স্থানীয় বাজারের অভাবে ফাউন্ড্রি শিল্পে এক নম্বর জায়গা রাজ্য আগেই হারিয়েছে। এ বার কাঁচা মাল জোগানের দৌড়েও পিছিয়ে পড়ল পশ্চিমবঙ্গ। তিনটি বন্দরের উপস্থিতি কাজে লাগিয়ে সেই জায়গায় এগিয়ে গুজরাত।
এখন দেশে ৭০ হাজার কোটি টাকার ফাউন্ড্রি শিল্পের মাত্র ৭.৫% এ রাজ্যের দখলে। ইন্ডিয়ান ফাউন্ড্রি কংগ্রেসের চেয়ারম্যান রবি সেহগলের দাবি, বড় শিল্পের অভাবে মার খাচ্ছে স্থানীয় ফাউন্ড্রি শিল্প। তাঁর কথায়, “ট্র্যাক্টর তৈরি, মাটি কাটার যন্ত্র ও গাড়ি শিল্প এখানে নেই। ফলে স্থানীয় বাজারও নেই। দক্ষিণ ও উত্তর ভারতে ট্রাক্টর ও গাড়ি কারখানার হাত ধরেই এ শিল্পের রমরমা।”
এক দিকে, গাড়ি তৈরির সহযোগী শিল্প নেই। অন্য দিকে, কৃষিতেও ট্র্যাক্টর ও অন্য যন্ত্রের ব্যবহার ন্যূনতম। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তর ভারতে কৃষক পিছু গড়ে একটি ট্র্যাক্টর। এ রাজ্যে তা ০.১%।
আর বাজারের এই ঘাটতির সঙ্গে এ বার যুক্ত হয়েছে কাঁচা মালের সমস্যাও। সেহগল জানান, তিনটি বন্দরের দৌলতে ছাঁট লোহার জোগান নিয়ে সমস্যা নেই গুজরাতে। একটি বন্দর তো শুধু ‘শিপ ব্রেকিং’ বা বাতিল জাহাজ ভাঙার কাজের জন্যই চিহ্নিত। জোগান ভাল হওয়ায় দামও নির্দিষ্ট স্তরে বেঁধে রাখা গিয়েছে। যা না-হওয়ায় এ রাজ্যে কাঁচা মালের দাম বাড়ছে। রাজ্য মার খাচ্ছে প্রতিযোগিতায়।
অথচ ফাউন্ড্রি শিল্পে ষাটের দশক পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের নাম উজ্জ্বল ছিল। খোদ নিউ ইয়র্কের ম্যানহোল-ঢাকনাতেও খোদাই করা থাকত বাংলার কারখানার নাম। এখন তা স্রেফ ইতিহাস। সেহগলের দাবি, এই ছবিটা বদলাতে জরুরি সরকারি সদিচ্ছা। উৎপাদন খরচে রাশ টানতে কম দামে বিদ্যুৎ দিতে হবে। তা হলে কারখানা গড়তে এগিয়ে আসবেন লগ্নিকারীরা।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, কম জমিতে গড়া যায় ফাউন্ড্রি কারখানা। মাত্র ১০ একরেই বার্ষিক ৫০ হাজার টন উৎপাদন হতে পারে। তাই জমি নিয়ে জেরবার রাজ্যের জন্য এই শিল্প উপযুক্ত বলে মনে করেন সেহগল। হাওড়ার ফাউন্ড্রি পার্ক অবশ্য ঢিমে তালে জমি অধিগ্রহণের জেরেই এখনও চালু করা যায়নি বলে জানান তিনি। তাঁর আশা, আগামী মার্চে জমি বণ্টনের কাজ শেষ করা যাবে। |