হিন্দি বুলি, ইংরেজি চাল, ফাঁকা চেয়ারে বঙ্গ সংস্কৃতি
দাঁতের মাজন, চ্যবনপ্রাশ, পাচকচূর্ণের ছড়াছড়ি। দোকানের নাম থেকে সামগ্রী সবই লেখা হিন্দিতে।
একটি সালোয়ার কামিজের দোকান। সেখানে কোনও ব্যানারই নেই। তার পরে একটি উপহার সামগ্রী ও একটি বুটিকের দোকান। নাম-ঠিকানা সবই লেখা আছে ইংরেজিতে।
এই হল আসানসোলের ‘বঙ্গ সংস্কৃতি উৎসব’!
মাজনের দোকানদার বাংলা বলতে-বুঝতে পারেন না। হিন্দিতেই জানালেন, নাম অনিল কুমার। এসেছেন উত্তরপ্রদেশের কানপুর থেকে। প্রথম দিন আড়াইশো টাকা এবং দ্বিতীয় দিন বিকেল পর্যন্ত সাড়ে তিনশো টাকার বিক্রিবাটা হয়েছে। তাঁর আক্ষেপ, “পাবলিক নেহি আতা হ্যায়। বিক্রি কঁহা সে হোগা!”
বুটিকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন আসানসোলের অভিজাত এলাকা আপকার গার্ডেনের রূপসী সাহা। ‘বঙ্গ সংস্কৃতি’ উৎসবে এসে বাংলায় না লিখে ইংরেজিতে দোকানের নাম-ঠিকানা লিখেছেন কেন? রূপসীদেবীর ব্যাখ্যা, “এটা কোনও মেলা নয়। এখানে আসি নিজের সামগ্রীর বিজ্ঞাপন করতে। বিক্রিটা বড় কথা নয়। সেই অর্থে বিক্রি হয়ও না।”
বঙ্গ সংস্কৃতি উৎসবের তোরণ।
আসানসোল রবীন্দ্রভবনের বাইরে ২৪ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার থেকে ভাষা শহিদ স্মারক সমিতির আসানসোল আঞ্চলিক পরিষদের উদ্যোগে এই উৎসব শুরু হয়েছে। এ বার নিয়ে বারো বছর হল। প্রথম দিনে নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী যখন মঞ্চে কথা বলছেন, তা শোনার জন্য দর্শকাসনে মেরে-কেটে একশো লোক। এর পরে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্মরণে আলোচনা এবং অভিজিৎ বসুর সঙ্গীত পরিবেশনের সময়ে সংখ্যাটা আরও কমে যায়। দ্বিতীয় দিন কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্ম সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে এলাকার নাম করা গায়িকা শিল্পী চট্টোপাধ্যায় এবং নূপুরছন্দা ঘোষের সঙ্গীতানুষ্ঠানেও দর্শকের সংখ্যা একই।
আঞ্চলিক পরিষদ সূত্রে জানানো হয়েছে, আজ, শুক্রবার সত্যজিৎ রায়ের কাহিনী অবলম্বনে নাটক ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার’ মঞ্চস্থ হওয়ার কথা। শেষ দিন, ২৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আনন্দী বসুর সঙ্গীত এবং মহুয়া মুখোপাধ্যায়ের গৌড়ীয় নৃত্যানুষ্ঠান। তার আগে দুপুরে মুক্তাঙ্গনে বাউল এবং ছৌ পরিবেশিত হবে। কিন্তু সে সব দেখবেন-শুনবেন কারা? হাতে গোনা কিছু মানুষ?
হিন্দিতে লেখা স্টলের নাম।
শিল্পীদেবীর আক্ষেপ, “প্রতি বছর এখানে ভাল অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু প্রচারের অভাবে বহু মানুষ তা জানতেই পারেন না। আমি এই প্রথম গাওয়ার সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞত। তবে আরও অনেকের সামনে গাইতে পারলে খুশি হতাম।” স্থানীয় সংস্কৃতি কর্মী সুভাষ মণ্ডলের মতে, “কিছু অন্য পেশার মানুষ এই উৎসব কুক্ষিগত করে রেখেছে। ঠিক মতো প্রচারও হয় না। উৎসব কার্যত প্রহসনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এঁদের কোনও বিকার নেই। বিভাস চক্রবর্তীর অনুষ্ঠানে দর্শকাসনে আসানসোলের মাত্র এক জন নাট্যকার। নাটকের বাকি লোকেদেরই ডাকা হয়নি!”
কর্মকর্তারা অবশ্য একমত নন। পরিষদের সম্পাদক সুমিতা রায়, কার্যকরী সভাপতি শুক্লা ভট্টাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ শর্মিষ্ঠা মজুমদারদের কথায়, “১২ বছর ধরে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু মানুষ বাংলা সংস্কৃতি বুঝতে না চাইলে কী করব?” গোড়া থেকেই উৎসব সঞ্চালনা করছেন জয়দীপ মিত্র। তাঁর যুক্তি আবার অন্য। যথেষ্ট প্রচার করা হয় জানিয়ে জয়দীপবাবু বলেন, “নামী-দামিরা না এলে ভিড় হয় না। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় চার বার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তিন বার, ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় এক বার এসেছিলেন। তাঁদের অনুষ্ঠানে ভিড় উপচে পড়েছিল।” দোষ অতএব জনতার। তাঁরা তারকা চান, ‘বঙ্গ সংস্কৃতি’ ততটা চান না!

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.