পার্ক স্ট্রিটের নথি-ত্রুটি
সুপ্রিম কোর্টে হেনস্থাকে গুরুত্বই দিচ্ছে না রাজ্য
পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডে অসম্পূর্ণ নথি পেশের জন্য সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনাকে বড় করে দেখতে রাজ্য সরকার নারাজ। খোদ রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যই বলেছেন, “এটা কোনও বড় ব্যাপার নয়।” এ কথা শুনে অনেকেই বলছেন, চন্দ্রিমা তাঁর নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছেন। রায়গঞ্জে অধ্যক্ষের মার খাওয়াকে তিনি ছোট ঘটনা বলেছিলেন। আর পার্ক স্ট্রিট তো প্রথমেই তাঁর কাছে ‘সাজানো ঘটনা’। আইনজীবী মহলের একাংশের অভিযোগ, রাজ্যের তরফে ইচ্ছাকৃত ভাবে সুপ্রিম কোর্টের ভর্ৎসনাকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা চলছে।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ-কাণ্ড সংক্রান্ত একটি মামলায় প্রয়োজনীয় নথি পেশ করার পরে ডিভিশন বেঞ্চের তোপের মুখে পড়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধি আইনজীবী। নথিতে ত্রুটি থাকায় বিচারপতিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন, এমনকী সেটি ‘পঞ্চাশ ফুট দূরে ছুড়ে ফেলার যোগ্য’ বলেও মন্তব্য করেন। আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য ভর্ৎসনা করে রাজ্যকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। রাজ্যের তরফে ভুল স্বীকার করে জরিমানা মকুবের আবেদন জানানো হলে বেঞ্চ তা মঞ্জুর করে বটে, তবে জরিমানার কথা কোর্টের কার্যবিবরণীতে রেখে দেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে এ ভাবে হেনস্থা হতে হলেও রাজ্য সরকার অবশ্য ঘটনাটিকে আপাতদৃষ্টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাইছে না। আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমাদেবীর দাবি, রাজ্য সরকারকে আদৌ ভর্ৎসনা করা হয়নি। “এটা বড় কোনও ব্যাপার নয়। টাইপের ভুলেই এমনটা হয়েছে।” শুক্রবার বলেন চন্দ্রিমাদেবী।
কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ মামলার যে নথি দেশের শীর্ষ আদালতে পেশ করা হচ্ছে, তাতে ত্রুটি কী করে থেকে গেল, আইনজীবীদের একাংশ সে প্রশ্ন তুলছেন। আইনজীবী ঊষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, এতে রাজ্য সরকারের আইনজীবীরা দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। কারণ, কোর্টে নথিপত্র ঠিকঠাক জমা দেওয়ার দায়িত্ব তাঁদেরই। আইনজীবী অসীমেশ গোস্বামীর বক্তব্য, “পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ড সম্পর্কে গোড়া থেকে সরকার যে বিরূপ মনোভাব পোষণ করেছে, এ তারই প্রতিফলন।” ওঁদের মতে, ভর্ৎসনার দায় এড়ানোর কোনও জায়গা রাজ্য সরকারের নেই।
বস্তুতই পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ড ঘিরে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন প্রথম থেকে সমালোচনার মুখে পড়েছে।
ঘটনার পরে পার্ক স্ট্রিট থানায় অভিযোগ জানানো হলেও পুলিশ তখন আমল দেয়নি। এমনকী অভিযোগকারিণীর সঙ্গে থানার দুই অফিসার দুর্ব্যবহার করেছিলেন, তদন্তে যাঁরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
পরে গণধর্ষণ-কাণ্ডের গোয়েন্দা-তদন্ত চলাকালীন বিষয়টিকে ‘সাজানো ঘটনা’ হিসেবে অভিহিত করে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সুরে লালবাজারে সাংবাদিক বৈঠক করেন পুলিশ কমিশনার রঞ্জিৎকুমার পচনন্দা।
তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পরে কলকাতার তদানীন্তন গোয়েন্দা-প্রধান দময়ন্তী সেনকে অন্যত্র বদলি করা হয়, যা নিয়ে ‘রাজনৈতিক চাপের’ অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি ধর্ষিতার চরিত্র-পেশা নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী-সাংসদদের ধারাবাহিক বিরূপ মন্তব্যেও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
আর এই তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন বৃহস্পতিবারের ঘটনা। সে দিন সুপ্রিম কোর্টে পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডে ধৃত দুই অভিযুক্ত নাসের খান ও সুমিত বজাজের জামিনের শুনানি ছিল। বিচারপতি জেএস সিঙ্ঘভি এবং বিচারপতি এইচএল গোখলের ডিভিশন বেঞ্চে অভিযোগকারিণীর গোপন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পেশ করা হয়। সেটির কিছু অংশে ত্রুটি থাকায় ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের অ্যাডভোকেট-অন রেকর্ড অভিজিৎ ভট্টাচার্যকে। শুনানিও স্থগিত হয়ে যায়। কী ত্রুটি ছিল?
সুপ্রিম কোর্টে সুমিত বজাজের আইনজীবী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি: জবানবন্দিতে একটি নামের জায়গায় ‘ইল্লেজিবল’ (অর্থাৎ, দুষ্পাঠ্য) লেখা ছিল। সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা: কপি করার সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্মী মূল নথির কোনও জায়গা বুঝতে না-পারলে সেখানে ‘ইল্লেজিবল’ শব্দটি লিখে রাখার প্রথা, এবং এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। কিন্তু সেই ত্রুটি থেকে যাওয়ার কার?
অভিজিৎ ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, “তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল হয়েছে। আমার সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। আদালতে ভুল স্বীকারও করেছি।” তবে রাজ্যের ওই কৌঁসুলির দাবি: বিচারপতিরা শুধু তাঁকেই ভর্ৎসনা করেছেন, রাজ্য সরকারকে নয়। আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে একই যুক্তির প্রতিধ্বনি।
কিন্তু আইনজীবীদের একাংশ একমত নন। ঊষানাথবাবু বলছেন, “অ্যাডভোকেট-অন রেকর্ড কোর্টে সরাসরি ভর্ৎসনার শিকার হলে দায় পরোক্ষে রাজ্য সরকারের উপরেও বর্তায়।” অসীমেশবাবুর কথায়, “অ্যাডভোকেট অন-রেকর্ড রাজ্যের প্রতিনিধি। তাঁর ভুল হলে সরকারেরও দায় থাকে।” তা ছাড়া এমন ভ্রান্তির জন্য রাজ্য কোনও ব্যবস্থা নিল না কেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন অসীমেশবাবু। আইনমন্ত্রী কী বলেন?
চন্দ্রিমাদেবীর ব্যাখ্যা, “এমন ভুল আদালতে হয়েই থাকে। বিচারপতিরা যা বলেছেন, তা আমাদের সংশোধন করে নিতে হবে।” শীর্ষ আদালতে রাজ্য সরকারের অন্যতম কৌঁসুলি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অ্যাডভোকেট-অন রেকর্ড অত্যন্ত দায়িত্ববান ব্যক্তি। পরের শুনানিতে তিনি ত্রুটি শুধরে হলফনামা দাখিল করবেন।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.