নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
শেষ পর্যন্ত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকদের মুখে লাগাম দেওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে।
রাজনৈতিক সৌজন্য, ভাষা ব্যবহারে সংযমের সীমা লঙ্ঘন তৃণমূলের যে নেতা-মন্ত্রীরা ইদানিং করেছেন, তাতে রাশ টানার একটা চেষ্টা শুক্রবার দেখা গিয়েছে। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে এ দিন সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায়। সেই সভায় সব রাজনৈতিক দলকেই ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে শালীনতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মুকুলবাবু বলেন, “এটা বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নয়। সব রাজনৈতিক দলকেই নজর রাখতে হবে যাতে কোনও রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি সম্বন্ধে কিছু বলার সময়ে তা যেন শালীনতার সীমা লঙ্ঘন না করে।”
তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, মুকুলবাবুর এই অভিমতের সঙ্গে একমত রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়বাবুও। ২৪ ঘণ্টা আগে যিনি প্রধান বিরোধী দল সিপিএমকে সামাজিক বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন, যিনি কংগ্রেস নেতাদেরও ছেড়ে কথা বলেননি, সেই জ্যোতিপ্রিয়বাবু এ দিন বলেন, “মুকুলদা যা বলেছেন তার সঙ্গে আমি পাঁচশো শতাংশ একমত। সঠিক কথাই উনি বলেছেন।” কিন্তু তিনি কেন সিপিএমকে গোখরো সাপ, কেউটে সাপের মতো বলেছিলেন? কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছিলেন? জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কেন আমাদের দলকে লুম্পেনের দল বলেছিলেন? কেন কংগ্রেসের দুই নেতা আমাদের নেত্রী সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য লাগাতার করছিলেন? আমি তার প্রতিবাদ করেছি মাত্র। তবে আমি মনে করি সকলেরই সংযত হওয়া উচিত।”
জ্যোতিপ্রিয়র এই ‘বোধোদয়’ নিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের কারও কারও মতে, আসলে কংগ্রেসের অনেকের সঙ্গেই খাদ্যমন্ত্রীর সুসম্পর্ক রয়েছে। সিপিএমের পাশাপাশি কংগ্রেস নেতৃত্বকেও এক বন্ধনীর মধ্যে রেখে বিষোদ্গার করলে ‘ব্যক্তিগত সম্পর্কে’ও তার কুপ্রভাব পড়ার আশঙ্কায় আপাতত মুখ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। মালদহের কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরীকে কটাক্ষ করায় তিনি খাদ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলার হুমকি দিয়েছেন। খাদ্যমন্ত্রীর এক ঘনিষ্ঠ নেতার কথায়, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে কোনও অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি হোক, আমরা কেউই তা চাই না।”
অবশ্য জ্যোতিপ্রিয়বাবুই শুধু নন, একাধিক তৃণমূল নেতাদের মুখে অশালীন বক্তব্য নিয়ে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা করছেন দলীয় নেতৃত্বের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, “যে ভাবে অশালীন মন্তব্য করা হচ্ছিল, আদতে তা মানুষের একটা বড় অংশের কাছে দলের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করবে বলেই আশঙ্কা হচ্ছে।” বিশেষত, শহরের উচ্চবিত্ত, শিক্ষিত মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্তদের অনেকেই বিষয়টি যে ভাল ভাবে নিচ্ছেন না, তা তৃণমূল নেতাদের অনেকেই টের পাচ্ছেন। বস্তুত রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের অনেকটাই সহিষ্ণু ও সংযত হয়ে চলা উচিত বলে নেতাদের অনেকেই মনে করেন। তাঁদের অনেকেই বলেছেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন সিপিএম নেতাদের একাংশ যে ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করতেন, তা মানুষ যেমন ভাল ভাবে নেয়নি, তেমন প্রতিক্রিয়া বর্তমান শাসক দলের ক্ষেত্রেও হতে পারে।
এমনকী এ দিনও কৃষ্ণনগরের দলীয় সভায় মুকুলবাবু বলেছেন, “সিপিএম নিয়ম করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্কে কটূক্তি করে চলেছে। এই আক্রমণ অবশ্য সিপিএমের ক্ষেত্রে নতুন কিছু নয়। বিনয় কোঙার, অনিল বসু, গৌতম দেব, আনিসুর রহমান সকলেই রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে চলেছেন।” সিপিএম করছে বলে তৃণমূলকেও সেই পথে চলতে হবে কেন, তা নিয়ে দলেই কোন কোনও মহলে প্রশ্ন উঠেছে। মুকুলবাবুকে প্রশ্ন করায় তিনি অবশ্য বলেন,“শালীনতার সীমা লঙ্ঘন না করাই আমাদের দলের নীতি। সেই নীতি বজায় রাখার কথা আমি সকলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছি।”
শেষ পর্যন্ত বোধোদয়ের ইঙ্গিতে কংগ্রেস নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, “আমরা তো বরাবর বলছি, রাজনীতিতে খিস্তি-খেউড় নয়, গুণ, যোগ্যতা, দক্ষতার প্রতিযোগিতা হোক। কারণ, বাংলায় রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবক্ষয় নিয়ে সর্বভারতীয় স্তরেও কথাবার্তা হচ্ছে। যদি শাসক দলের নেতাদের শুভবুদ্ধির উদয় হয় তো ভাল!”
|
বালুর বিরুদ্ধে ডালু
নিজস্ব সংবাদদাতা • মালদহ |
তাঁর সম্পর্কে ‘মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করায় রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের (বালু) বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকার মানহানির মামলা করার হুমকি দিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু)। শুক্রবার মালদহ জেলা কংগ্রেস দফতরে তিনি বলেন, “আইনজীবীর সঙ্গে কথা হয়েছে। ৫ কোটি টাকার মানহানির মামলা করব। নির্বাচন কমিশনের কাছেও অভিযোগ জানাব।” তাঁর কথায়, খাদ্যমন্ত্রী প্রকাশ্য সভায় যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, তা সংবিধান বিরোধী। তিনি রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী এবং নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন। তিনি বলেন, “সাবিত্রী মিত্র ও কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী সাংসদ তহবিলের টাকা চুরি করেছে। মালদহ বিমানবন্দর করতে বাধা দিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বলব।” কৃষ্ণেন্দুবাবুর প্রতিক্রিয়া, “ডালুবাবু তো সিপিএমের তোলা অভিযোগগুলিই বলছেন। তবে ডালুবাবু যে ভাষায় কথা বলছেন, আমি সেই ভাষা মুখ থেকে বার করতে পারব না। মানুষ সব বিচার করবেন।” আর সাবিত্রীদেবীর বক্তব্য, “ডালুবাবুর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। মানুষের টাকা কে মেরেছে মালদহের মানুষ তা ভাল করেই জানেন।” |