সম্পাদক সমীপেষু ...
‘লাথিই মারো আর যা-ই করো’
এক টানেতে’ (২৫-১১) শীর্ষক গৌতম চক্রবর্তীর নিবন্ধটি পড়ে একটা ফুরফুরে নেশার আমেজ অনুভব করলাম। নিবন্ধের এক জায়গায় বলা হয়েছে, “গুলিখোর বাঙালি অবশ্য সাহেবদের ‘থিয়োরি’ বিনা বাক্যে মেনে নেয়নি। আফিমের গুলিই তখন সবচেয়ে এলিট নেশা।” এ প্রসঙ্গে দু’চার কথা বলতে চাই। ‘ছিটে’ টেনে যাঁরা নেশা করেন তাঁরাই গুলিখোর। ‘গুলি’-র আরেক নাম ‘ছিটে’। অমন নেশার জিনিস যেমন-তেমন করে বানানো যায় না। ‘ছিটে’ বানানোর পাকপ্রণালী আছে। আগে পেয়ারাপাতা কুচিকুচি করে কেটে ভাজনা খোলায় ভেজে নিতে হয়। তার পর একটা হাঁড়িতে জলে আফিম গুলে হাঁড়ি উনুনে চাপানো হয়। আফিমজল যখন ফুটে উঠবে তখন ভাজা পেয়ারাপাতা ফেলে নেড়েচেড়ে মাখা-মাখা হলে নামিয়ে নিতে হবে। তার পর ছোট ছোট গুলি বানিয়ে নিতে হবে। একেকটা ‘গুলি’ একেকটা ‘ছিটে’। ‘ছিটে’ টানতে গুলিখোরেরা আড্ডায় আসেন। আড্ডায় সকল গুলিখোরের সামনে থাকে একটা কলসির কানা, তার উপর একটা থেলো হুঁকো, নলচেটি ছোট, নলটা খুব লম্বা, নলচের উপর একটা ভাঙা কলকের বাঁট। গুলিখোরেরা সেই ভাঙা কলকের উপর ‘ছিটা’ বসিয়ে চিমটা করে আঙরার কয়লা তার উপর দেয়। এর পর নল দিয়ে টেনে সেই ধোঁয়ার সবটুকু গিলে নেয়। সামনে মালসায় থাকে গুড়ের জল। তাতে এক টুকরো সোলা ফেলা থাকে। ধোঁয়া টেনেই গুলিখোরেরা চাট হিসাবে সেই সোলাখানা চুষে নেয়। পাছে ধোঁয়া বের হয়ে যায়। সে জন্য গুলিখোরেরা অতি আস্তে আস্তে কথা কয়, হাত-পা নেড়ে কথা কওয়ার কাজ সারে।
সাধারণত গুলিখোরের সর্বাঙ্গের শিরা দেখা যায়। চোখ ঠিকরে পড়ার দাখিল। চোখ মেললে নেশা ছুটে যাওয়ার ভয়ে গুলিখোর প্রায়ই চোখ বুজে থাকে। গোড়ালি উঁচু করে খুব সাবধানে হাঁটে, যেন কোথাও হোঁচট লেগে নেশাটি বরবাদ না-হয়। গুলিখোরেরা মাতালকে দারুণ ভয় পায়। মাতালকে প্রাণপণে এড়িয়ে চলে। এ প্রসঙ্গে রস-সাহিত্যিক ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের গল্প স্মর্তব্য। ত্রৈলোক্যনাথের গল্পের এক জন গুলিখোর আড্ডার প্রত্যেক বন্ধুকে সাদা চোখোদের কখনও বিশ্বাস করতে বারণ করেছেন এবং তৎসহ বলেছেন, ‘আর বিশ্বাস করিও না এই পেশাদার মাতালদের। মন তাদের সাদা বটে কিন্তু কখন কী ভাবে থাকে, তার ঠিক নাই। সাত ঘাটের জল এক করিয়া তুমি চারিটি পয়সা জোগাড় করিলে, আড্ডায় আসিয়া সেই চারি পয়সায় ছিটে টানিলে, নেশাটি করিয়া তুমি আড্ডা হইতে বাহির হইলে, আর হয়তো কোথা হইতে একটা মাতাল আসিয়া তোমার গায়ের উপর টলিয়া পড়িল! তোমার নেশাটি চটিয়া গেল। শীতকাল, মেঘ করিয়াছে, গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়িতেছে, ফুরফুর করিয়া বাতাস হইতেছে! সহজেই নেশাটি বজায় রাখা ভার, তার উপর কোথা হইতে একটা মাতাল আসিয়া তোমার গায়ে হড়হড় করিয়া বমি করিয়া দিল। তোমার নেশাটির দফা একেবারে রফা হইয়া গেল। পেশাদার মাতালেরা এইরূপ লোকের মর্মান্তিক করে।’
