তৃণমূলের ‘অপশাসনে’র প্রতিবাদে মিছিল করছিল সিপিএম। সেই মিছিলকে কেন্দ্র করে শনিবার দুপুরে তেতে উঠল কাঁচড়াপাড়ার বাঘমোড় এলাকা। সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূলের লোকজনের তুমুল সংঘর্ষে জখম হলেন দু’পক্ষের ২২ জন। তার মধ্যে রয়েছেন প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ তড়িৎ তোপদারও। তাঁর গাড়ি, একটি অ্যাম্বুল্যান্স, একটি লরি এবং কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর চালানো হয়। গোলমালের মধ্যে পড়ে দু’টি শিশুও জখম হয়েছে।
পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনলেও এলাকা থমথমে ছিল বিকেল পর্যন্ত। ঘটনার প্রতিবাদে আজ, রবিবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে সিপিএম ধিক্কার জানানো এবং পথসভা করার কর্মসূচি নিয়েছে। দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “চারটে পদযাত্রা ছিল। কাঁচরাপাড়ায় মিছিল শুরুর সময়েই হামলা হয়। তড়িৎ তোপদারের গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। এটা গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে ধরার জন্য স্বৈরতন্ত্রের আক্রমণ। আমরা এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা করছি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে কারও সভা, মিছিল করার অধিকার আছে। সেই অধিকার কেড়ে নিতেই এই হামলা।” |
সংঘর্ষে উল্টে যাওয়া অ্যাম্বুল্যান্স। —নিজস্ব চিত্র
|
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বীজপুরের তৃণমূল বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় বলেন, “হার্মাদদের নিয়ে গণতন্ত্রের নমুনা দেখাল সিপিএম। গৌতম দেবের নির্দেশে মিছিলের নামে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে, দোকানপাট, এমনকী অ্যাম্বুল্যান্সও ভাঙচুর করে দেখাল হার্মাদ বাহিনী।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ কাঁচরাপাড়া স্টেশন চত্বর থেকে তড়িৎ তোপদার এবং সিপিএমের জেলা স্তরের নেতা নেপালদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে কয়েকশো সিপিএম কর্মী-সমর্থক মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ব্যারাকপুরে। কিন্তু কয়েক কিলোমিটার এগোতেই বাঘমোড়ে ওই গোলমাল শুরু হয়ে যায়। দু’পক্ষই পরস্পরের উপরে লাঠি, ইট নিয়ে চড়াও হয়। স্থানীয় লোকজন পালাতে থাকেন। তড়িৎবাবু ইটের ঘায়ে জখম হন। জখমদের মধ্যে ৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
তৃণমূলের অভিযোগ, গোলমাল প্রথমে সিপিএমই শুরু করে। কয়েক কিলোমিটার আসার মধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি, দলীয় ফেস্টুন ছিঁড়ে দেয় তারা। তাদের পাঁচটি কার্যালয়েও ভাঙচুর চালানো হয়। পক্ষান্তরে গোলমালের জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করেছে সিপিএম। তাদের দাবি, বাঘমোড়ে শুভ্রাংশু রায়ের অনুগামীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মিছিল আটকে এক ঘণ্টা ধরে হামলা চালায়। তড়িৎবাবু বলেন, “শিল্পাঞ্চলে আমার উপরে হামলা হতে পারে, এটা ভাবতেই পারছি না। এটা গুণ্ডামি চলছে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, সিপিএমের ওই এলাকায় এ দিন মিছিল করার অনুমতি ছিল না। এডিসিপি (ব্যারাকপুর) শুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “কংগ্রেসের মিছিল থাকায় একই রাস্তায় সিপিএমকে মিছিলের অনুমতি দেওয়া যায়নি। ভাঙচুরের যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা কারা ঘটিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
এ দিন গোলমালের পরে কাঁচরাপাড়ায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে সিপিএমের মিছিলটি কাঁচরাপাড়ার তেঁতুলতলা থেকে শুরু হলেও নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে শ্যামনগরে পুলিশ তা থামিয়ে দেয়। এ দিকে, ১২টা নাগাদ বরাহনগর থেকে শুরু হওয়া কংগ্রেসের মিছিল সাড়ে ১২টা নাগাদ বীজপুরে পৌঁছয়। সেখানে চার কংগ্রেস কর্মীকে মারধর এবং তাঁদের মোটরবাইক কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। |