নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মুখ্যমন্ত্রীর অগ্রাধিকার মাটি উৎসব। তাই মুম্বইয়ের শিল্প সম্মেলন কয়েক দিন পিছিয়ে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। আপাতত ঠিক আছে, ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে মুম্বই গিয়ে শিল্পপতিদের সঙ্গে কথা বলবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনিক সূত্রে এই কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, মুম্বইয়ের শিল্প সম্মেলনের দিনক্ষণ স্থির হবে আগামী সপ্তাহের গোড়ায়।
শুধু মুম্বই-ই নয়, লগ্নি টানতে এ বার দেশের অন্য বড় রাজ্যের রাজধানীতেও যাবে পশ্চিমবঙ্গ উন্নয়ন নিগম। পথেও নামবে। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “আমরা এর পর কর্নাটকেও যাব। অন্য রাজ্যেও পশ্চিমবঙ্গকে তুলে ধরতে রোড-শো হবে।” কিন্তু কেন পিছিয়ে গেল মুম্বইয়ের শিল্প সম্মেলন?
শিল্পমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, চূড়ান্ত দিনক্ষণ কখনই ঘোষণা করা হয়নি। বলা হয়েছিল, ১৩ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন হতে পারে। হলদিয়ায় ‘বেঙ্গল লিডসেও’ মুখ্যমন্ত্রী নির্দিষ্ট করে দিনক্ষণ জানাননি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন ১৩ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন হবে না। তবে খুব শীঘ্র নতুন দিন ঘোষণা করা হবে।
শিল্প দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পানাগড়ে মাটি উৎসব শুরু হচ্ছে ৯ ফেব্রুয়ারি। চলবে সাত দিন। মুম্বইয়ের শিল্প সম্মেলনের প্রস্তাবিত দিনটিও এর মধ্যেই পড়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী চান না, মাটি উৎসবের মধ্যে অন্য কোনও সরকারি অনুষ্ঠান হোক। সে কারণেই মুম্বই সম্মেলন দিন কয়েক পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে শিল্প দফতর। শিল্প দফতরের এক কর্তার ব্যাখ্যা, হলদিয়ায় সদ্য সমাপ্ত ‘বেঙ্গল লিডসের’ ক্ষেত্রেও প্রথমে দিনক্ষণ ঠিক করে পরে তা এগিয়ে আনা হয়। অর্থাৎ, শিল্প সম্মেলনের দিনবদল কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।
এই শিল্পপতি সম্মেলনের যাবতীয় প্রস্তুতির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের হাতে। নিমন্ত্রিতদের তালিকা তৈরি থেকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো, যাবতীয় পরিকল্পনা ও রূপায়ণেই মুখ্যমন্ত্রীর দফতর এবং মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রই শেষ কথা বলছেন। এ কথা জানিয়ে শিল্প দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, তাই শিল্প সম্মেলন পিছিয়ে যাওয়ার পিছনে আর কোনও কারণ আছে কি না, তার জবাব ওঁরাই দিতে পারবেন। মুখ্যসচিবকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি কিছুই জানি না।” বণিকমহলের একাংশ অবশ্য বলছে, ‘বেঙ্গল লিডস’ এবং তার আগে দিল্লিতে শিল্প সম্মেলনে তেমন সাড়া না পেয়েই পিছু হটতে হল সরকারকে। কেন সাড়া পাওয়া গেল না? বণিকমহল তো বটেই, প্রশাসনিক মহলের একাংশেরও বক্তব্য, সুস্পষ্ট ভাবে শিল্পের ‘জমি’ তৈরি করতে না পারার ফলেই সে ভাবে সাড়া মিলছে না। কী ভাবে তৈরি হয় শিল্পের জমি? তাঁদের বক্তব্য, প্রথমত, সুস্পষ্ট জমি-নীতি তৈরি করতে হবে। তার পরে চাই শিল্প-নীতি, যেখানে শিল্পের জন্য উৎসাহভাতা থেকে শুরু করে শিল্পায়নে প্রয়োজনীয় যাবতীয় সুযোগসুবিধার কথা স্পষ্ট ভাষায় বলা থাকবে। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা এই নিয়ে শিল্প সংস্থাগুলির কাছে পৌঁছলে তার পরে মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগত ভাবে আহ্বান জানাবেন। এই মহলগুলির বক্তব্য, এই প্রতিটি বিষয় নিয়েই ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। জমি অধিগ্রহণে যেমন সরকার হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানিয়েছে, তেমনই এ রাজ্যের জমি ব্যাঙ্কের চেহারাও স্পষ্ট নয়। প্রশানিক মহলের একাংশই বলছে, এই জমি ব্যাঙ্ক থেকে এক লপ্তে বড় জমি পাওয়া যাবে না। তা ছাড়া, রাজ্য জানিয়ে দিয়েছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার অনুমতি তারা দেবে না।
জমির ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া নিয়েও প্রকল্প ধরে ধরে খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে। তাতে জমি পেতে অনেক বেশি সময় লেগে যাবে বলেই শিল্পমহলের বক্তব্য। প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, এ সব কারণেই ঘন ঘন শিল্পপতিদের ডেকে লগ্নি করতে আহ্বান জানালেই বা তাঁরা আসবেন কেন?
দিল্লি বা হলদিয়ায় তাই কোনও বড় শিল্পপতিকে দেখা যায়নি। বিরোধীরা বলছেন, মুম্বইয়ের শিল্প সম্মেলন পিছিয়ে দিয়ে রাজ্য ভালই করেছে। কেন? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর কথায়, শিল্প সম্মেলন করলে সম্মানহানিই
শুধু হত।
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এই সব অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “সরকারে জমি-নীতির কোনও পরিবর্তন হবে না। অনিচ্ছুক চাষিদের জমি সরকার জোর করে অধিগ্রহণ করবে না। শিল্প স্থাপন করতে হলে যদি অতিরিক্ত জমি লাগে, তা হলে মুখ্যমন্ত্রী ঊর্ধ্বসীমার অতিরিক্ত জমির ব্যবস্থা করে দেবেন। জমির জন্য শিল্প হচ্ছে না বলে যে প্রচার চলছে, সরকার তা মিথ্যা প্রমাণ করে দেবে।”
পার্থবাবু জানিয়েছেন, শীঘ্রই নয়া শিল্প-নীতি ঘোষণা করে হবে। তাতে জমির প্রশ্ন থেকে লগ্নিতে উৎসাহভাতা দেওয়ার প্রসঙ্গ সব কিছুর জবাব দেওয়া থাকবে। শিল্প-নীতি ঘোষণার সঙ্গে মুম্বই শিল্প সম্মেলনের কোনও যোগসূত্র নেই বলেও জানান শিল্পমন্ত্রী। তাঁর মতে, ঠিক সময়েই সরকার এই সম্মেলনের আয়োজন করবে। |