সপ্তাহ দুয়েক আগেই আসানসোলের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অস্ত্র পাচার বন্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন পুলিশকে। সেই বর্ধমান জেলাতেই এ বার সিপিএমের এক জোনাল সদস্যের বাড়ি থেকে উদ্ধার হল স্টেনগান।
কী ভাবে এই আধুনিক অস্ত্র বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকায় পৌঁছল, পুলিশের কাছে তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। সিপিএমের দাবি, তল্লাশির নামে তাদের রায়না জোনাল কমিটির সদস্য কৌসর আলির বাড়িতে ঢুকে পুলিশই অস্ত্র রেখেছে। বিধানসভা ভোটে রায়নার বহু বুথেই এজেন্ট দিতে পারেনি সিপিএম। সদ্য হয়ে যাওয়া স্কুল নির্বাচনেও এলাকার ৪৫টি স্কুলের মধ্যে ৪৪টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদারের দাবি, “কৌসরের বাড়িতে যে অস্ত্র পাওয়া গিয়েছে, তা পুলিশই নিয়ে গিয়েছিল। পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের দুর্বল করতেই এমন চক্রান্ত।” পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের প্রতিক্রিয়া, “সন্ত্রাস করে ভোটে জেতা আমাদের সংস্কৃতি নয়। সেটা সিপিএমই ভাল জানে। পুলিশ আইন অনুযায়ী কাজ করেছে।” |
রায়নায় উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। |
ধৃত কৌসর আলি। |
|
বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে রায়নার ওই সিপিএম নেতার বাড়িতে তল্লাশিতে গেলে ঘণ্টা তিনেক তিনি দরজা খোলেননি। শেষে ভোরের দিকে দরজা খোলার পরে তাঁর বাড়ি থেকে স্টেনগান ছাড়াও একটি নাইন এমএম পিস্তল, মোট ৩৭ রাউন্ড গুলি ও দু’টি বড় কার্তুজ উদ্ধার হয়। কৌসর ও শেখ আলাউদ্দিন নামে তাঁর এক সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সুপার বলেন, “মাধবডিহির দু’জন তৃণমূল কর্মী খুনে অভিযুক্ত কৌসর আলি। বেআইনি অস্ত্র রাখা ছাড়াও রায়নায় অশান্তি পাকানোর অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।”
হিন্দি খবরের কাগজে মোড়া ওই অস্ত্রগুলি দেখে পুলিশের অনুমান, সেগুলি এসেছে বিহারের মুঙ্গের থেকে। পুলিশ সুপার বলেন, “ধৃত দু’জনকে সাত দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তাঁদের জেরা করে অস্ত্রগুলি কোথা থেকে এসেছে, জানার চেষ্টা হবে।” মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে এলাকার সমস্ত বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশ দেওয়ার পরে অন্ডাল থেকে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়। জেলা পুলিশের এক কর্তা এ দিন স্বীকার করেন, রায়নায় স্টেনগান মেলার ঘটনায় পরিষ্কার, বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকাতেও অস্ত্র পাচার চক্র বেশ সক্রিয়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে যা যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয় বলে ওই পুলিশকর্তার মত।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রায়না, মাধবডিহি ও খণ্ডঘোষ এলাকায় সিপিএম নেতা কৌসর আলির এক সময়ে যথেষ্ট প্রভাব ছিল। গত লোকসভা ভোটের আগে রায়নার আর এক সিপিএম নেতা বামদেব মণ্ডল তৃণমূলে যোগ দেন। তার পর থেকে ওই দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায়ই অশান্ত হত রায়না। গত বিধানসভা ভোটের আগে থেকে এলাকায় সিপিএমের আধিপত্য কমে। তবে জেলা পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলায় কৌসর ফের জমি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
|