পরিবহণে খরচ বাড়ল ৪০ কোটি, ক্ষুব্ধ রাজ্য
আর মিলবে না পাইকারি
ডিজেলে ভর্তুকি
পেট্রোল পাম্পে বেসরকারি বাস ডিজেল কিনবে ৫১ টাকা লিটার দরে। অথচ তেল কোম্পানিগুলির কাছ থেকে ৬০ টাকা লিটার দরে ডিজেল কিনে সরকারি বাসকে তেল জোগাবে রাজ্য। বৃহস্পতিবার মাঝ রাত থেকে ডিজেল বিক্রির নীতিতে যে সংশোধন এনেছে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি, তার জেরেই এমন বিচিত্র পরিস্থিতি।
বৃহস্পতিবার রাতে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের সঙ্গে তেল সংস্থাগুলির বৈঠকেই ঠিক হয়, যারা পাইকারি ক্রেতা, তাদের এ বার থেকে ভর্তুকি ছাড়াই ডিজেল কিনতে হবে। ফলে সাধারণ খুচরো ক্রেতার ক্ষেত্রে যেখানে লিটার প্রতি ৫০ পয়সা করে বাড়ল ডিজেলের দাম, পাইকারি ক্রেতার ক্ষেত্রে সেটা এক লাফে বেড়ে গেল লিটার প্রতি ৯.২৫ টাকা। পশ্চিমবঙ্গে তার সঙ্গে মূল্যযুক্ত কর যোগ করলে সেই বৃদ্ধি দাঁড়ায় ১১ টাকায়। এর ফলে যেমন রেল, ইস্পাত সংস্থা, বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিকে বেশি দাম দিতে হবে, তেমনই ধাক্কা খাবে রাজ্যের পরিবহণ ব্যবস্থাও। পশ্চিমবঙ্গ সরকার সূত্রের খবর, এর ফলে পরিবহণ ক্ষেত্রে বছরে এক ধাক্কায় খরচ বেড়ে যাবে ৪০ কোটি টাকা। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুকে লিখেছেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক এবং খুবই খারাপ ঘটনা।”
ডিজেলের দাম বিনিয়ন্ত্রণের কথা অনেক দিন ধরেই বলছে মনমোহন সিংহ সরকার। গত কাল পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক সেই লক্ষ্যেই পা রেখে তেল সংস্থাগুলির হাতে ডিজেলের দাম নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তুলে দেয়। তাতে লিটার প্রতি যে ‘আন্ডার রিকভারি’ থাকে তেল সংস্থাগুলির, সেগুলি হিসেব করে দাম বাড়াতে পারবে এবং এর ফলে ভর্তুকি কমলে সরকারি কোষাগারের উপর থেকে চাপও কমবে। কমবে মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতাও।
বিরোধীরা অবশ্য ডিজেলের এতটা দাম বাড়ানোর ফলে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন। তাঁদের বক্তব্য, পাইকারি ক্রেতারাই কিন্তু মূলত বড় পরিকাঠামোগত সংস্থা। যেমন, রেল, কোল ইন্ডিয়া, সেল ইত্যাদি। বিরোধীদের যুক্তি, এক ধাক্কায় পুরো ভর্তুকি তুলে নেওয়ায় রেলের ভাড়া তো বাড়বেই, বাড়বে পণ্য মাসুল। বাড়বে ইস্পাত উৎপাদনের দাম, তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের দামও। এগুলির সার্বিক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতির উপরে। তাতে সব রকমের পণ্যের দাম বাড়বে এবং তার ফলে বাড়বে মূল্যবৃদ্ধির হারও।
যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া বিরোধীদের সঙ্গে একমত নন। তিনি বলেন, “ভর্তুকি তুলে দাম বাড়ালে ক্রেতাকে বেশি পয়সা দিয়ে তা (ডিজেল) কিনতে হবে। ফলে তার হাতে টাকা কমবে। সে আর চট করে অন্য পণ্য কিনতে পারবে না। তাতে বাজারে অন্য পণ্যের দামের উপর থেকে চাপ কমবে।” অর্থাৎ, তিনি বোঝাতে চান, অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম মেনেই অন্য সব পণ্যের চাহিদা কমলে তাদের দামও কমবে। যে যুক্তির পরে তাঁর মন্তব্য, তাই এই মূল্যবৃদ্ধি বড় একটা প্রভাব ফেলবে না। বরং সামগ্রিক ভাবে অর্থনীতির পক্ষে তা ভালই হবে। খুচরো ক্রেতার বেলায় মাসে লিটার প্রতি ৫০ পয়সা করে ডিজেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার তথা তেল সংস্থাগুলি। মন্টেকের বক্তব্য, সে ক্ষেত্রেও ১৮ মাসের মধ্যে ভর্তুকির পুরোটা উঠে যাবে।
ঢালাও ভর্তুকি যে দীর্ঘদিন ধরে টেনে চলা সম্ভব নয়, সে কথা আগে বহু বার বলেছেন মনমোহন এবং মন্টেক দু’জনেই। সংস্কারের দ্বিতীয় দফায় নানা ক্ষেত্রে ভর্তুকি কমিয়ে সরকারের উপর থেকে বাড়তি খরচের বোঝা কমানোই তাঁদের লক্ষ্য। তাই ডিজেলের বিনিয়ন্ত্রণ চেয়েছিল সরকার। শেষ পর্যন্ত সেই লক্ষ্যে অনেকাংশেই সফল হচ্ছেন তাঁরা।
কিন্তু এর ফলে বিপাকে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি পরিবহণ ব্যবস্থা। একেই সরকারি পরিবহণ সংস্থাগুলি রুগ্ণ। তার উপরে এক ধাক্কায় ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ১১ টাকা বেড়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে পরিবহণ দফতরের। পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, রাজ্যের পাঁচটি পরিবহণ নিগম মিলিয়ে দৈনিক ১ লক্ষ লিটার ডিজেল কিনতে হয় রাজ্যকে। এক লাফে ১১ টাকা দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারের দৈনিক ১১ লক্ষ টাকা খরচ বাড়ল। এক বছরে যা দাঁড়াবে অন্তত ৪০ কোটিতে।
এ দিন মহাকরণে পরিবহণ সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে অংশ নেন শিল্পমন্ত্রী ও এই মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রধান পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র এবং দফতরের অফিসারেরা। বৈঠকে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন মন্ত্রীরা। পরে মমতা ফেসবুকে লেখেন, “(দাম বাড়ানোর) এই সিদ্ধান্ত ‘গোপনে’ জানানো হয়েছে বলে আমি জেনেছি। আমি কখনও গোপন মূল্যবৃদ্ধির কথা শুনিনি। এ তো লোক ঠকানো।” তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে, শনিবার তারা কলকাতার চার জায়গা থেকে মিছিল করবে। ধর্মতলায় হবে জনসভা। মুখ্যমন্ত্রীর সেই সভায় থাকার কথা।
একই সঙ্গে কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এর পরে কি জনমোহিনী নীতি ছেড়ে বাসের ভাড়া বাড়ানোর রাস্তায় হাঁটবে সরকার? সেটা বেসরকারি বাস মালিকদেরও দীর্ঘদিনের দাবি। সম্প্রতি যে হারে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, তাতে মোটেও তাঁরা খুশি নন। অসন্তুষ্ট ট্যাক্সি মালিকদের সংগঠনও। তাঁরা এখনই আন্দোলনে না নামলেও আগামী মাসে বৈঠক করে সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিমল গুহ।
ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ করে বামেরাও বলেছেন, এই ভাবে ডিজেলের দাম বাড়ালে সারা দেশে পরিবহণের খরচ বাড়বে। তার প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের উপরেই। বিজেপি এ দিন দিল্লিতে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখায়। আপত্তি উঠেছে সরকারের শরিক ও সমর্থকদের মধ্যে থেকেও। ডিএমকে প্রধান করুণানিধি জানান, ডিজেলের দাম মাসে ৫০ পয়সা করে বাড়ালে সাধারণ মানুষের উপরে চাপ বাড়বে। তা ছাড়া, প্রতি মাসে ভর্তুকিতে অন্তত একটি করে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারও দেওয়া উচিত। না হলে ইউপিএ সরকারকে রাজনৈতিক মূল্য চোকাতে হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি। একই ভাবে ডিজেল ও রান্নার গ্যাস নিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছে বিএসপি এবং সপাও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.