সংস্কৃতি যেখানে যেমন

নাট্যোদ্যোগ
গত ১৬ ডিসেম্বর ২০১২ স্থানীয় দীনবন্ধু মঞ্চে শিলিগুড়ি বলাকা নাট্যগোষ্ঠী তাঁদের ৩৩ বর্ষে নিবেদন করল দুটি ছোট নাটক। রবীন্দ্র শ্রদ্ধার্ঘ্য, ছোট গল্প অবলম্বনে নাটক ