কেন্দ্র পিছু এক জন প্রার্থী দিয়ে সংখ্যালঘু ভোটের ভাগাভাগি আটকে দেওয়া। আর সংখ্যালঘু জোটের সেই প্রার্থীদের পিছনে থাকবে সিদ্দিকুল্লারই জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পরোক্ষ সমর্থন। প্রসঙ্গত, তিন কেন্দ্রের মধ্যে নলহাটি ও রেজিনগরের সংখ্যালঘু ভোটের দিকে সব দলেরই নজর রয়েছে।
কোমরের ভাঙা হাড়ের অস্ত্রোপচার সেরে মুম্বই থেকে মঙ্গলবার রাতেই কলকাতায় ফিরেছেন সিদ্দিকুল্লা। তাঁর অনুপস্থিতিতে এসডিপিআই, ডব্লিউপিআই এবং আরও একটি সংখ্যালঘু সংগঠনের সঙ্গে দৌত্য চালিয়েছেন ইউডিএফের সহ-সভাপতি জামিরুল হাসান। তার পরে সিদ্দিকুল্লার বাড়িতে বুধবার রাতেই বসেছিল ইউডিএফের কর্মসমিতির বৈঠক। সিদ্দিকুল্লার কথায়, “সংখ্যালঘুদের দাবি-দাওয়া নিয়ে যারা লড়াই করি, তারা এক জায়গায় এসে একটা বার্তা দিতে চাইছি।” এখনও পর্যন্ত যা ঠিক হয়েছে, দু’টি কেন্দ্রে ইউডিএফের প্রার্থীকে বাকিরা সমর্থন করবে। প্রয়োজনে একটি কেন্দ্র ইউডিএফ ছেড়ে দিতে পারে অন্য দলকে।
জঙ্গিপুরের এসডিপিআই প্রার্থী এবং ডব্লিউপিআইয়ের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি রইসুদ্দিন এর মধ্যে জামিরুলদের সঙ্গে একপ্রস্ত আলোচনা সেরেছেন বলে খবর। জামিরুলের বক্তব্য, “আমাদের সঙ্গে তিনটি মুসলিম দলের কথা হয়েছে। এসডিপিআই আমাদের যুক্তিতে রাজি আছে। ডব্লিউপিআই-এর সর্বভারতীয় নেতৃত্বকে বলেছি, আপনারা পঞ্চায়েতে লড়াই করুন। সেখানে অনেক আসন। কিন্তু বিধানসভায় প্রার্থী দিয়ে ভোট ভাগ হতে দেবেন না। তেমন হলে রেজিনগর আসনটা আমরা ছেড়ে দিতে পারি।” সমঝোতার চেষ্টা অস্বীকার না-করেও এসডিপিআইয়ের এ রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত নেতা উমর খান বিশেষ কিছু বলতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, “কিছু একটা হচ্ছে। এর বেশি কিছু এখনই বলতে পারছি না। কয়েক দিন পরে স্পষ্ট করে বলতে পারব।” রইসুদ্দিনও বলেন, “আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাজকর্ম এবং সংখ্যালঘু-নীতিকে আক্রমণ করেই সমঝোতার রাস্তায় যেতে চাইছে এই দলগুলি। জামিরুলের কথায়, “একে তো রেজিনগর ও ইংরেজবাজারের উপনির্বাচন সম্পূর্ণ তৃণমূলের চাপিয়ে দেওয়া। ক্লাবকে টাকা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী গুন্ডা-বাহিনী তৈরি করতে চাইছেন! আবার ইমাম-মোয়াজ্জেনদের ভাতা দিয়ে তৃণমূলের হয়ে প্রচার করতে বলছেন! এ ভাবে কত দিন চলবে?”
সিদ্দিকুল্লাদের এই উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গের ভবিতব্য বলেই মনে করছে সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিমের মতে, “বামফ্রন্ট পরাজিত হওয়ার পর থেকেই দক্ষিণপন্থী শক্তি মাথাচাড়া দিয়েছে। এটা তারই একটা ফল। শাসক দলের মদতে ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতিও এই রাজ্যে চলে এসেছে। আমরা বারেবারেই সেই কথা বলছি।” তবে জোট বাঁধলেই সব সংখ্যালঘু ভোট এক জায়গায় চলে আসবে, এমন সহজ সমীকরণ বাস্তবে ঘটবেই বলে সিপিএম মনে করছে না। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের যুক্তি, “সব দলই সংখ্যালঘু ভোটের দিকে তাকিয়ে থাকে। অন্য দলের সংখ্যালঘু ভোট কমলে বিজেপি-র লাভ।” বস্তুত, এর ফলে সংখ্যাগুরু ভোট (হিন্দু ব্যাকল্যাশ) তাদের বাক্সে জমা হওয়ার আশাই করছে বিজেপি। আর তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার মত, “নানা রকম চেষ্টা নানা মহল থেকে হবে। কিন্তু সংখ্যালঘুদের পূর্ণ আস্থা এখনও যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিই, উপনির্বাচনে ফের প্রমাণ হবে!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.