আজারেঙ্কার ‘সেমিফাইনাল প্রতারণা’র পরে এমনিতেই বিশ্ব টেনিসের এক নম্বর মেয়ে খানিকটা দর্শক আনুকূল্য হারিয়েছেন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তার ওপর ফাইনালের আগের দিন আজারেঙ্কার প্রতিদ্বন্দ্বী আরও বেশি নিজের দিকে দর্শক সমর্থন টেনে নেওয়ার জোগাড় করলেন, “ম্যাচ পয়েন্টের খেলা চলছে এমন অবস্থায় আমার শরীর হাজার খারাপ লাগলেও কিন্তু ইনজুরি টাইম আউট নেব না,” বলে। ‘‘দেখুন, এক-একজন মানুষ, এক-এক রকম। আমার ক্ষেত্রে বলতে পারি, ওর (আজারেঙ্কা) মতো অবস্থায় পড়লেও আমি শুশ্রূষার জন্য কোর্টে ডাক্তার ডাকব না। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর যা হওয়ার হয় দেখব।”
চিনের লি-র ‘এক-একজন মানুষ এক-এক রকম’ কথাটা তাঁর নিজের ক্ষেত্রে সত্যিই একশো ভাগ সত্যি। চিনের উহানের মেয়ে তাঁর দেশের টেনিসের ইতিহাসে প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন। বস্তুত, এশিয়া মহাদেশের মধ্যেই প্রথম। চিনের সোশ্যাল মিডিয়ায় লি-র ১০ লাখ ভক্তের রেজিস্ট্রেশন আছে। পরিবারের একমাত্র সন্তান লি তাঁর মাত্র চোদ্দো বছর বয়সে বাবাকে হারান। অথচ এই মুহূর্তে বিখ্যাত মার্কিন ম্যাগাজিনের বিচারে বিশ্বের সমস্ত খেলাধুলো মিলিয়ে দ্বিতীয় ধনীতম মেয়ে প্লেয়ার। আর এক টেনিস সুপারস্টার মারিয়া শারাপোভার ঠিক পিছনেই। অথচ এখনও ভুলতে পারেন না যে, তাঁর প্রিয়তম ব্যাডমিন্টন খেলা প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছাড়িয়ে তাঁকে জোর করে টেনিসে আনা হয়েছিল। চিনের কমিউনিস্ট সরকারের ক্রীড়া পর্ষদের নির্দেশে। যদিও সেই টেনিস থেকেই তাঁর নিজেরই স্বপ্নের অতীত সাফল্য পেয়েছেন তিনি। কিন্তু এই আগাগোড়া সরণিতে লি না-র সঙ্গে তাঁর দেশের ক্রীড়া সংস্থা এবং মিডিয়ার কচকচানি লেগেই ছিল। যে জন্য চিনের খেলাধুলোর ইতিহাসে অন্যতম সেরা তারকা হয়েও লি না-র বসবাস মন্টে কার্লোতে। অথচ লি না-র ২০১১ ফরাসি ওপেন খেতাব জয়ের ম্যাচ চিনে ২০ কোটি মানুষ টিভিতে টাটকা দেখেছিলেন। সে বছরই অস্ট্রেলীয় ওপেন রানার আপ তিনি।
আজারেঙ্কার সঙ্গে মোট সাক্ষাতে লি না ৪-৫ ম্যাচে পিছিয়ে থাকলেও গ্র্যান্ড স্ল্যামে দু’বারের সাক্ষাতে দু’বারই তিনি বেলারুশের দীর্ঘকায় প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়েছেন। এবং সেই দুটো জয় ওই ২০১১-এ মেলবোর্ন পার্ক আর রোলাঁ গারোতেই। অথচ একটা সময় গ্র্যান্ড স্ল্যামের মূলপর্বে উঠতে বারবার হোঁচট খাওয়ার প্রবল হতাশায় লি না দু’বছর টেনিস খেলাই ছেড়ে দিয়ে সাংবাদিকতার কোর্স করেছিলেন। চিনের রীতিকে অগ্রাহ্য করে কাঁধে লাল গোলাপ ট্যাটু করেছেন। বাধ্যতামূলক ভাবে দেশের টেনিস সংস্থার কোচ না রেখে স্বামীকে ট্যুর কোচ রেখেছিলেন অনেক বছর।
শনিবার লি না তাঁর দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার ব্যাপারে আরও আশাবাদী। কারণ জিয়াং শানের পাশপাশি তাঁর নতুন কোচ কার্লোস রদ্রিগুয়েজ। প্রাক্তন বিশ্বসেরা জাস্তিন এনা-র সাতটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় কার্লোসের ট্রেনিংয়েই। “আগের বার আমি বেশি উত্তেজিত ছিলাম। বেশি নার্ভাসও ছিলাম। এ বার আমি ঠান্ডা। আত্মবিশ্বাসী। আর এর পিছনে কার্লোস,” বলে লি না যোগ করেছেন, “যদি চ্যাম্পিয়ন হই ট্রফি নিয়ে ইয়ারা নদীতে প্রথামাফিক ফটোশু্যট দিয়েই নিরুদ্দেশ হয়ে যাব কয়েক দিনের জন্য। কেউ আমাকে খুঁজে পাবে না। কারণ আমার সত্যিই কয়েকটা দিন পরিবার আর বন্ধুদের গভীর সঙ্গ দরকার। স্বামী তো ট্যুরে আমার জল বয়ে আর কোর্টে হিটিং পার্টনার। সঙ্গটা পাই কোথায়?”
|