|
|
|
|
টুকরো করে পোড়ানো হয় বাগান মালিকের দেহ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি |
জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়নি তিনসুকিয়ার চা বাগান মালিক মৃদুলকুমার ভট্টাচার্যকে।
৭০ বছরের মৃদুলবাবুকে খুন করার পর দেহটি কাটা হয়েছিল টুকরো টুকরো করে। সেই দেহাংশ আগুনে ছুড়ে ফেলা হয়। একই অবস্থা করা হয় মৃদুলবাবুর স্ত্রী রীতাদেবীরও (৬৬)। তবে তাঁর দেহটিকে আর কাটা হয়নি। তদন্তকারী অফিসাররা বলছেন, ওই দম্পতির পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া দেহাংশগুলিকেও পায়ের তলায় পিষেছিল খুনিরা। শ্রমিক অসন্তোষের জেরে কুনাপথারের ওই বাগান মালিকের এমন বীভৎস পরিণতির কথা জানতে পেরে শিউরে উঠেছে পুলিশও। সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
হত্যাকাণ্ডের দু’দিন কেটে যাওয়ার পরেও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। পুলিশ সুপার পি পি সিংহ বলেছেন, “বেশ কয়েক জন আক্রমণকারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সময় হলেই তাদের গ্রেফতার করা হবে।” যদিও, কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে ইতিমধ্যেই হুমকি দিয়ে রেখেছে একটি সংগঠন। পুলিশের দাবি, ঘটনার দিন এক ব্যক্তি পেট্রোল এনে উত্তেজিত শ্রমিকদের হাতে তুলে দিয়েছিল। তার খোঁজ চলছে। সহকারী ম্যানেজার টি আহমেদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তও। মৃতদেহ শনাক্ত করতে গত কালই কলকাতা থেকে এসেছেন নিহত দম্পতির ছেলে অত্রি ভট্টাচার্য। এখন অবশ্য ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া শনাক্তকরণের কোনও উপায় নেই। ঘটনার দিন মায়ের ফোন পেয়েছিল অত্রিবাবু। আতঙ্কিত রীতাদেবী বলেছিলেন, “ওরা আমাদের ঘিরে ফেলেছে।” তার পরেই লাইন কেটে গিয়েছিল। আর যোগাযোগ করতে পারেননি অত্রি।
বাগানে জনরোষ আগেও দেখেছে অসম। ২০০৫ সালে গোলাঘাট জেলার গোবিন্দপুর চা বাগানে বেতন না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পুড়িয়ে মেরেছিলেন বর্তমান কংগ্রেস বিধায়ক বিস্মিতা গগৈয়ের স্বামী রূপক গগৈকে। মামলা যায় সিআইডির হাতে। আত্মসমর্পণ করেছিলেন প্রায় আড়াইশো বাগান শ্রমিক। এঁদের মধ্যে ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল ৭৯ জনের বিরুদ্ধে। মামলা চলাকালীন ৯ জনের মৃত্যু হয়। চার্জশিট জমা পড়ে ৭০ জনের বিরুদ্ধে। চলতি বছরের জুন মাসে গোলাঘাট দায়রা আদালত ওই ঘটনায় চার মহিলা-সহ ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। কিন্তু তিনসুকিয়ার ঘটনার ক্ষেত্রে অসম চা জনজাতি ছাত্র সংস্থা (আটকা) হুমকি দিয়েছে ‘অত্যাচারী মালিককে হত্যার কারণে এক জন শ্রমিককে গ্রেফতার করা হলেও পরিস্থিতি খারাপ হবে।’ ঘটনার দিন সহস্রাধিক সশস্ত্র শ্রমিক পুলিশ বা দমকলকে বাংলো অবধি পৌঁছাতেই দেয়নি। গত কালও এক দল শ্রমিক বাগানের কারখানায় আগুন লাগাবার চেষ্টা করে। এখনও পরিস্থিতি উত্তপ্ত।
শ্রমিকদের এমন হিংস্র চেহারা ও হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতাই পুলিশকে ভাবাচ্ছে। চিন্তায় পড়েছেন চা উৎপাদকেরাও। অসম টি প্লান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রাজীব বরুয়া বলেন, “মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে শ্রমিকরা তাঁদের সঙ্ঘ বা ইউনিয়নের নেতাদের জানাতে পারতেন। ধর্মঘট-বিক্ষোভ করতে পারতেন। কিন্তু যে বর্বরতার সঙ্গে বাগান মালিককে হত্যা করা হয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না।” অসম চা মজদুর সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক দিলেশ্বর তাঁতি বলেন, “শ্রমিকরা আমাদের বলতে পারতেন। এই হত্যাকাণ্ড সমর্থনযোগ্য নয়।” কিন্তু আটকা নেতৃত্বের অভিযোগ, চা মজদুর সঙ্ঘের স্থানীয় নেতৃত্বের ব্যর্থতার ফলেই এমন ঘটনা ঘটেছে। মৃদুলবাবুর ‘অমানবিক অত্যাচার’ শ্রমিকদের ক্ষিপ্ত করে তুলেছিল বলে তাদের দাবি। অনেকের বক্তব্য, শাসকদলের ভোট ব্যাঙ্ক বলে পরিচিত এই এলাকার চা শ্রমিকদের গ্রেফতার করা হলে পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার উপরে সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তাই পুলিশ-প্রশাসন সাবধানে পা ফেলছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে সরকারের তরফে বলা হয়েছে, তদন্তে কোনও চাপ সৃষ্টি করা হবে না। |
|
|
|
|
|