অসম্মানজনক! ২৬/১১-র মুম্বই হানার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী ডেভিড কোলম্যান হেডলির ৩৫ বছরের জেল হওয়াকে এ ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছেন না মার্কিন নাগরিক কিয়া শের। ১৬৬ জনকে খুনের সাজা ৩৫ বছরের জেল! কিয়া বিস্মিত, তাঁর নিজের দেশ কী করে পারল এমন বিচার করতে?
২০০৮ সালের ওই দিন কিয়ার স্বামী অ্যালান এবং ১৩ বছরের মেয়ে নাওমি ওবেরয় হোটেলের ডাইনিং হলে নৈশভোজ সারছিলেন। বন্দুকধারীদের গুলিতে শেষ হয়ে যায় তাঁর কাছের মানুষ দু’টো। কিয়া এখন মুম্বইয়ে। বললেন, “এই বিচারের তীব্র বিরোধিতা করছি। ২৬/১১-য় যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, গুরুতর আহত হয়ে যাঁদের গোটা জীবনটাই পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল, এই বিচার আসলে তাঁদের অসম্মান করা।”
পুলিশের জেরার মুখে হেডলি নিজেই স্বীকার করেছে, মুম্বইয়ের বিভিন্ন অঞ্চলের ছবি, ভিডিও দিয়ে সে জঙ্গিদের সাহায্য করেছিল। তাজ, ওবেরয় হোটেলে হামলার পিছনেও তার হাত রয়েছে। কিয়ার অভিযোগ, “এক জন নিষ্পাপ মানুষের জীবনের দাম কেন অপরাধীর থেকে বেশি
নয়? হেডলি ওর বেঁচে থাকার
অধিকার হারিয়েছে।”
গত কাল শিকাগোর আদালতে যখন হেডলির বিচার চলছিল, হাজির ছিলেন লিন্ডা র্যাগসডেল। কিয়ার সঙ্গে তিনি একমত। ওবেরয়ে সে দিন তিনিও ছিলেন। জঙ্গিদের গুলি তাঁর পিঠে এসে লাগে। ছলছলে চোখে বললেন, “এ ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর আমি বিশ্বাস করি না হেডলির বেঁচে থাকার কোনও অধিকার আছে। ফল ওকে ভুগতে হবেই...।” |
স্বামী ও মেয়ের কবরের পাশে কিয়া। —ফাইল চিত্র |
আরও অনেককে চোখের সামনে মরতে দেখেছিলেন লিন্ডা। সে দিনের কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিলেন আদালত কক্ষে। হেডলির উদ্দেশে বললেন, “আমি জানি না তুমি কে। আদালতে তোমার দেওয়া সাক্ষ্য থেকেই আমি তোমাকে জেনেছি। কেন তুমি এ পথে এলে, জানতে চাই না। তুমি কী করেছ, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। শুধুমাত্র, কী বিচার হচ্ছে, সেটাই জানতে চাই।
নিজের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি লিন্ডা পড়ে শোনালেন ২৬/১১-র আর এক সাক্ষী অ্যাড্রিনা ভারাগোনার বক্তব্যও “রেস্তোরাঁ তখন গমগম করছে। গুলি ছুড়তে ছুড়তে
ছুটে এল দুই বন্দুকবাজ। আমার স্পষ্ট মনে আছে, বীভৎস আর্তনাদ। চার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, সবাই কেমন ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছে। কী ভাবে
জানি না, হঠাৎই আমি চিৎকার করলাম, সবাই টেবিলের তলায় ঢোকো, এখনই...।”
অ্যালান এবং নাওমির সঙ্গেই রাতের খাওয়াদাওয়া সারছিলেন অ্যাড্রিনা। তাঁর কথায়, “কারা, কেন গুলি ছুড়ছে, বুঝতে পারিনি সে দিন। আমরা সবাই টেবিলের তলায় লুকোই। কিন্তু নাওমি এত ভয় পেয়ে গিয়েছিল, চিৎকার করেই যাচ্ছিল। ওকে থামানো যাচ্ছিল না। অ্যালান খুব চেষ্টা করছিল ওকে সামলানোর। বললাম, ‘আমাদের মরে যাওয়ার ভান করতে হবে।’ ছুটে গেলাম অ্যালানের কাছে। কিন্তু ওর কাছে যেতেই মুখে ছিটকে এল রক্ত। আমার মাথাটা ভিজে গেল রক্তে।
আর সঙ্গে সঙ্গেই নাওমি শান্ত হয়ে গেল। দেখলাম ওর ছোট্ট শরীরটা নিথর হয়ে পড়ে রয়েছে অ্যালানের দেহের পাশে।” |