দলেরই কথা, বলছে কংগ্রেস
সংস্কার-পথে সতর্ক থাকতে বললেন প্রণব
কেন্দ্রে মনমোহন সিংহের সরকার যখন দ্রুত আর্থিক সংস্কারের পথে হাঁটছে, তখন প্রজাতন্ত্র দিবসের বক্তৃতায় তাই নিয়ে কিছুটা হলেও সতর্কবাণী শোনা গেল রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের গলায়। তিনি বললেন, “আমরা যখন আর্থিক সংস্কারের পথে চলছি, তখন বাজার নির্ভর অর্থনীতি সম্পর্কে আমাদের চোখ-কান খোলা রাখতে হবে।”
মনমোহনের এক সময়কার অর্থমন্ত্রী প্রণববাবুর এ হেন কথায় স্বাভাবিক ভাবেই তৈরি হয়েছে গুঞ্জন। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারের নীতিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিলেন প্রণব?
প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে রাষ্ট্রপতি যে বক্তৃতা দেন, তাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অনুমোদনের কোনও প্রশ্ন নেই। বরং রাষ্ট্রপতি সংসদের যুগ্ম অধিবেশনে যে বক্তৃতা দেন, তাতে সরকারি সিলমোহর দেওয়ার প্রথা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আজ প্রণববাবু যে বক্তৃতা দিলেন, অনেকেই বলছেন, সেটা তাঁর নিজেরই কথা। এবং সে জন্যই সংস্কারের নীতির সঙ্গে তাঁর মতান্তরও ধরা পড়ল সেই বক্তৃতায়।

প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে রাষ্ট্রপতির ভাষণ। ছবি: পিটিআই
এই নিয়ে বিতর্ক আরও উস্কে দিয়ে এক দল বলছেন, মতান্তরটা খুব অস্বাভাবিকও নয়। কারণ, প্রণববাবু যত দিন অর্থমন্ত্রী ছিলেন, মনমোহন তাঁর দ্বিতীয় দফার সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেননি। রাজনীতির কারবারিদের অনেকের মতে, প্রণব মুখোপাধ্যায় ইন্দিরা জমানার রাজনীতিক। তাঁর আর্থিক নীতিতে তাই নেহরুর সমাজতান্ত্রিক চিন্তাভাবনার প্রভাব রয়েছে। তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব দেন পি চিদম্বরমকে, যিনি আবার মনমোহনের মতোই সংস্কারপন্থী। তাঁর মাধ্যমে প্রণবের আমলে নেওয়া অনেক সিদ্ধান্তই বদলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। যেমন জিএএআর বা গার-এর ক্ষেত্রে হয়েছে। কর ফাঁকি সামলাতে এই নিয়ম চালু করতে চেয়েছিলেন প্রণব। কিন্তু চিদম্বরম সম্প্রতি জানিয়েছেন, গার আপাতত স্থগিতই থাকছে। এ ছাড়া খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি, জ্বালানিতে ভর্তুকি ছাঁটাই, ডিজেলের মূল্য বিনিয়ন্ত্রণের মতো সংস্কারের সিদ্ধান্ত তো আছেই।
এ দিন প্রণব বলেছেন, “সামাজিক দায়বদ্ধতা বাদ রেখে বহু ধনী রাষ্ট্র সংস্কার করতে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে। আমাদের এই ফাঁদ এড়িয়ে চলা উচিত।” তাঁর এই কথা শুনে তাই অনেকে মনে করছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতভেদকেই উস্কে দিতে চেয়েছেন।
কংগ্রেস নেতৃত্ব কিন্তু এ কথা মনে করছেন না। তাঁরা বরং বলছেন, রাষ্ট্রপতি যা বলেছেন সেটা কংগ্রেসেরই মনের কথা। কী রকম? রাষ্ট্রপতি সামাজিক দায়বদ্ধতা মেনে চলার কথা বলেছেন। বলেছেন, গ্রাম, কৃষিক্ষেত্র, কারখানা, স্কুল, হাসপাতালে যাতে সরকারের নীতির প্রতিফলন ঘটে, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। কংগ্রেসের তরফে বলা হচ্ছে, এগুলি সবই দলীয় নেতৃত্বরও বক্তব্য। সাম্প্রতিক চিন্তন শিবিরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কংগ্রেস নেতারা বলছেন, সেখানে কিন্তু বারবারই বলা হয়েছে, সংস্কার শুরু হয়েছে। এ বার সামাজিক প্রকল্পে মন দেওয়া প্রয়োজন। তাঁরা আরও বলছেন, সংস্কারের সুফল তখনই সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছনো সম্ভব, যখন সামাজিক প্রকল্পগুলি সাফল্য পাবে। অর্থাৎ, গরিব এবং প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছনোটা যে
দরকার, সেটা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বারবারই উল্লেখ করেছেন। এটা সনিয়া গাঁধী তো বটেই, রাহুল গাঁধীরও কথা। নিজের সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে চিন্তন শিবিরের মঞ্চ থেকে কিছু পরিসংখ্যান দিয়েছিলেন মনমোহন। এ দিন রাষ্ট্রপতি বলেন, যাঁরা এখনও সুফল পাননি, তাঁদের কাছে পরিসংখ্যান অর্থহীন। তাই মানুষকে সুরাহা দিতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাঁর এই কথাতেও কংগ্রেসের সার্বিক উন্নয়নের বক্তব্যই রয়েছে বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা।
কংগ্রেস মুখপাত্র রশিদ আলভি বলেন, “মনমোহন সরকার যেমন সংস্কারের কথা বলছে, তেমনই সাধারণ মানুষের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য একের পর এক সামাজিক কর্মসূচিও গ্রহণ করছে। কংগ্রেসও সেই ভারসাম্য রক্ষা করে চলারই পক্ষে। তাকেই জয়পুর ঘোষণায় মধ্যপথ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।” তাই বিতর্ক উড়িয়ে তাঁর বক্তব্য, “রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার মধ্যে কেউ যদি তাঁর সঙ্গে সরকারের মতান্তর খোঁজে, তবে সেটা ঠিক হচ্ছে না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.