লস্কর-ই-তইবা জঙ্গি ডেভিড কোলম্যান হেডলির শাস্তিতে খুশি নয় ভারত। আজ সে কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। খুরশিদের বক্তব্য, ভারতে বিচার হলে অনেক কঠিন শাস্তি হত হেডলির। তার প্রত্যর্পণের দাবি থেকেও সরতে রাজি নয় নয়াদিল্লি।
২০০৮ সালের মুম্বই হামলা-সহ ১২টি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হেডলিকে ৩৫ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন মার্কিন বিচারক হ্যারি ডি লেনেনওয়েবার। কিন্তু হেডলির পক্ষে এই শাস্তি যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিচারক নিজেই। শাস্তি কমাতে সব কৌশলই নিয়েছিল হেডলি। বিচারককে লেখা একটি চিঠিতে ওই জঙ্গি জানায়, সে বদলে গিয়েছে। কিন্তু বিচারক সাফ জানান, হেডলি বদলেছে বলে তাঁর বিশ্বাস হয় না। বরং হেডলির মতো ব্যক্তির
হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করাই
তাঁর কর্তব্য।
২০০৮ সালের মুম্বই হামলায় জড়িত হেডলিকে ভারতে আনার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছে নয়াদিল্লি। কিন্তু আইনের ফাঁসে আটকে গিয়েছে সেই চেষ্টা। গ্রেফতার হওয়ার পরে নিজের দোষ স্বীকার করে নেয় হেডলি। সেই সঙ্গে মার্কিন আইনের আওতায় সে দেশের সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয় তার। চুক্তি অনুযায়ী, মার্কিন ও বিদেশি গোয়েন্দাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবে সে। পরিবর্তে তার মৃত্যুদণ্ডের জন্য আদালতে আর্জি জানাবে না মার্কিন সরকার। ভারত-সহ অন্য কোনও দেশে তাকে প্রত্যর্পণও করা হবে না।
ভারতের হতাশার কথা জানানোর পাশাপাশি খুরশিদ জানিয়েছেন, মার্কিন বিচার বিভাগের উপরে তাঁর আস্থা আছে। হেডলির শাস্তির এই ঘোষণা সবে প্রথম ধাপ। হেডলিকে ভারতে আনতে নয়াদিল্লি চেষ্টা চালিয়ে যাবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। একই বক্তব্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহেরও। অনেক মতবিরোধ থাকলেও আজ হেডলির মৃত্যুদণ্ড চেয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস ও বিজেপি-দু’দলই।
কিন্তু আদৌ কি হেডলিকে ভারতে আনার কোনও সম্ভাবনা আছে? এই বিষয়ে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছেন মার্কিন সরকারি কৌঁসুলি গ্যারি এস শ্যাপিরো। তাঁর বক্তব্য, হেডলি যদি চুক্তি মেনে গোয়েন্দাদের সঙ্গে সহযোগিতা না করে সে ক্ষেত্রে মার্কিন সরকারের চুক্তি মানার
কোনও দায় থাকবে না। তখন প্রত্যর্পণের বিষয়টি ফের বিবেচনা করা হতে পারে।
মুম্বই হামলার মামলায় মার্কিন আদালতে মোট আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে শাস্তি হয়েছে হেডলি ও তার সহযোগী তাহাউর হুসেন রানার। বাকি ছ’জনকেও আমেরিকা ছেড়ে কথা বলবে না বলে জানিয়েছেন শ্যাপিরো। ওই ছ’জনের মধ্যে রয়েছে ইলিয়াস কাশ্মীরি, আবদুর রহমান হাশিম সৈয়দ ওরফে পাশা, সাজিদ মির, আবু কাহাফা, মজহর ইকবাল ও মেজর ইকবাল। শ্যাপিরোর বক্তব্য, এক সময়ে ভাবা হত কলম্বিয়া ও মেক্সিকোর মাদক কারবারিদের কখনওই আমেরিকায় আনা যাবে না। কিন্তু ওই সব দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরে তাদের অনেককেই এ দেশে এনে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। তেমনই মুম্বই হামলায় বাকি অভিযুক্তদের সন্ধানও চলবে। |