|
|
|
|
রেজ্জাকের ছেলে হাইকোর্টে |
দেখা করলেন না মমতা, শয্যাই নিলেন আরাবুল |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
খুব আশা করেছিলেন, ‘দিদি’ অন্তত এক বার তাঁকে দেখতে আসবেন। ঘনিষ্ঠদের বলেও ছিলেন সে-কথা। কারণ, তিনি যে-হাসপাতালে ভর্তি আছেন, সেই এসএসকেএমেই সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানে এলেন। চলেও গেলেন। তাঁর সঙ্গে দেখা না-করেই। তার পর থেকেই কার্যত মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন তৃণমূলের ‘উদ্যমী, তাজা নেতা’ আরাবুল ইসলাম। হাসপাতাল সূত্রের খবর, বিকেলে আরাবুল এক চিকিৎসককে বলেছেন, “আর ভাল লাগছে না। ভেঙে পড়ছি। মানসিক ভাবে খুব ক্লান্ত, দুর্বল লাগছে।”
এ দিন এসএসকেএমে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের উদ্বোধনে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সোমবার থেকেই আরাবুল পরিচিতদের কাছে বারবার বলেছিলেন, ‘দিদি’ যখন এসএসকেএমে আসছেন, নিশ্চয়ই তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন। সোমবার হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড বলেছিল, আরাবুলকে আইসিসিইউ-এ রাখার কোনও প্রয়োজন নেই। মঙ্গলবার তাঁকে সাধারণ শয্যায় নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন হাসপাতালের সুপার। চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, কিন্তু মঙ্গলবার সারা দিন তাঁকে সরিয়ে দিতে ভরসা পাননি হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। আরাবুল বেলা ১১টা থেকেই আইসিসিইউ-এ আকাশি নীল জামা পরে তৈরি হয়ে বসে ছিলেন। বিভিন্ন ঘটনার সময় তাঁকে ওই জামা পরা অবস্থাতেই দেখা গিয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, বেলা আড়াইটের পরে হতাশ আরাবুল পরিবারের এক জনকে বলেন, “দিদি আর আসবেন না।” তার পরে চুপচাপ আইসিসিইউ-এর শয্যায় দু’হাতের তালুর মধ্যে মাথা রেখে শুয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁকে সাধারণ শয্যায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে সোনারপুর থানার লক-আপে থাকার সময় দলের নেতাদের ‘শাপশাপান্ত’ করেছিলেন আরাবুল। লক-আপ থেকেই চিৎকার করে বারবার বলেছিলেন, ‘সব কিছু করেছি দলকে জানিয়ে।’ সব জেনেও দল যে তাঁকে ‘ফাঁসিয়েছে’ তা-ও লক-আপের ভিতর থেকে গলা ফাটিয়ে নেতাদের জানিয়েছিলেন তিনি। নেতারা শান্ত করার চেষ্টা চালিয়েও তাঁর ক্ষোভ প্রশমিত করতে পারেননি। তবে এ দিন ‘দিদি’ হাসপাতালে এসেও তাঁকে দেখতে না-যাওয়ায় তিনি পরে আর কোনও রকম চিৎকার-চেঁচামেচি করেননি। চিকিৎসকেরা জানান, সারা দিনই চুপচাপ ছিলেন আরাবুল। দুপুরে তাঁকে স্বাভাবিক খাবার হিসেবে ভাত-ডাল আর মাছের ঝোল দেওয়া হয়।
কিন্তু মেডিক্যাল বোর্ড আরাবুলের অসুস্থতাকে আইসিসিইউ-এ রাখার মতো গুরুতর নয় বলে রায় দেওয়ার পরেও মঙ্গলবার সারা দিনে তাঁকে সাধারণ শয্যায় সরানো হয়নি কেন?
হাসপাতালের সুপার তমাল ঘোষ বলেন, “এ দিনও সাধারণ শয্যা ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই তাঁকে সরাতে দেরি হয়েছে।” কিন্তু এসএসকেএমের মতো সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিতান্ত অপ্রয়োজনে আইসিসিইউ-এর একটি শয্যা এ ভাবে আটকে রাখা হল কেন, তার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি পিজি-র কর্তারা। এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষ জানান, আরও দু’তিন দিন আরাবুলকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তার পরে হবে তাঁর ‘ট্রেড মিল টেস্ট’। সেই পরীক্ষার ফল স্বাভাবিক হলে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ফল ‘নেগেটিভ’ হলে ‘অ্যাঞ্জিওগ্রাফি’ করা হবে।
আরাবুলের ব্যাপারে পুলিশ, হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙড়ের হাঙ্গামা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন রেজ্জাক মোল্লার ছেলে মুস্তাক আহমেদ। আবেদনকারীর আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, “নিরপেক্ষ তদন্ত যে হবে না, এর মধ্যেই তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। ঘটনার দীর্ঘদিন পরে আরাবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের দু’দিনের মধ্যে জামিন পেয়ে গিয়েছেন তিনি। তাই হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে এই তদন্তের পক্ষে সওয়াল করব।” ‘নিরপেক্ষ’ তদন্ত চেয়ে রেজ্জাক-পুত্রের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের জমানায় বিরোধী দলের ৫৫ হাজার কর্মী খুন হয়েছেন। সেই বাম শিবিরের মুখে এখন এ-সব নিরপেক্ষ তদন্তের কথা মানায় না। ৩৪ বছর পরে রাজ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সব মামলারই নিরপেক্ষ তদন্ত হচ্ছে।” |
|
|
|
|
|