সম্পাদকীয় ১...
ভাঙড়ের সিঁদুরে মেঘ
ক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার প্রবীণ রাজনীতিক, রাজ্যের প্রাক্তন ভূমি-মন্ত্রী ও বর্তমান বিধায়ক আবদুল রেজ্জাক মোল্লাকে গাড়ি হইতে টানিয়া রাস্তায় ফেলিয়া লাথি-ঘুষি-কিল-চড় এবং অশ্রাব্য গালিগালাজ পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এক নূতন সংযোজন। মা-মাটি-মানুষের দল তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনের ইতিহাসেও। ভাঙড়ে এই অপকাণ্ডের নেতৃত্ব দানের অভিযোগে অভিযুক্ত হইয়াছেন আরাবুল ইসলাম। তিনি প্রাক্তন বিধায়ক এবং রীতিমতো স্বনামধন্য। ইতিপূর্বে থানার দারোগাকে মারধরের অভিযোগে ৪০ দিন জেল হাজতে বাস করিয়াছেন, তাঁহার বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, অপহরণ ও তোলাবাজির অন্তত সাতটি অভিযোগ পুলিশের খাতায় নথিভুক্ত, যিনি মুক্ত বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণি অবধি পড়িয়াও কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হন ও সেই সুবাদে কলেজ-শিক্ষিকাকে লক্ষ করিয়া জলের জগ ছুড়িয়া মারেন। মা-মাটি-মানুষের দলে তাঁহার কদর যে প্রচুর এবং জেলার আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতিপর্বে সেই কদর যে প্রচুরতর হইবে, তাহা সম্যক উপলব্ধি করিয়াই দলীয় নেতৃত্ব তাঁহার প্রতি স্নেহমিশ্রিত প্রশ্রয়ে প্রসন্নতা দেখাইবেন, এমন আশা নিশ্চয়ই তাঁহার মনে প্রবল।
রাস্তায় ফেলিয়া বিরোধী দলের বর্ষীয়ান জননেতা ও রাজনীতিককে এ ভাবে লাঞ্ছনা-নিগ্রহের নিন্দা করার পরিবর্তে শাসক দল ও তাহার মন্ত্রীরা কার্যত এই ন্যক্কারজনক আচরণের সমর্থনে আগাইয়া আসিয়াছেন। নগর উন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম গোটা অপরাধটিকে রেজ্জাক মোল্লার ‘নাটক’ বলিয়া বিদ্রুপ করিয়াছেন। সেই সঙ্গে তৃণমূলের অকুস্থলে উপস্থিত সমর্থকরা সমবেত ভাবে রেজ্জাক সাহেবের উপর ঝাঁপাইয়া পড়িলে তাঁহার কী দশা হইত, সেই সম্ভাবনার কথাও হাকিম সাহেব হুঁশিয়ারি হিসাবে উল্লেখ করিতে ভুলেন নাই। ইহাই অধুনা মহাকরণের পরিচিত প্রতিক্রিয়া। প্রশাসনের কর্তা ও কর্ত্রীরা সি পি আই এমের উপর আক্রমণের ঘটনাকে সি পি আই এমেরই অন্তর্কলহ বলিয়া বর্ণনা করিতেছেন। পার্টি-অফিসে ভাঙচুর, অগ্নিকাণ্ড ও জবরদখলের ঘটনাকেও সি পি আই এমেরই ঘাড়ে চাপাইতেছেন। তৃতীয় রাইখ-পূর্ববর্তী জার্মানির কথা মনে পড়িতে পারে। সে দিন রাইখ্স্ট্যাগ আগুনে পুড়াইয়া দিয়া রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ঘাড়ে তাহার দায় চাপাইয়া শাসকরা দেশকে বিরোধীশূন্য করিয়াছিল। সে প্রসঙ্গ না হয় আপাতত থাকুক। কিন্তু এক জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী হইয়া হাকিম সাহেবের এই দোষারোপ পুলিশ প্রশাসনকে সত্য উদ্ঘাটনের জন্য তদন্তে উৎসাহিত করিবে না নিশ্চয়ই। বিরোধী রাজনীতিকদের নিরাপত্তা রক্ষাতেও পুলিশ প্রশাসনকে উৎসাহিত করিবে কি? লক্ষণীয়, ভাঙড়ে রেজ্জাক মোল্লা পুলিশ সুপারকে আগাম তাঁহার সফরের কথা জানাইয়া গেলেও মোতায়েন পুলিশের সামনেই শাসক দলের ভৈরবদের হাতে তাঁহার নিগ্রহ সম্পন্ন হইয়াছে!
এই সবই দেখাইয়া দেয়, দল এবং সরকারের স্বার্থকে ক্রমাগত গুলাইয়া ফেলা হইতেছে। ফিরহাদ হাকিম কিংবা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকরা মন্ত্রী হইয়াও প্রশাসকসুলভ আচরণের পরাকাষ্ঠা রচনা করিতেছেন না। প্রশাসন অর্থাৎ রাজ্যের শাসনপ্রণালী ও ব্যবস্থা যে দল বা দলীয় অগ্রাধিকার হইতে ভিন্নতর বিষয়, ইহা স্মরণে থাকিতেছে না। প্রবণতাটি আনকোরা নয়। বামফ্রন্টের আমলেও মহাকরণের সহিত আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কর্তৃত্ব একাকার হইয়া গিয়াছে। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সে সময় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও এমন সব উচ্চারণ রাজ্যবাসীকে উপহার দিয়াছেন, যাহাতে দলনেতার মনোভাব প্রকট, প্রশাসকের নিরপেক্ষতা নয়। ফিরহাদ হাকিম ও তাঁহার নেত্রী যদি দলের সংকীর্ণ স্বার্থকে সমগ্র রাজ্যে আইনের শাসন প্রবর্তনের বৃহত্তর স্বার্থের অধীন করিয়া তোলার সেই দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতাটিকেই উপর্যুপরি অনুশীলনে আরও সূচিমুখ করিয়া তোলেন, সেটি লঙ্কায় পৌঁছাইলেই রাবণোচিত অনাচারে লিপ্ত হওয়ার প্রবচনটিকেই সার্থক করিবে। ‘পরিবর্তন’ সে ক্ষেত্রে সর্বার্থেই একটি অন্তঃসারশূন্য ও প্রতারণামূলক স্লোগানে পরিণত হইবে। হাকিম সাহেবরা হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট হইতে মহাকরণে পৌঁছাইয়াছেন। দলনেতা হইতে প্রশাসক হউন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.