আগামী বছর মার্কিন সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে ইসলামাবাদের নিয়ন্ত্রণ বেড়ে যেতে পারে। সম্প্রতি আফগানিস্তান ‘হাই পিস কাউন্সিল’-এর প্রস্তাবিত ‘২০১৫দিগ্নির্দেশিকা’য় এই আশঙ্কার কথা প্রকাশ্যে চলে আসায় বিশ্ব জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। শান্তির যুক্তি দিয়ে বেশ কিছু তালিবান নেতার হাতে আফগানিস্তানের কিছু এলাকার শাসনভার তুলে দেওয়া হবে, এমন সম্ভাবনার কথাও হয়েছে ওই প্রস্তাবে।
তালিবানের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়ার এমন পরিণতিতে যথেষ্টই বিচলিত দিল্লি। গত কাল ইরানের ‘সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল’-এর প্রধান সৈয়দ জালিলি-র সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নয়াদিল্লি থেকে সোজা কাবুলে গিয়েছেন ইরানের নেতা জালিলি। ভারতীয় নেতৃত্বকে তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে কথা বলবেন।
বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, ‘২০১৫দিগ্নির্দেশিকা’ নিয়ে অবশ্যই দ্বিপাক্ষিক স্তরে আফগানিস্তানের কাছে বিশদে জানতে চাইবে নয়াদিল্লি। কিন্তু তার আগে এলাকার অন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলির মাধ্যমেও কাবুলের উপর চাপ সৃষ্টি করা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে আমেরিকার সঙ্গেও কথা বলবে মনমোহন সরকার। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, জালিলি গত কালের বৈঠকে বলেছেন, আমেরিকা আফগানিস্তানে ‘সুবিধাবাদী রাজনীতি’ করছে। সন্ত্রাসবাদ দমন নয়, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিই তাদের লক্ষ্য। প্রসঙ্গত, ইরানের সঙ্গেও তালিবানের সম্পর্ক যথেষ্ট তিক্ত। ১৯৯৮ সালে আফগানিস্তানের মাজার ই শরিফ-এ ১০ জন ইরানি কূটনীতিক এবং এক সাংবাদিককে হত্যার পর দু’তরফের যে অঘোষিত যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তার জের আজও চলছে।
সম্প্রতি ২০১৫ সংক্রান্ত পাঁচ পর্যায়ের পথনির্দেশিকাটি প্রকাশ্যে আসার পরই নড়েচড়ে বসেছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “এই খসড়া প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে আফগানিস্তানে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ অনেক বেড়ে যাবে।” শুধু তা-ই নয়, নয়াদিল্লির আশঙ্কা, তালিবানের কাছ থেকে শান্তি ‘কিনতে’ কট্টরপন্থী মৌলবাদী নেতাদের হাতে বেশ কিছু অঞ্চল ছেড়ে দেবে কারজাই সরকার। সব মিলিয়ে আল কায়দা-সহবিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের বাড় বাড়ন্ত হবে আফগানিস্তানে। কাশ্মীর থেকে বাংলাদেশ, আবার ছড়িয়ে পড়বে সন্ত্রাসবাদের আগুন। ভারত তথা গোটা দক্ষিণ এশিয়ার পক্ষে তা হবে বিশেষ বিপদের।
বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ার প্রশ্নে নয়াদিল্লির একটাই অবস্থান। ২০১০ সালে কাবুল সংক্রান্ত লন্ডন সম্মেলনে যে ‘রেড লাইন’ তৈরি হয়েছিল, তা মেনে চলার পক্ষপাতী নয়াদিল্লি। |