‘স্বেচ্ছাদানের’ আড়ালে সক্রিয় কিডনি পাচারচক্র
কিডনি দেওয়ার আবেদনের আড়ালে পাচার চক্র সক্রিয় কি না, সন্দেহ দানা বাঁধছে চাঁচলের গ্রামে। কিডনি দানের ক্ষেত্রে আবাসিক শংসাপত্র জরুরি বলে অক্টোবর মাসে নির্দেশ দেয় রাজ্য। চাঁচলের মহকুমাশাসকের দফতরে একই দিনে জমা পড়া এই ধরনের তিনটি আবেদনপত্রে অসঙ্গতি মেলাতেই ‘স্বেচ্ছাদানের’ আড়ালে পাচার চক্র সক্রিয় কি না, প্রশ্ন উঠেছে।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, আবেদনকারীরা পৃথক এলাকার হলেও আবেদনপত্রগুলি একজনই লিখেছেন বলে সন্দেহ। সব ক’টি আবেদনপত্রের বয়ানও একই। তাতে কিডনি গ্রহীতার পুরো নাম-ঠিকানাও নেই। এই সব কারণেই পাচার চক্রের সন্দেহ জোরদার হয়েছে। বিডিওকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত। পুলিশকেও পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। পলাশবাবু বলেন, “আবেদনপত্রগুলিতে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। কিডনি পাচার চক্র সক্রিয় বলেই আশঙ্কা। আবেদনকারীদের জেরা করা হবে।”
গত অক্টোবরে মাসে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশিকায় জানিয়েছে, কিডনি দেওয়ার জন্য আবাসিক শংসাপত্র জরুরি। তাতে উল্লেখ থাকতে হবে যে কিডনি দেওয়ার জন্যই সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী আবাসিক শংসাপত্র চাইছেন। ওই শংসাপত্র না থাকলে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল কারও কিডনি লেনদেন করতে পারবে না। সেই মতো চাঁচলের মহকুমাশাসকের দফতরে আবাসিক শংসাপত্র চেয়ে চিঠি দেন দেবীগঞ্জের বলো দাস, নদিসিক এলাকার নাসিমা বিবি ও খুরিয়ালের বিলকিস বিবি। বলো দাস লিখেছেন, তিনি মেরাজ আনসারির বাড়িতে কাজ করেন। অসুস্থ মেরাজকে কিডনি দিতে চান বলো। নাসিমা বিবিও একই ভাবে তাঁর মনিব বসন্ত কুমার শর্মাকে কিডনি দিতে চান। আর বিলকিস কিডনি দিতে চান মাসতুতো বোন গুলিয়া বিবিকে।
বলো দাস বলেন, “চিঠিটা একজন লিখে সই করিয়ে নিয়েছিল। আমি কিডনি দিতে রাজি। একজনের উপকার হলে ক্ষতি কী?” কিন্তু, যাঁকে কিডনি দেবেন, সেই মেরাজ আনসারির বাড়ি কোথায়? প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলোবাবুর উত্তর, “এত কথা বলতে পারব না।” নাসিমা বিবির স্বামী আব্দুল রশিদ পেশায় দিনমজুর। তিনিও বলেন, “কিডনি যাঁকেই দিই না কেন আপনার কী?” তৃতীয় আবেদনকারী বিলকিস বেগমকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বিন্দোল পঞ্চায়েত এলাকায় এক সময় কিডনি পাচারের ঘটনা নজরে এসেছিল। স্থানীয় জালিপাড়ার ১০ জনেরও বেশি বাসিন্দা ১৯৯৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কিডনি বিক্রি করেছেন। টাকার প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় পাচারকারীরাই তাঁদের কিডনি বিক্রি করাতে বাধ্য করিয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। এই পর্বে বেশ কয়েকজন গ্রেফতারও হন। বিন্দোল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মনসুর আলি বলেন, “বাসিন্দাদের দারিদ্রের সুযোগে কিডনি পাচারকারীরা সক্রিয় হয়েছিল। পুলিশ ও প্রশাসনিক উদ্যোগে তা ঠেকানো গিয়েছে।” এ ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প। পাশাপাশি বাসিন্দাদের সচেতন করার কাজও হয়েছে।
চাঁচলেও দারিদ্রকে হাতিয়ার করেই কিডনি পাচার চক্র সক্রিয় হচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। বাসিন্দাদের অভিযোগ, মহকুমাশাসক তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরে এক সপ্তাহ কেটে গেলেও আবেদনকারীদের জেরা করতে কোনও অফিসার আসেননি। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের একাংশও পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেছেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পুলিশ কী ভাবে তদন্ত করবে? তবুও পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ওই গ্রামগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”
এলাকাটি মকদমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আওতায় রয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান ওবেইদুল্লা আহমেদ চৌধুরী অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে মালদহের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিধান মিশ্রের আশ্বাস, “সকলে মিলে ওই চক্রটিকে প্রতিরোধ করতে হবে।”

সহ প্রতিবেদন: গৌর আচার্য



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.