মারের মার: ফাইনালের ভবিষ্যদ্বাণী: পঞ্চাশ-পঞ্চাশ
ফেডেরারের সঙ্গে
ভয়কেও হারাল মারে
ফেডেরার যে আর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারবে না, আমার এই ধারণা শুক্রবারের পর আরও দৃঢ় হল।
আগের ফেডেরার হলে গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনাল ম্যাচে দু’বার সমতা ফেরানোর পর মীমাংসাসূচক পঞ্চম সেটে প্রতিদ্বন্দ্বীকে দাঁড় করিয়ে হারিয়ে ড্যাং-ড্যাং করে ফাইনালে চলে যেত। দশ বারে ন’বার এমনটা হত। কিন্তু এ দিন মেলবোর্ন পার্কে ঠিক তার উল্টোটা ঘটল। চূড়ান্ত সেটে ফেডেরার নিজেই উড়ে গেল। কারণ, এই ফেডেরারের বয়স ৩১ প্লাস। যতই ফিটনেস থাক, ভাল খেলুক, অতিমানব তো নয়! পঁচিশ বছরের প্রতিপক্ষের সঙ্গে কী করে চার ঘণ্টার লড়াইয়ে শেষ সেটে পৌঁছে এঁটে উঠবে?
তা-ও সেই তরতাজা যুবকের নাম যদি অ্যান্ডি মারে হয়! মারে এখন ওর জীবনের সেরা ফর্মে। ফোরহ্যান্ড-ব্যাকহ্যান্ড দুটোতেই দুর্ধর্ষ স্ট্রোক নিচ্ছে। বলে-বলে উইনার মারছে। ফিটনেসেরও তুঙ্গে। ইভান লেন্ডলকে কোচ করে আনার পরে টেকনিক্যাল-ফিজিক্যালের পাশাপাশি মানসিক ভাবেও বিরাট শক্তিশালী হয়েছে। আমার মতে তিনটের মধ্যে তৃতীয় কারণটাই অস্ট্রেলীয় ওপেনের উত্তেজক সেমিফাইনালে মারের ৬-৪, ৬-৭ (৫-৭), ৬-৪, ৬-৭ (২-৭), ৬-২ ফেডেরারকে হারানোর অন্যতম বড় ফ্যাক্টর।
গ্র্যান্ড স্ল্যামে প্রথম বার ফেডেরারকে হারিয়ে মারের উচ্ছ্বাস। ছবি: এপি
১৭টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব আর ঝুড়ি-ঝুড়ি গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনাল খেলার পাহাড়-সমান বিরাট অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ফেডেরার এই ভয়ঙ্কর মারের বিরুদ্ধেও সেট ১-১, ২-২ করেছিল। দ্বিতীয় আর চতুর্থ, দুটো সেটেই টাইব্রেকারে অনবদ্য দেখিয়েছে ওকে। মনে রাখবেন তৃতীয় সেট পর্যন্ত ফেডেরার এক বারও মারের সার্ভিস ব্রেক করতে পারেনি আজ। চতুর্থ সেটে দু’-দু’বার মারের সার্ভিস ভাঙলেও মারে পাল্টা সার্ভিস ভেঙে একটা সময় ৬-৫-এ নিজে সার্ভিস শুরু করেছিল ম্যাচ পকেটে পোরার জন্য।
ও রকম অনন্ত চাপেও ফেডেরার এই বয়সেও মারেকে ওই গেমে ভেঙে সেটটা টাইব্রেকারে নিয়ে গিয়ে মহাপ্রতিদ্বন্দ্বীকেও প্রায় দাঁড় করিয়ে টাইব্রেকারটা জিতে নেয় ৭-২-এ। অবিশ্বাস্য টেনিস খেলেছে ওই সময় ফেডেরার। তবু বলব, ফেডেরারের পক্ষে এখন অবিশ্বাস্য টেনিস খেলা মাঝে-মধ্যেই সম্ভব। ধারাবাহিকতা দেখানো অসম্ভব। কারণ ফেডেরারও মানুষ। এই বয়সে বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই সামান্য হলেও কোর্টে ওর গতি কমেছে। দমে ঘাটতি পড়ছে। ফিটনেস খারাপ হয়েছে। স্ট্রোকের তীক্ষ্মতা কমেছে। সে জন্যই পঞ্চম সেটে আর পারেনি। মারে হেলায় ৬-২ শেষ সেট জিতল। ফেডেরারকে এক বার কোর্টে মারের দিকে তাকিয়ে বিকট চিৎকার করতেও দেখলাম টিভিতে। মরণপণ লড়েও ম্যাচ জিততে না পারার তীব্র হতাশার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কী!
এ দিনের আগে দু’জনের মোট সাক্ষাতে মারে ১০-৯ এগিয়ে থাকলেও গ্র্যান্ড স্ল্যামে ০-৩ পিছিয়ে ছিল। তিন বারই ফাইনালে হেরেছিল। আজই প্রথম বার ফেডেরারের বিরুদ্ধে গ্র্যান্ড স্ল্যামে জয় পেল এবং সেটা সেমিফাইনালে। রাউন্ডটাই আরও বুঝিয়ে দিচ্ছে, ফেডেরারের গ্রাফ কেমন নীচের দিকে নামছে। আর মারের গ্রাফ চড়চড় করে ওপরে উঠছে। মারের এই জয়ের আরও তাৎপর্য হল, গত লন্ডন অলিম্পিক ফাইনালে উইম্বলডনের ঘাসের কোর্টে (যেটাকে ফেডেরারের দ্বিতীয় ঘরই বলা উচিত) ফেডেরারকে হারানোর পর থেকেই মানসিক ভাবে ওর সাহস অনেক বেড়ে গিয়েছে। তার পর দু’জনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম লড়াইয়েই এ দিন জিতল। মারের গত যুক্তরাষ্ট্র ওপেন চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাও ওই বর্ধিত মানসিক শক্তির জোরেই মূলত। যা ৭৪ বছর পর কোনও ব্রিটিশের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব।
রবিবার রড লেভার এরিনায় নিউইয়র্কের ফাইনালেরই পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে। সেই মারে বনাম জকোভিচ। আমার মতে এই মুহূর্তে পুরুষদের টেনিসে এটাই সর্বোচ্চ রাইভ্যালরি। সেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আর অস্ট্রেলীয় ওপেনে দু’জনই অনবদ্য খেলছে। সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেখানে মারে না জকোভিচ, কার পারফরম্যান্স বেশি ভাল চুলচেরা বিচারও করা যাচ্ছে না, সেখানে ফাইনালের ফেভারিট বাছার মতো বোকা আমি নই।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.