পরিচারিকাদের ‘সুরক্ষা’ শেখাল শ্রম দফতর
ওঁদের অধিকাংশই পরিচারিকার কাজ করেন। ওঁদের অধিকাংশই আর্থিক দিক থেকে দুর্বল। এমনই নানা বয়সের ২৫ জন মহিলাকে নিয়ে রাজ্য শ্রম দফতরের উদ্যোগে কলকাতায় আয়োজিত হল এক শিবির। যার মূল বিষয় ছিল ‘নিজে বাঁচো, অন্যকে বাঁচাও’। চলতি সপ্তাহে বুধবার থেকে বাইপাস-সংলগ্ন পূর্ব-পঞ্চান্নগ্রামের দক্ষিণপাড়ার একটি ক্লাবঘরে শুরু হওয়া এই শিবির চলবে আজ, শুক্রবার পর্যন্ত।
রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা দেশের নানা জায়গায় মহিলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে বারবার। বৃহস্পতিবার শিবিরে ক্লাসের শুরুতেই শ্রম দফতরের যুগ্ম-অধিকর্তা শৌর্য চক্রবর্তী এই মন্তব্য করে শিক্ষার্থীদের বললেন, “প্রচারমাধ্যমে এ রকম খবর এলে বা হইচই হলে, আমরা জানতে পারি। এ ব্যাপারে মহিলাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।” কী ভাবে সচেতন হবেন ওঁরা? শৌর্যবাবুর কথায়, “ওঁদের অনেকে ভোরে বা রাতে কাজে যান। বাড়ির টেলিফোন নম্বর ছাড়াও সতর্কতা হিসেবে সঙ্গে স্থানীয় থানা এবং লালবাজার কন্ট্রোল রুমের নম্বর রাখা দরকার। অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়লে যাতে আক্রান্ত মহিলা সঙ্গে সঙ্গে তা জানাতে পারেন।” যে বাড়ি বা ফ্ল্যাটে তাঁরা কাজ করেন, সেখানকার কোনও রক্ষী বা কর্মীর সন্দেহজনক আচরণ চোখে পড়লে তার উপরেও নজর রাখা দরকার বলে মন্তব্য করেন শৌর্যবাবু।
মহিলাদের প্রশিক্ষণ চলছে শিবিরে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
শ্রম দফতরের আর এক যুগ্ম-অধিকর্তা, ক্লাসের অন্যতম ব্যবস্থাপক প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি ঘরেই দৈনন্দিন জীবনে নানা যন্ত্রের ব্যবহারও বেড়েছে। সেগুলির সম্পর্কে এবং প্রাথমিক শুশ্রূষার নানা বিষয়ে পরিচারিকাদের সবিস্তার জানা জরুরি। পাশাপাশি, আক্রমণকারীকে মোকাবিলা করার পথও এই মহিলাদের জানা প্রয়োজন।”
শিবিরের এক শিক্ষার্থী কল্পনা পাণ্ডে বললেন, “তিন দিনের শিবিরের এটি দ্বিতীয় দিন। ঘণ্টা দেড়েক ক্লাস হয়। যোগ দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা সরকারের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে পাচ্ছেন।”
বৃহস্পতিবার শিবিরে গিয়ে দেখা গেল, ক্লাস নিচ্ছেন দক্ষিণ কলকাতার এক হাসপাতালের সিস্টার গোপা সাহা। লক্ষ্মী বিশ্বাস, বাসন্তী মজুমদার, সুপর্ণা বিশ্বাস-সহ আরও কিছু শিক্ষার্থী ক্লাসের পাঠ শুনছেন আগ্রহ নিয়ে। গোপাদেবী প্রশ্ন করলেন, ‘‘কাজ করতে করতে আচমকা হাত কেটে গেলে কী করবেন?’’ এক শিক্ষার্থীর উত্তর, ‘‘আমি সর্ষের তেল লাগাই।’’ আর এক জন বললেন, ‘‘কাটা জায়গায় চুনের প্রলেপ লাগিয়ে রাখি।’’ গোপার জবাব, “এ সব করে ক্ষতি হবে। কাটা জায়গায় বরফ দেবেন। না হলে ঠান্ডা জলে জায়গাটা ভিজিয়ে রাখবেন। বেশি কেটে গেলে হাত ঝুলিয়ে না রেখে তুলে রাখবেন।” ছ্যাঁকা লাগা হাত নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া পর্যন্ত কী ভাবে, গলায় ব্যান্ডেজের সঙ্গে তা ঝুলিয়ে রাখা দরকার, হাতেকলমে দেখিয়ে দিলেন এ দিনের শিক্ষিকা। জানালেন দেওয়ালে বিদ্যুৎ প্রবাহ হলে সঙ্গে সঙ্গে মেন সুইচ বন্ধ করা দরকার। এ ভাবেই এ দিনের শিবিরে শিক্ষার্থীরা পেলেন প্রতিদিনের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় আবশ্যিক কিছু পরামর্শ।
শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু জানান, “আর্থিক দিক থেকে দুর্বল মহিলাদের সার্বিক সচেতনতার লক্ষ্যে এমন শিবিরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাঁরা প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন, তাঁরা ঘনিষ্ঠদের শেখালে উপকৃতের সংখ্যাটা বাড়বে। এ মাসে সল্টলেক, গার্ডেনরিচ, টালা ও এন্টালিতে এমন আরও চারটি শিবির হওয়ার কথা রয়েছে।”
সুরক্ষার নানা পাঠের পাশাপাশি ব্যাঙ্ক আমানত খোলা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কেও মহিলাদের স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হচ্ছে এই শিবিরে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.