জঙ্গল-পথে ট্রেনের গতি-বিধির তোয়াক্কা না করে ফের ছুটল ট্রেন এবং তার ধাক্কায় মারা গেল অন্তত চারটি পূর্ণ বয়স্ক হাতি। শনিবার সন্ধেয়, উত্তরবঙ্গের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের বুক চিরে যাওয়া রেল পথে দমনপুর রেঞ্জে ডিব্রুগড়-ঝাঝা এক্সপ্রেসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছে চারটি হাতি। গুরুতর জখম হয়ে লাইনের পাশেই পড়ে আরও দু’টি। বন কর্তাদের আশঙ্কা, তাদেরও বাঁচার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
জঙ্গল চিরে যাওয়া রেল পথে ট্রেনের গতি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে খোদ সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটারের সেই বাঁধা গতির তোয়াক্কা যে ট্রেন চালকেরা করেন না, দমনপুরের দুর্ঘটনা ফের তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশ জুড়ে ট্রেনের ধাক্কায় হাতি-মৃত্যুর ঘটনার বিরাম নেই। গত এক বছরে ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে অন্তত ২৯টি হাতি। গত ৩০ ডিসেম্বর ওড়িশার গঞ্জাম জেলায় রম্ভা ও গুমা স্টেশনের মাঝে ট্রেনের বলি হয়েছিল ৬টি হাতি। সেই তালিকায় শেষ সংযোজন দমনপুর। |
রেললাইনে পড়ে একটি হাতির দেহ। ছবি: নারায়ণ দে |
এ দিনের দুর্ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে ট্রেন চালকদের আরও সতর্ক হওয়া আবশ্যক।” উত্তর-পূর্ব রেলের কর্তারা দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
অন্তত ৩২টি হাতির একটি দল দিন কয়েক ধরেই ওই এলাকায় ঘোরাফেরা করছিল বলে বন দফতর জানিয়েছে। তাদের চলাচলের চেনা ‘করিডর’ দিয়ে এ দিনও তারা লাইন পারাপার করছিল। সেই সময়ে সন্ধে ৬.২২ মিনিটে গুয়াহাটিগামী ঝাঝা এক্সপ্রেস এসে পড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রেনের গতি এতটাই ছিল যে হাতিগুলিকে প্রায় ৪০০ গজ হিঁচড়ে টেনে নিয়ে যায় ইঞ্জিনটি। রাজ্যের চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন সীতাংশশু শেখর মন্ডল বলেন, “ট্রেনটি প্রচন্ড গতিতে ছিল। জঙ্গলের ভিতরে আরও ধীরে চালানোর কথা। তা চালকেরা শুনলে তো!”
ডুয়ার্সের তিনটি অভয়ারণ্য চিরে ওই রেলপথটি ২০০৪ সালে ব্রডগেজ হওয়ার পর ট্রেনের ধাক্কায় এই নিয়ে ৪৪ টি হাতির মৃত্যু হল বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। মিটার গেজ থাকাকালীন ওই পথে ট্রেনের সংখ্যা এবং তার গতি ছিল কম। পরিসংখ্যান বলছে, সেই সময়ে ৩০ বছরে মারা গিয়েছিল ২৭টি হাতি। |