গানে লাইসেন্স-ফি শিল্পীদের বঞ্চনা বর্ষশেষে
চরমে শহরে
প্রাপ্য লাইসেন্স-ফি থেকে শিল্পীদের বঞ্চিত করার ক্ষেত্রে আজ বহু দিনই দেশে শীর্ষ স্থানের দখলদার ‘সংস্কৃতির শহর’ কলকাতা। ন্যায্য পাওনা থেকে সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকারদের বঞ্চিত করার প্রবণতায় এই শহরের থেকে বহু যোজন পিছিয়ে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই কিংবা বেঙ্গালুরু। আর বছর শেষের মুখে এই ডিসেম্বরেই সেই ফি-ফাঁকির পরিমাণ সব থেকে বেশি।
‘ইন্ডিয়ান পারফর্মিং রাইট্স সোসাইটি’র অভিযোগ, বছরের শেষ মাসে ‘পাবলিক পারফরমেন্স লাইসেন্স’ খাতে এক কোটি টাকারও বেশি আদায় হওয়ার কথা কলকাতায়। কিন্তু তার মধ্যে মার যায় অন্তত ৪০ শতাংশ টাকা। অর্থাৎ, শুধু এই মাসেই ৪০ লক্ষেরও বেশি প্রাপ্য টাকা থেকে বঞ্চিত হন তাঁরা। এ বিষয়ে রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সচিবকে এসএমএস করে প্রশ্ন করা হলেও, কোনও উত্তর মেলেনি।
সোসাইটির অভিযোগ, ডিসেম্বর মাস-সহ বছরভর যে-ভাবে টাকা খোয়াতে হয়, তার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে গত দেড় বছর ধরে আর্জি জানিয়েও সুরাহা হয়নি। অথচ সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগের জন্য বছর চারেক আগেই পদক্ষেপ করেছে তামিল- নাড়ু, ওড়িশা-সহ বিভিন্ন রাজ্য প্রশাসন।
২০০৭ সালে কপিরাইট আইন প্রয়োগের জন্য কেন্দ্র সব রাজ্যের মুখ্য সচিবদের নির্দেশ পাঠায়। তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা-সহ বিভিন্ন রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করে। কিন্তু সোসাইটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান অভিষেক বসুর দাবি, গত দেড় বছর ধরে রাজ্যের কাছে আর্জি জানিয়েও কাজের কাজ কিছু হয়নি। তিনি বলেন, “সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হলে, লাইসেন্স-ফি ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা কমবে। সচেতনতাও বাড়বে। কিন্তু এ রাজ্যে এখনও তা হয়নি। ফলে বড় মাপের লাইসেন্স-ফি ফাঁকি ঠেকাতে বাধ্য হয়েই আমরা আদালতের দ্বারস্থ হই। সমস্যা হল, তা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।”
সোসাইটির দাবি, বর্ষশেষের উৎসবমুখর কলকাতাতেই লাইসেন্স-ফি ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা তুঙ্গে পৌঁছয়। পার্ক স্ট্রিট-সহ শহরের বিভিন্ন রাজপথে তখন আলোর রোশনাই। কেক-পেস্ট্রির গন্ধে ম ম চারিদিক। সঙ্গে শহরের আনাচে-কানাচে বড়দিন, বর্ষশেষ ও বর্ষবরণের অসংখ্য অনুষ্ঠান। সেখানে বিভিন্ন ‘হিট-গান’ বাজে। তাই এই ডিসেম্বরেই ‘পাবলিক পারফরমেন্স লাইসেন্স’ বাবদ এক কোটি টাকার বেশি আদায় হওয়ার কথা। কিন্তু মার যায় কমপক্ষে তার ৪০ শতাংশ। কারণ আইন থাকলেও, তা কার্যকর করার সরকারি প্রয়াস প্রায় নেই বললেই চলে।
১৯৫৭ সালের কপিরাইট আইনের ৩৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী তৈরি হয় ‘ইন্ডিয়ান পারফর্মিং রাইট্স সোসাইটি’। ১৯৬৯ সালে তৈরি এই সোসাইটির মূল কাজ গায়ক, গীতিকার এবং সুরকারদের হয়ে কপিরাইট আইন মানা হচ্ছে কি না, তার উপর নজরদারি করা। বিভিন্ন অনুষ্ঠান-সহ শপিং মল, রেস্তোরাঁ, ডিস্কো, ক্লাব ইত্যাদিতে যে কোনও গান বাজানোর জন্য লাইসেন্স-ফি নেয় কেন্দ্রীয় সরকারের মানবসম্পদ মন্ত্রক অনুমোদিত এই সোসাইটি। লাইসেন্স-ফি বাবদ টাকা দেওয়ার আইনের আওতায় রয়েছে হাসপাতাল, চিকিৎসকের চেম্বার থেকে শুরু করে জিমন্যাসিয়াম, বিউটি পার্লার।
সোসাইটির হিসেব অনুযায়ী কলকাতা থেকে অন্তত ৬ কোটি টাকা লাইসেন্স-ফি বাবদ আদায় হওয়া উচিত। সেখানে আদায়ের পরিমাণ মেরেকেটে ৩ কোটি টাকা। অথচ মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, সব শহরেই আদায়ের পরিমাণ ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে। লাইসেন্স-ফি হিসেবে আদায় করা টাকা থেকে শিল্পীদের রয়্যালটি দেওয়া হয়। কিন্তু এ ধরনের ফাঁকির প্রবণতা বজায় রাখলে সেই টাকার অঙ্ক কখনই বড় হবে না বলে ক্ষোভ জানান অভিষেকবাবু।
এত দিন পর্যন্ত রয়্যালটি পাওয়ার ক্ষেত্রে সুরকার ও গীতিকাররা তুলনামূলক ভাবে বেশি মার খেতেন। কারণ রেকর্ড সংস্থার সঙ্গে তেমন কোনও চুক্তি না-করা থাকলে, এককালীন টাকার বাইরে রয়্যালটি দেওয়ার বিষয়টি রেকর্ড সংস্থার উপরে নির্ভর করত। চলতি বছরে কপিরাইট আইন সংশোধন হওয়ার পরে সমস্যার সমাধান হয়। এখন যে-কোনও গানের ক্ষেত্রে প্রথমেই রয়েছে গীতিকার ও সুরকারদের অধিকার। লাইসেন্স-ফি ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা ছাড়াও রয়েছে সচেতনতার অভাব। খোদ শিল্পীরাই জানেন না, সোসাইটি-র সদস্য হলে নিজেদের সৃষ্টির মালিকানা বজায় রাখা ও তার থেকে আয় করা সম্ভব। নতুন প্রজন্ম অবশ্য কিছুটা সচেতন। যেমন প্রয়াত গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে পিয়াল বন্দ্যোপাধ্যায় বা নচিকেতা ঘোষের ছেলে সুপর্ণকান্তি ঘোষ সোসাইটির সদস্য হয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.