মাস কয়েক আগেই নদীর গতিপথের হদিস দিয়েছে সে। এ বারে লাল গ্রহে মঙ্গলযান কৌতূহলের (রোভার কিউরিওসিটি) লক্ষ্য নদীর উপত্যকার পাললিক শিলা। যে শিলা থেকে মঙ্গলের আবহাওয়া পরিবর্তনের খুঁটিনাটি জানা সম্ভব বলে দাবি করেছেন নাসার মঙ্গল অভিযানের বিজ্ঞানী দলের চেয়ারম্যান অমিতাভ ঘোষ। অমিতাভবাবুর বিশ্লেষণ, কোনও নদী বা জলধারা যে পলি বয়ে আনে, তার একটা বড় অংশ জলের তলায় থিতিয়ে পড়ে। সেই পলি স্তরে স্তরে জমতে জমতে চাপে পাথরে পরিণত হয়। তাকেই বলে পাললিক শিলা (যেমন, বেলেপাথর যা রান্নাঘরে শিল-নোড়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়)। ওই পাথরের স্তরে স্তরে বিভিন্ন সময়কালের আবহাওয়ার তথ্য লুকিয়ে রয়েছে। পলি সমসাময়িক আবহাওয়ার তথ্য প্রকাশ করে। পাথরের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন সময়ের যে পলি জমা হয় তা থেকে বিভিন্ন সময়ের আবহাওয়ার তথ্য পাওয়া সম্ভব। তা ছাড়া ওই শিলা আরও অনেক ভূতাত্ত্বিক তথ্য দিতে পারে। কিউরিওসিটি ইতিমধ্যেই ওই পাললিক শিলার গঠন কেমন ও তা কত দিনের পুরনো তা নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অমিতাভবাবু। ওই সমীক্ষার প্রাথমিক ফল পেতে এখনও মাস কয়েক লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কী ভাবে এই কাজ করছে কিউরিওসিটি? নাসার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পাথরে ফুটো করে পাথরচূর্ণ সংগ্রহ করবে কৌতূহল। নিজের দেহে বসানো বিশেষ যন্ত্রে তা বিশ্লেষণ করে সেই তথ্য পাঠিয়ে দেবে গবেষণাগারে। পাললিক শিলা খোঁজার প্রাথমিক কাজটা সে ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছে বলে দাবি করেছেন অমিতাভবাবু ও তাঁর সঙ্গীরা। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কি না, সেটা বোঝাটাই এখন সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নাসার এই বিজ্ঞানী জানান, আবহাওয়ার তথ্য পেলে বোঝা সম্ভব, মঙ্গলে কোন সময়ে প্রাণের অনুকূল আবহাওয়া ছিল। বা আদৌ ছিল কি না। তবে আবহাওয়ার তথ্য দিয়েই প্রাণের অস্তিত্ব না থাকার বিষয়ে নিশ্চিত করে বলে দেওয়া সম্ভব নয়। সাধারণ ভাবে প্রাণের প্রতিকূল এমন পরিবেশেও অনেক অণুজীব বেঁচে থাকতে পারে। প্রাণের অস্তিত্বের বিষয়ে সাহায্য করতে পারে কোনও রাসায়নিকের হদিসও।
অমিতাভবাবু বলছেন, “যদি সালফিউরিক অ্যাসিডের মতো কোনও মারাত্মক রাসায়নিকের সন্ধান মেলে, সেটাও বড় আবিষ্কার হবে। কারণ, ওই ধরনের রাসায়নিকে কোনও জীবই বেঁচে থাকতে পারে না।” |