ট্রেনে ইঁদুর, ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ
ছোট্ট নাতিটিকে নিয়ে আরাম করে যাবেন বলে প্রথম শ্রেণির টিকিট কেটেছিলেন হাওড়ার বকুলতলার বাসিন্দা মতিলাল ঝালানি। চেন্নাই থেকে কলকাতা, পুরো রাস্তাটা কাটালেন ইঁদুরের আতঙ্কে। সঙ্গের খাবার তো গেলই, দু’মাসের নাতিটিকে ইঁদুরের কামড় থেকে রক্ষা করতে সারা রাত জেগে পাহারা দিলেন সকলে।
রেলের কামরায় ইঁদুরের সঙ্গে রাত্রিবাসের অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়েছে। কিন্তু মতিলালবাবু ছেড়ে দেননি। মামলা করেন ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে। মামলার রায়ে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মামলা চালানোর জন্য অতিরিক্ত আরও পাঁচ হাজার টাকা তাঁকে দিতে হবে রেল কর্তৃপক্ষকে। বুূধবার ২ জানুয়ারি হাওড়া জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত এই রায় দেয়।
কী ঘটেছিল মতিলালবাবুর ক্ষেত্রে? আদালতে তাঁর দায়ের করা মামলার আর্জিতে মতিলালবাবু জানান তিনি ২০১০-এর ১২ অগস্ট ২৮৪০ ডাউন করমণ্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনে চেপে চেন্নাই থেকে হাওড়ায় আসছিলেন। তাঁরা প্রথম শ্রেণির টিকিট কেটেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী ললিতা, পুত্র-পুত্রবধূ সুজাতা এবং দুই নাতি, সাত বছরের যশ এবং দু’মাসের নৈতিক। সকালে তাঁরা নিজেদের ঝুড়ি থেকে খাবার বের করার সময় দেখেন ঝুড়িটি ফালা ফালা করে কাটা। খাবারের অধিকাংশ নেই। তখনও খাবারের সন্ধানে ঝুড়ির কাছে বেশ কয়েকটা ধেড়ে ইঁদুর।
মতিলালবাবুর অভিযোগ, টিকিট পরীক্ষক সবকিছু দেখে শুনে বলেন, “প্যান্ট্রি কারের কাছে বলে ইঁদুরের উৎপাত হয়েছে। তবে এটা আমাদের দেখার কথা নয়। যে বেসরকারি সংস্থা ট্রেনে সাফাইয়ের দায়িত্বে রয়েছে তারা বিষয়টি দেখবে।” সাফাই সংস্থার প্রতিনিধিও ইঁদুরকে গুরুত্ব দেননি। শুধুমাত্র তাঁর কাছ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে তিনি দায় সারেন।
ভুক্তভোগী মতিলাল এবং ললিতা ঝালানি।—নিজস্ব চিত্র
ইঁদুরের দৌরাত্ম্যে মতিলালবাবু ও তাঁর স্ত্রীকে দীর্ঘ যাত্রাপথে অভূক্তই থাকতে হয়, কারণ তাঁরা বাইরের খাবার খান না। উপরন্তু রাতে তাঁদের জাগতে হয় দু’মাসের নাতিকে ইঁদুরের কামড় থেকে রক্ষা করার জন্য। দেহে-মনে বিপর্যস্ত হয়ে তাঁরা হাওড়ায় নামেন। বাড়ি ফিরে তিনি দক্ষিণ পূর্ব রেলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজারের কাছে কয়েকটি চিঠি দিয়ে হেনস্থার জন্য ৪০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। চিঠি দেন হাওড়ার স্টেশন ম্যানেজারকে। দু’বছরেও উত্তর আসেনি। মতিলালবাবু গত জুলাই মাসে হাওড়া জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন।
মামলায় রেলের তরফের আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন, এই মামলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচার্য নয়। এটি ‘রেলওয়ে ক্লেইম ট্রাইবুনাল’-এর এক্তিয়ারভূক্ত। রেলের এই বক্তব্য মানেনি ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। বিচারকরা জানান, ডাকাতি বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো কারণে পণ্যের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ চেয়ে ‘রেলওয়ে ক্লেইম ট্রাইবুন্যাল’-এ মামলা করা যায়। কিন্তু রেল যদি ইঁদুর তাড়াতে না-পারে, তাকে ‘ডাকাতি’ বা ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়’ বলা যাবে না। মতিলালবাবু ভাল পরিষেবা পেতে চড়া দামে টিকিট কেটেছেন। রেল তাঁকে ইঁদুরের ‘উপদ্রব’ উপহার দিয়েছে। এটা চরম গাফিলতি। ফলে এটি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতেরই বিচার্য।
বৃহস্পতিবার নিজের বাড়িতে বসে মতিলালবাবু বলেন, “আদালতের রায়ে আমি খুশি। আশা করি এই রায় থেকে রেল কর্তৃপক্ষ শিক্ষা নেবেন, যাত্রী সুরক্ষায় কী ভাবে নজর দেওয়া যায়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.