এক হাতে শিল্পমহলের জন্য সুযোগ-সুবিধার তালিকা। অন্য হাতে লগ্নির আবেদন। এই নিয়েই বিদেশ সফরে রওনা হলেন পালানিয়প্পন চিদম্বরম। আজ হংকং। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর। তারপরে ফ্র্যাঙ্কফুর্ট আর লন্ডন।
বাজেটের আর মাস খানেক বাকি। এ সময়ে অর্থমন্ত্রী দম ফেলার সময় পান না। অথচ এখন এশিয়া-ইউরোপের ৪ শহরে যেতে হচ্ছে তাঁকে। লক্ষ্য একটাই, বিদেশি লগ্নিকে আমন্ত্রণ জানানো। শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করে এ দেশের কোথায় কী ধরনের লগ্নির সুযোগ আছে তুলে ধরা। পাশাপাশি বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মাও আজ থেকে শুরু হওয়া ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম’-এর বৈঠকে যোগ দিতে দাভোস গিয়েছেন। সেখানে টেসকো, দিয়াগেও, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, নোভার্টিস, ইউনিলিভার, ফিলিপসের মতো বহুজাতিক সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ভারতকে বিদেশি লগ্নির গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে ‘ল্যান্ড অফ লিমিটলেস অপরচুনিটি-ইন্ডিয়া বেকন্স দি ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক প্রচারও শুরু করছে বাণিজ্য মন্ত্রক।
ঠিক যে-ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা-হলদিয়া থেকে শুরু করে দিল্লিতে শিল্পপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। কখনও আবার নিজে না-গিয়ে অমিত মিত্র বা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পাঠান। একই ভাবে মনমোহন সিংহও তাঁর অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে দূত হিসেবে পাঠাচ্ছেন। ভরসা রাখছেন মন্ত্রিসভার দুই পোড় খাওয়া ব্যক্তির উপরে। সরকারি সূত্রে খবর, ভারত যে বিদেশি লগ্নিকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে, তা বোঝাতেও প্রতিমন্ত্রীদের বদলে একেবারে মন্ত্রিসভার শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের পাঠানো হচ্ছে।
অবশ্য, দেশের শিল্পমহলের একটা বড় অংশের মত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মনমোহন সরকারের পার্থক্য হল: খালি হাতে নিছক কথার কথা বলতে বিদেশি শিল্পপতিদের দরজায় হাজির হচ্ছেন না চিদম্বরম-আনন্দ। তার আগে আর্থিক সংস্কারের পথে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। যেমন: l বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র। l পুরনো অধিগ্রহণে কর আদায় নিয়ে শিল্পপতিদের আশঙ্কা দূর করতে কর ফাঁকি প্রতিরোধ বিধিকে কার্যত হিমঘরে পাঠানো। l অল্প পরিমাণে ডিজেলের দাম বাড়ানোর স্বাাধীনতা তেল সংস্থাকে দেওয়া। l পরিকাঠামোয় বড় প্রকল্পগুলির দ্রুত ছাড়পত্র দিতে মন্ত্রিসভার পৃথক কমিটি। এই বার্তাও দেওয়া হয়েছে, কেন্দ্র রাজকোষ ঘাটতির বহর কমাতে তৎপর।
এই অর্থবর্ষে বিভিন্ন মূল্যায়ন সংস্থা ভারতের রেটিং নেতিবাচক করা ও কমানোর হুমকি দিয়েছে। তাই লগ্নিকারীদের সেই ভয় দূর করাও জরুরি। এবং সে কাজ হংকং পৌঁছে শুরুও করে দিয়েছেন চিদম্বরম। তিনি বলেছেন, “যখন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখনও চিন্তিত ছিলাম না। আর এখন সংস্কারের এত সিদ্ধান্তের পরে আরও কম চিন্তিত।” এ বছরে বৃদ্ধির হার ৫.৭% না-ছাড়ালেও আগামী বছরে তা ৬-৭ শতাংশে পৌঁছবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
|
হলদিয়া পেট্রোকেমের শেয়ার চেয়ে ফের সুপ্রিম কোর্টে যাবেন চ্যাটার্জিরা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
অস্তিত্বের সঙ্কটের চূড়ান্ত মুহূর্তেও আইনি বিবাদের শনি পিছু ছাড়ছে না হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের। আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আরও বেশি করে আইনি জটে জড়িয়ে পড়তে চলেছে সংস্থার দুই প্রধান অংশীদার, রাজ্য সরকার ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছেন চ্যাটার্জিরা। ২০১২-র মার্চে সংস্থার ১৫.৫ কোটি শেয়ার হস্তান্তরের বিষয়ে প্যারিসের ‘ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ আর্বিট্রেশন’ (যা ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্সের অন্তর্গত)-এ যায় চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। সংস্থার ‘আর্টিক্ল অফ অ্যাসোসিয়েশন’ অনুযায়ী মালিকানার বিবাদ হলে যে কোনও পক্ষই ওই আদালতে যেতে পারে। এর বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে যায় সংস্থা। গত মাসে বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় রায় দেন, সালিশি আদালতে যাওয়ার দরকার নেই। চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর আইনজীবী সিদ্ধার্থ মিত্র অবশ্য জানান, হাইকোর্ট এই নির্দেশ দিলেও ওই শেয়ার চেয়ে দেশের আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যাবে। অর্থাৎ তাঁর দাবি, এই রায় চ্যাটার্জিদের অধিকার নস্যাৎ করেনি। এর ভিত্তিতেই ডিভিশন বেঞ্চে যান তাঁরা। সরকারি আইনজীবী জানান, বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মীয় সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন। তাই আপত্তি তোলে রাজ্য। ১৫ জানুয়ারি মামলা থেকে সরে যান অসীমবাবু। সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, এই পরিস্থিতিতেই সুপ্রিম কোর্টে যাবে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। |