এসেছে জয়। যদিও এই প্রথম বার নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণ। সেটাও তাঁর কাছে নতুন কোনও অভিজ্ঞতা নয়।
তাই বোধহয় ২০০৯ সালের তুলনায় রবিবার হোয়াইট হাউসের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ঢের বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন বারাক হুসেন ওবামা। সেই প্রত্যয়ী রাজনীতিককেই দেখা গেল সোমবার ক্যাপিটল হিলে, সর্বসমক্ষে শপথ নেওয়ার সময়ে।
২০০৯-এর চেয়ে ২০১৩ সালের পরিস্থিতিও অনেকটাই আলাদা। ওবামা এক দশকের যুদ্ধ শেষ হওয়ার বার্তা দিয়েছেন আজ নিজের বক্তৃতায়। বলেছেন, আর্থিক সঙ্কট তথা মন্দার শেষে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে মার্কিন অর্থনীতি। তাঁর মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিতে হবে আমেরিকাকে। দেশে সমকামীদের জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কোনও সমস্যার সমাধানেই তাঁর যে উৎসাহের অভাব নেই তাও বোঝাতে চেষ্টা করেছেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। ২০১৪ সালের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে অধিকাংশ সেনা সরিয়ে নিতে চায় আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সরকারকে তালিবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরু করতেও বলেছে তারা। কিন্তু মার্কিন সেনা সরলে তালিবানি প্রভাব বাড়বে। তাতে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের।
|
দ্বিতীয় বার শপথ নেওয়ার আগে জনতার উদ্দেশে ওবামা। সোমবার ওয়াশিংটনে। |
সমস্যা দেশেও কম নয়। রাজনৈতিক ভাবে এখনও বড় বেশি বিভক্ত আমেরিকা। মার্কিন কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েছে অর্থনীতি নিয়ে ওবামা প্রশাসনের অনেক প্যাকেজ। আজ ওবামা বলেছেন, অনেক সময়েই রাজনৈতিক বিভেদ সমস্যা সমাধানের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কখনও কখনও ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও প্রয়োজন।
রাজনীতির কারবারিদের একাংশের মতে, গত চার বছরে বিশ্বের সব চেয়ে ক্ষমতাধর দেশের প্রধান হিসেবে ওবামা বুঝে গিয়েছেন, অনিশ্চয়তাই তার সব সময়ের সঙ্গী। উদাহরণ? খুব পুরনো ঘটনা নয়। গত ১৬ ডিসেম্বর ছোট মেয়ে সাশার অনুষ্ঠানে হাজির থাকার পরিকল্পনা ছিল ওবামা-দম্পতির। কিন্তু তার ঠিক দু’দিন আগেই কানেক্টিকাটের স্যান্ডি হুক স্কুলের ঘটনা। মুহূর্তে সমস্ত পরিকল্পনা বাতিল। চার বছরের রেকর্ডে এ হেন উদাহরণ প্রচুর। স্যান্ডি হুক স্কুলে বন্দুকবাজের হামলায় শিশুদের মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে আমেরিকাকে। তাই শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে ওবামার বক্তৃতায়।
তবে সমস্যার চাপে আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেনি ওবামার। সরকারি সূত্রে খবর, সোমবার বক্তৃতায় বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই আগামী চার বছরে নিজের লক্ষ্যের কথা বলতে তৈরি হয়েছিলেন তিনি। অর্থনীতির হাল ফেরানো থেকে শুরু করে আরও জোরদার অস্ত্র আইন, অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয় সব কিছুই মাথায় ছিল তাঁর।
জনপ্রিয়তায় চিড় ধরা নিয়ে আশঙ্কায় ছিল ওবামা শিবির। অনেকে বলেছিলেন, ২০১২-র নির্বাচনে জয় খুব সহজে আসেনি। রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী মিট রোমনিকে হারাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল ওবামাকে। তার পরেও হয়তো পরিস্থিতি বদলায়নি। |
দ্বিতীয়বার শপথ গ্রহণের আগে মেয়ের সঙ্গে ওবামা। সোমবার ওয়াশিংটনে। |
২০০৯ সালের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ১৮ লক্ষ লোকের জমায়েত হয়েছিল। এ বার সংখ্যাটা সাত লক্ষ পেরোবে কি না, তাতেও সন্দেহ ছিল। তবে সে ভয় ঘুচেছে। ওয়াশিংটনে ভিড় করেছিলেন প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ।
জনপ্রিয়তা ফেরাতে ওবামার পাশাপাশি তৎপর ফার্স্ট লেডি মিশেলও। আগামী চার বছরে মার্কিন জনতার জীবনযাপনের মানে ফারাক আনার কথা তাঁর মুখেও। আর সেই সঙ্গে রয়েছে মা হিসেবে মেয়ে সাশা ও মালিয়াকে ‘ক্ষমতার মোহ’ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা।
আর তাই বোধহয় প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের ভাষায় হোয়াইট হাউসের ‘সাদা কারাগারে’ থেকেও বাইরের পৃথিবীকে চেনে ওবামা পরিবার।
|
যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ড বাচ্চু রাজাকারের
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঢাকা |
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারকে মৃত্যুদণ্ড দিল বাংলাদেশের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হত্যা, ধর্ষণের মতো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন জামাত-ই-ইসলামি দলের এই প্রাক্তন নেতা। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে দেশ ছেড়ে পালান আজাদ। পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তিনি পাকিস্তানে লুকিয়ে আছেন বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ফৌজদারি তথা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গঠন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। দু’বছর শুনানির পরে আজ আজাদের বিরুদ্ধে রায় দিল ট্রাইব্যুনাল। রায় শুনতে ঢাকার আদালতে বেশ ভিড়ও জমেছিল। ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ১৪ জনকে হত্যা, তিন জন মহিলাকে ধর্ষণ, অপহরণ, অগ্নিসংযোগ, বাড়ি লুঠের মতো কাজে জড়িত ছিলেন আজাদ। শুধু আজাদ নয়, গোটা জামাত-ই-ইসলামি দলটিই পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে মানবতাবিরোধী কাজকর্ম করেছে। |