|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
ভারতীয় বামপন্থার দিকনির্দেশ |
তাপস সিংহ |
মার্কসিজম অ্যান্ড দি ইন্ডিয়ান লেফট/ফ্রম ‘ইন্টারপ্রেটিং’ ইন্ডিয়া টু ‘চেঞ্জিং’ ইট,
সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্বালোক পাবলিকেশন, ৪০০.০০ |
তিন দশক জুড়ে ছড়ানো মননের চর্চা! অথচ, এখনও কী ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক। গোটা দেশ তথা পশ্চিমবঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে এই চর্চা অত্যন্ত জরুরি ছিল। থাকবেও। বস্তুত, সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এই কাজটি প্রশ্নাতীত দক্ষতার সঙ্গে করে থাকেন। আরও এক বার তার প্রমাণ মিলল সুমন্তবাবুর সাম্প্রতিকতম প্রবন্ধ সংকলন থেকে। মার্কসবাদ, তার প্রয়োগ, ভারতে বামপন্থী আন্দোলন, পাশাপাশি নানা দিক থেকে অতি বামপন্থী আন্দোলনকে দেখা, এমনকী, অতি সাম্প্রতিক ‘পরিবর্তন’ অথবা ‘প্রত্যাবর্তন’ অনায়াস গতায়াতে এই গোটা পরিপ্রেক্ষিতকে তুলে এনেছেন সুমন্ত।
তিন দশক কালের মোট তিরিশটি প্রবন্ধের এই সংকলনের প্রাসঙ্গিকতা কোথায়? তার আগে বলা দরকার, দেরাদুন নিবাসী সমাজবিজ্ঞানীর এই গ্রন্থ দু’টি পর্যায়ে বিভক্ত। প্রথম পর্যায়ের মোট ন’টি প্রবন্ধের মূল শিরোনাম ‘মার্কসিজম অ্যান্ড সোস্যালিজম’। দ্বিতীয় পর্যায়ের নাম ‘দি ইন্ডিয়ান লেফট’। এই তিরিশটি প্রবন্ধই প্রকাশিত হয় ‘ইকনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি’ (ই পি ডব্লিউ) এবং ‘সেমিনার’ পত্রিকায়। প্রবন্ধগুলির প্রকাশকাল ১৯৮২-র জানুয়ারি থেকে ২০১১-র জুন।
১৯৮০-তে প্রকাশিত তাঁর ইন দি ওয়েক অব নকশালবাড়ি গ্রন্থে আন্দোলনের যে রূপরেখার হদিশ তিনি দিয়েছিলেন, সাম্প্রতিক এই সংকলনের একাধিক প্রবন্ধে তা ভিন্নতর মাত্রা পেয়েছে মাওবাদী আন্দোলনের কথায়।
এই পশ্চিমবঙ্গে বহু প্রতীক্ষিত সেই ‘পরিবর্তন’-এর পরে যে প্রবন্ধটি ই পি ডব্লিউ পত্রিকায় লিখেছিলেন সুমন্ত, সেটি শুরু হয়েছে চমৎকার ভাবে। তিনি লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গের ভোটারেরা চিরপরিচিত কথাটিকে সম্পূর্ণ উল্টে দিয়েছেন। ধিক্কৃত সি পি এমকে প্রত্যাখ্যান করে অত্যন্ত সন্দেহজনক (হাইলি ডুবিয়াস) তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতায় এনে তাঁরা বার্তা দিয়েছেন: ‘আ হাফ নোন ডেভিল ইজ বেটার দ্যান আ ওয়েল-নোন ওয়ান।’
কিন্তু ভারতের বামপন্থীদের জন্য কী বার্তা দিয়েছেন এই সমাজবিজ্ঞানী? বলেছেন, অবিলম্বে খোলনলচে বদলাতে হবে তাঁদের। কৃষক, শিল্পশ্রমিক এবং সমাজের নানা অবহেলিত অংশের সঙ্গে এখানকার বামপন্থীদের সংযোগ দীর্ঘ দিন ধরে বিচ্ছিন্ন। তা পুনঃস্থাপন করতে হবে। ফেরাতে হবে বিশ্বাসযোগ্যতা। ভারতের নতুন বামপন্থীরা এক বৃহত্তর মঞ্চ তৈরি করতে পারেন। সংসদীয় বাম দলগুলির (এই দলগুলি অবশ্য বর্তমান বামফ্রন্টে সামিল ছোট দলগুলি, যারা সি পি এমের বিরুদ্ধে সরব।) পাশাপাশি মূল ধারার রাজনীতির বাইরের নানা আন্দোলনের (যেমন, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন, পস্কো-বিরোধী আন্দোলন) সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারেন। তৈরি করতে পারেন এক বৃহত্তর মঞ্চ। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন সামাজিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার আন্দোলনের দিকে, মাওবাদীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও চালাতে পারেন। এই সব বিভিন্ন শক্তির সঙ্গে মিলে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের এক বিকল্প পন্থারও সন্ধান দিতে পারেন এই বামপন্থীরা।
মার্কসবাদ ও সমাজবাদের আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত থেকে ভারতীয় বামপন্থার নতুন দিকনির্দেশ বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির নিরিখে সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই গ্রন্থ এক অমূল্য দলিল হয়ে রইল! |
|
|
|
|
|