বাবা জ্ঞান দিয়ো না
পাড়ার নাতাশার জন্যও ব্র্যান্ড চাই
গার্লফ্রেন্ডকে জন্মদিনে কী দেবেন ভাবছেন? চাপ নেই। একটা ভাল ব্র্যান্ডেড ঘড়ি। না হলে গেস-এর জিন্স। বা বিদেশি ব্র্যান্ডের হ্যান্ডব্যাগ।
ভ্যালেন্টাইন্স ডে গিফট? সেটা নিয়েই বা চিন্তা করে সাত-তাড়াতাড়ি মুখে বলিরেখা বানাবেন কেন? চলে যান কাছের শপিং মলে। কিনে ফেলুন ভাল বিদেশি পারফিউম। ইভস সেন্ট লরাঁ, ক্যালভিন ক্লাইন, দাভিদফসব তো চোখের সামনে থরে থরে সাজানো।
জন্মদিন হোক বা বিয়ের তত্ত্ব, বিবাহবার্ষিকী বা ভাইফোঁটা, বিশেষ ‘তাকে’ সারপ্রাইজ গিফট দেওয়া হোক বা হঠাৎ মন খারাপ কাটাতে নিজেকে নিজেরই দেওয়া উপহারবাঙালির পৃথিবী এখন ব্র্যান্ডময়।
বিশ্বাস হচ্ছে না? চারপাশটা এক বার ভাল করে দেখে নিলেই অবিশ্বাস কেটে যাবে। পুজোর কেনাকাটা করতে এখন উচ্চবিত্ত তো বটেই, এমনকী মধ্যবিত্ত বাঙালি জেন ওয়াই-ও ছুটছে শপিং মলে। আঠেরো থেকে তিরিশযে কারও ওয়ার্ডরোব খুললেই ধসের মতো নেমে আসবে ব্র্যান্ডেড পোশাকের জলস্রোত।
ব্র্যান্ডেড জামা ছাড়া কেতা মারা জমবে নাকি? নিউমার্কেট থেকে কেনা অখ্যাত কম্পানির জিন্স আর পাড়ার ‘ফ্যাশন বুটিক’ থেকে কেনা শার্টধুস! পাড়ার হার্টথ্রব নাতাশা তাতে পটবে নাকি? দু’বার তো দূরের কথা, এক বারও ঘুরে দেখবে কি না সন্দেহ। তাই ভরসা এখন লিভাইসের জিন্স। সঙ্গে আডিডাস বা নাইকি-র জুতো। শার্টটা প্রোভোগ হোক বা অ্যারোব্র্যান্ডের নামটা যেন এক ঝলকেই চোখে পড়ে। হাতে একটা রাডো-র ঘড়ি। ব্যাস। নাতাশা কেন, ওর নাক-উঁচু বন্ধুগুলোও আর চোখ ফেরাতে পারবে না।
কেন এই ব্র্যান্ড বিপ্লব? উত্তরটা টু প্লাস টু ইকুয়াল্স টু ফোরের মতোই সহজ। গত পাঁচ-সাত বছর ধরে কলকাতা কাঁপাচ্ছে যে শপিং মলগুলো, তার যে-কোনও একটায় মিনিট দশেক ঘুরলেই বুঝে যাবেন। চোখের সামনে সাজানো বিদেশি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, শার্ট, জুতো, জিন্স, ব্যাগ, বেল্ট। দিনে দিনে দোকানের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
যে সব ব্র্যান্ডের নাম আগে দেখা যেত বিদেশি ম্যাগাজিনের পাতায়, সে সব এখন হাতের মুঠোয়। আর ঝকঝকে শপিং মলের হাতছানি ছেড়ে কে যাবে নিউমার্কেটের আলো-আঁধারির মধ্যে! টাকা? ধুর। এক হাজার টাকা বেশি দিয়ে যদি বিদেশি ব্র্যান্ড গায়ে চড়ানো যায়, মন্দ কী?
পকেটে টান পড়বে না হয় ক’টা দিন। কিন্তু জিনিসটা তো টিকবে বছরের পর বছর। অনামী ঘড়ি বা জিনিসের মেয়াদ তো হাতে-গোনা। কলেজপড়ুয়া ঋষির কথায়, “দু’তিন মাস বাইরে খাওয়াদাওয়া কমিয়ে পকেট-মানি জমালেই একটা ভাল শার্টের টাকা উঠে আসে। হাতের কাছে ভাল ব্র্যান্ডের জিনিস থাকতে ক’টা টাকা বাঁচানোর জন্য কেন কমদামি জিনিস কিনে ঠকব?”
ব্র্যান্ডের রমরমা বেড়ে যাওয়ার আর একটা বড় কারণ অনলাইন শপিং এখন মধ্যবিত্ত বাঙালিরও ‘বাঁয়ে হাত কা খেল’। যে ব্র্যান্ডের দোকান শহরে এখনও খোলেনি, বিছানায় কফি মাগ হাতেই ঘুরে দেখতে পারবেন সে সব দোকান। মাউসের কয়েকটা ক্লিক, আর দিন পাঁচেকের মধ্যে বাড়িতে বসেই পেয়ে যাবেন পছন্দের জিনিস।
টপ-টা একটু বেশি টাইট? নো প্রবলেম। জিনিস ফেরত পাঠাও, দিন কয়েকের মধ্যে ঠিকঠাক সাইজের টপ চলে আসবে। দিনের যে সময়টুকু জেগে থাকেন, তার নব্বই শতাংশই যাঁদের অফিসে কেটে যায়, তাঁদের কাছে অনলাইন শপিং জিন্দাবাদ। আর অনলাইন মানেই ব্র্যান্ডেড জিনিস। তা জামাকাপড় হোক বা বাড়ির আসবাব।
মধ্যবিত্ত বাঙালির লাইফস্টাইলও এখন অন্য রকম। ছুটির দিনে বাড়িতে পাত পেড়ে খাওয়াটা বড্ড সেকেলে। সারা সপ্তাহ অফিস করে ছুটির দিন রান্নাঘরে ঢোকার কোনও মানে আছে? তার চেয়ে ছোট্ট একটা ড্রাইভ, রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া করে টুকটাক শপিং।
এ ভাবেই যাঁদের দিন কাটে, তাঁরা কি আর পাড়ার দোকান থেকে জিনিস কিনবেন? দেড়শো টাকা দিয়ে কেনা শার্ট পরে কে আর বান্ধবীকে নিয়ে ঢুকবে পিৎজা হাটে? যে বাঙালি এখন এক সপ্তাহ ছুটি পেলে পুরী বা দিঘা ভুলে ছোটে ব্যাঙ্কক বা সিঙ্গাপুর, ব্র্যান্ডের ট্যাগ ছাড়া তাঁদের পোষাবে কেন? ফলে বদলেছে সময়, বদলাচ্ছে বাজারের ঠিকানাও।
বাঙালির কাছে এখন আকাশটাই শেষ সীমানা!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.