খাঞ্জাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত: পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর-২ ব্লক। গ্রাম সংসদ ১০টি
গ্রামসভার ডায়েরি
নিয়মানুযায়ী বছরে এক বার গ্রামসভা হয় আর বছরে দু’বার হয় গ্রাম সংসদ সভা। পঞ্চায়েত এলাকার সবক’টি গ্রাম সংসদ সভা শেষ হওয়ার পর হয় গ্রামসভা। গ্রামসভায় মোট ভোটারের অন্তত ১০ শতাংশ উপস্থিত থাকার নিয়ম। যদি সভায় ওই শতাংশ ভোটার উপস্থিত না হয় তাহলে কোরাম হয় না। ফলে ফের মুলতুবি সভা ডাকতে হয়। সভা মুলতুবি করতে গেলে ৫ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। এই মুলতুবি সভাতেও কোরাম না হলে ফের গ্রাম সংসদ সভা ডাকতে হয়। গ্রামসভায় প্রতিটি গ্রাম সংসদ থেকেই ভোটাররা আসেন। পঞ্চায়েত নিয়মানুযায়ী গ্রাম সংসদ সভায় মূলত ছ’মাসের আয় ও ব্যয়ের হিসাব, কোন খাতে কত টাকা এসেছে ও খরচ হয়েছে তা ভোটারদের জানাতে হয়। এ ছাড়াও আগামী দিনে এলাকায় উন্নয়নের পরিকল্পনা নেওয়া, উপস্থিত সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগও শোনা হয়।

আগে প্যাকেট পরে...
দুপুর দেড়টা থেকেই পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষেরা শীতের পোশাক পরে আসতে শুরু করলেন পায়ে হেঁটে, সাইকেলে ট্রেকার বা অটোতে। সভায় এসে সই করে সঙ্গে সঙ্গে-ই অনেকেই নিয়ে নিলেন মিষ্টির প্যাকেট। সেটাকে কেউ রাখলেন ব্যাগে, আবার কাউকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও খুলতে হল শিঙাড়া ও মিষ্টির প্যাকেটটি। সঙ্গে আসা খুদে বাচ্চাটা মিস্টির প্যাকেট দেখে ততক্ষণে কান্না জুড়েছে যে! সভায় হাজির বৃদ্ধ, বৃদ্ধা ও মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
সভার শুরুতে। —নিজস্ব চিত্র।
বেলা যে পড়ে এল
ঘোষণা হয়েছিল সভা শুরু হবে দুপুর ৩টেয়। কিন্তু বেলা গড়ালেও দেখা গেল অধিকাংশ ‘লাল’ চেয়ার-ই খালি। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও সভা শুরু না হওয়ায় বৃদ্ধ থেকে মাঝ বয়সি সবাই সভা কখন শুরু হবে তা প্রধান অজিত পাত্রের কাছে জানতে চান। প্রধান বললেন, “সরকারি নিয়মানুযায়ী ৫ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি না হলে সভা শুরু করার কোনও আইন নেই।” অগত্যা যারা ‘আগেই’ এসে পড়লেন জমালেন গল্প। ধানের ফলন থেকে শীত, আজ দুপুরে কী খাওয়া হল থেকে পঞ্চায়েত ভোট বাদ গেল না কোনও প্রসঙ্গই। কেউবা শীতের দুপুরে রোদে পিঠ ঠেকিয়ে ধরালেন বিড়ি। চোখ বুজে এল সুখটানে...

সভা শুরু
পঞ্চায়েত সচিব বিশ্বনাথ আদক আনুষ্ঠানিক ভাবে সভা শুরুর কথা ঘোষণা করলেন এবং প্রধান অজিত পাত্রকে সভাপতি করার প্রস্তাব দিলে অন্যান্য সদস্যরা তা মেনে নিলেন। প্রথমে প্রধান বিগত ছ’মাসের (যেহেতু গ্রাম সংসদ সভা দু’বার হয়) ২০১২-২০১৩ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব পাঠ করে শোনান। ভোটারদের জানান ৭৭ লক্ষ ৯৫ হাজার ৬৬১ টাকা সরকার থেকে পাওয়া গিয়েছে এবং খরচ হয়েছে ৪০ লক্ষ ৭২ হজার ৫৩৯ টাকা। পঞ্চায়েতে বর্তমানে ৩৭ লক্ষ ২৩ হাজার ১২২ টাকা রয়েছে। এই হিসাব পাঠ করার পরই শুরু হল বিতর্ক।
সভায় হাজির বয়স্করাও।
কিছুক্ষণেই পণ্ড
কারণ, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত এলাকার দু’টি গ্রাম সংসদে মুলতুবি সভাতেও কোরাম হয়নি। কৈগ্যেড়া ও হাজরাবেড় এই দু’টি সংসদ সভা শেষ না হয়েই গ্রামসভার আয়োজন কেন করা হল এলাকার কিছু মানুষ তা প্রধানের কাছে জানতে চান। প্রধান বলেন, “আগের সভায় কোরাম হয়নি তা ঠিক। বিডিওর মৌখিক অনুমতি নিয়ে তবে-ই গ্রামসভা ডাকা হয়েছে।” তখন তাঁরা লিখিত অনুমতি দেখতে চান। প্রধান লিখিত অনুমতি নেই জানালে তাঁরা গ্রামসভা বন্ধ করার কথা বলেন। প্রায় এক ঘণ্টার বেশি এই নিয়ে চলল তর্ক। অবশেষে সবার আপত্তিতে প্রধান গ্রামসভা সেদিনের মতো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

হল না বলা
গ্রামসভা ভেস্তে যাওয়ায়, না বলা রয়ে গেল অনেক কিছুই। যেমন গোপালপুরের বাসিন্দা বীণা চক্রবর্তীর অনুযোগ, “বিধবাভাতা নিয়ে আমার কিছু জিজ্ঞাসা ছিল তা আর বলা হল না!” কোলাজেটিয়ার বাসিন্দা বিধূভূষণ পোড়ে ভেবেছিলেন এলাকার নলকূপ, আর প্রাইমারি স্কুলটার সংস্কার নিয়ে কিছু বলবেন। খাঞ্জাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা বনমালী বল্লভেরও গ্রামের কাঁচা রাস্তার সংস্কার, ১০০ দিনের কাজ নিয়ে থাকা প্রশ্নগুলিও রয়ে গেল অনুচ্চারিত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.