পাল্টা কুৎসা নয়,
সংযত কথার নির্দেশ সিপিএমের
তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা যতই ব্যক্তি কুৎসা ও ঘৃণার রাজনীতি করুন, দলের সর্বস্তরের নেতাদের ভাষা ব্যবহারে সংযত থাকতে হবে বলে নির্দেশ জারি করল সিপিএম। দলের আরও নির্দেশ ব্যক্তি কুৎসা না করে বক্তৃতায় রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থার কথা তুলে ধরতে হবে। কেবল সভা সমাবেশের ক্ষেত্রেই নয়, টিভি-বিতর্ক ও আলোচনায় যে সব নেতারা অংশ নেন, তাঁদেরও ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংযত থাকতে হবে।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রতিদিন জেলায় জেলার সিপিএমের প্রচার সভা হচ্ছে। সেখানে কোনও নেতা যাতে অসতর্ক কথা না বলেন, তাই এই নির্দেশ। বামেরা ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রবীণ সিপিএম নেতা বিনয় কোঙার এবং হুগলির অনিল বসুর মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। পরে দু’জনেই প্রকাশ্যে দুঃখপ্রকাশ করলেও তাঁদের মন্তব্যে রাজনৈতিক ভাবে সিপিএমের ক্ষতি হয়েছিল। দুই নেতার কটূ কথার প্রভাব পড়েছিল জনমানসে। সম্প্রতি বামফ্রন্টের মুখ্য সচেতক আনিসুর রহমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে কটূ মন্তব্য করেন। তার জন্য দল থেকে তাঁকে প্রকাশ্যে ভৎসর্না করা হয়। আলিমুদ্দিনে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে অনিসুর নিজেও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন।
তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের মুখে ঘৃণার রাজনীতি ও সিপিএম নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তি কুৎসা কিন্তু অব্যাহত। আলিমুদ্দিন মনে করছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে কর্মীদের চাঙ্গা করতেই সুকৌশলে সিপিএম নেতাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা জাগিয়ে তুলতে চাইছে তৃণমূল। সিপিএমের এক রাজ্য নেতার কথায়, “ওরা ভাবছে, আমাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মনে ঘৃণা জাগিয়ে তুলতে পারলে আমাদের জনবিচ্ছিন্ন করে রাখা যাবে। তাই এ সব বলছে।” সিপিএমকে এ ভাবে জনবিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে তৃণমূলের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক প্রমুখ যে ভাষায় কথা বলছেন, সমাজের নানা স্তরে তার সমালোচনা শুরু হয়েছে।
তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের কথার প্রতিবাদ করতে গিয়ে সিপিএম নেতারাও ভাষা ব্যবহারে সৌজন্য ও শালীনতা হারিয়ে ফেলতে পারেন বলে আশঙ্কা দলের একাংশের। সে কারণেই দলের পক্ষ থেকে নির্দেশ জারি করে বলা হয়েছে, বিরোধীদের বিরুদ্ধে ভাষা ব্যবহারে সৌজন্য ও শালীনতা বজায় রাখতে হবে। কোনও কুরুচিকর মন্তব্য করা যাবে না। লোকাল কমিটি থেকে রাজ্য স্তরের নেতাদের এই নির্দেশ মানতে হবে।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহম্মদ সেলিম, উত্তরবঙ্গের অন্যতম নেতা অশোক ভট্টাচার্য, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা দক্ষিণ ২৪ পরগনাক জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী, বর্ধমানের জেলা সম্পাদক অমল হালদার প্রত্যেকেই মনে করেন, তৃণমূলের নেতারা সিপিএমকে রাজনৈতিক আক্রমণ করতে পারছে না বলেই ব্যক্তি কুৎসা ও ঘৃণার রাজনীতি শুরু করেছেন। কিন্তু সিপিএম কোনও ভাবেই পাল্টা কুৎসা ও ঘৃণার ভাষাকে প্রশ্রয় দেবে না। সেলিমের কথায়, “বক্তৃতার সময়ে দলের সবাইকে এ কথা মাথায় রাখতে হবে।”
দলের নেতারা অতীতে বহু ক্ষেত্রেই ভাষা ব্যবহারে সংযত ছিলেন না, সে কথা মেনে নিয়েই সিপিএমের নেতারা বলছেন, এখন সর্বত্র টিভি মাধ্যম পৌঁছে যাচ্ছে। পাড়ায় সভাতেও ছোট ক্যামেরায় ছবি তুলে তা বড় চ্যানেলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভাষা ব্যবহারে সংযত থাকাটাই ‘আর্ট’। দলের সব নেতাকে তা শিখতে হবে।
অশোকবাবু জানিয়েছেন, আনিসুরের মন্তব্যের আগেই ভাষা ব্যবহারে সংযত থাকা নিয়ে দলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আনিসুরের বেফাঁস মন্তব্যের পরে এ ব্যাপারে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে পুনরায় সতর্ক করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক ভাবে এত কথা বলার আছে, বক্তৃতায় অন্য কথা বলতে হবে কেন?” বর্ধমানের নেতা অমলবাবু (বিনয় কোঙার এই জেলার নেতা) জানিয়েছেন, “নিচুতলার সভাতেও ভাষা ব্যবহারে শালীন ও সংযত থাকা এবং ব্যক্তি আক্রমণ না করে রাজনৈতিক আক্রমণের জন্য সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” একই সুরে সুজনবাবু জানিয়েছেন, “তৃণমূলের নেতারা আমাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কুৎসা করলেও মাথা ঠান্ডা রেখে রাজনীতির কথা, মানুষের দাবির কথা তুলে ধরাই দলের নীতি।”
লাতিন আমেরিকা, আফগানিস্তান, আফ্রিকা-সহ নানা দেশে স্বৈরতান্ত্রিক ও মৌলবাদী শক্তিগুলি ঘৃণা সৃষ্টির রাজনীতিকে ব্যবহার করে বলে সেলিমের দাবি। তিনি বলেন, “রাজনীতি ও অর্থনীতির দিক থেকে তৃণমূল দেউলিয়া বলেই ঘৃণা সৃষ্টিকে তারা হাতিয়ার করছে।” আর অশোকবাবুর মতে, “তৃণমূল মানুষের একাংশের সমর্থন হারিয়েছে। কোনও রাজনৈতিক দিশাও দিতে পারছে না। তাই ভয় দেখিয়ে গরিব মানুষকে সিপিএম থেকে বিচ্ছিন্ন করতেই ঘৃণা ও কুৎসার রাজনীতি করছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.