সবশেষে একটা গুলিখোরের গালগল্প। কর্তা গুলিখোর। গিন্নির সঙ্গে ঝগড়াবিবাদ হয়েছে। কর্তা সাব্যস্ত করলেন, এ-জীবন আর রাখবেন না, আত্মহত্যা করবেন। গিন্নি জল আনতে পুকুরে গেছেন। হাতখানেক সুতো নিয়ে গুলিখোর কর্তা গেলেন খেতে। গলায় এক পাক সুতো জড়িয়ে নটে গাছের সঙ্গে বেঁধে গুলিখোর কর্তা চোখ বুজে জিভ বের করে চুপচাপ ‘আত্মহত্যা’ করে বসে রইলেন।
পুকুর থেকে ফিরে এসে গিন্নি দেখলেন, কর্তা ঘরে নেই। গেলেন কোথায়? খুঁজে বের করতে সময় লাগল না। গিন্নি এসে কর্তার পিঠে দমাদম লাথি মারতে লাগলেন। বিস্তর লাথি খাওয়ার পর গুলিখোর কর্তা চোখ না-মেলে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন লাথিই মারো আর যা-ই করো, তোমার কর্তা মরে গেছে।

গ্রন্থঋণ: রহস্যালাপ, ইন্দ্রমিত্র
নীতি ও নৈতিকতা
নীতি ও নৈতিকতার মধ্যে তুলনা বহু কাল ধরে চর্চিত বিষয়। অ্যালিস্টার কুকের আউট হওয়ার পর ধোনি তাঁকে ফিরিয়ে না-এনে নীতিগত ভাবে ভুল কিছু করেননি। কিন্তু নৈতিকতার স্তর থেকে তাঁর পতন হয়েছে। প্রসঙ্গত, গোল্ডেন জুবিলি টেস্টে ওয়াংখেড়েতে তদানীন্তন অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান টেলরের ৫১ রানের মাথায় স্লিপে কট হওয়ার আবেদনে আম্পায়ার আউট ঘোষণা করেন। কিন্তু গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথ তাঁকে ফিরিয়ে আনেন। কারণ, তাঁর মতে বল ব্যাটে লাগেনি। টেলর ফিরে আসেন এবং ১৫১ রান করেন। ভারত হারে। খেলার এবং বিশ্বনাথের এবং ভারতীয় দলের নৈতিকতা রক্ষিত হয়।
ধোনি আর বিশ্বনাথের মধ্যে পরিস্থিতির পার্থক্য হচ্ছে, কুক আউট ছিলেন এবং টেলর আউট ছিলেন না। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন, খেলাও একটা যুদ্ধ, কিন্তু এ যুদ্ধ কি প্রাণঘাতী দেশজয়ের যুদ্ধ? এ তো আনন্দ উৎপাদক একটা মানসিক উপাদান মাত্র। যে বলের আঘাত এড়াবার জন্য কুক পা সরালেন, সেই বলে তিনি আউট। সেই আউটকেও স্বীকার করে নিয়ে আমায় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতে হবে? তা হলে মানসিকতায় আমিই পঙ্গু। যা আইনসঙ্গত, তা সব সময় ন্যায়সঙ্গত নাও হতে পারে। আবার যা ন্যায়সঙ্গত, তা সব সময় আইনসঙ্গত নাও হতে পারে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.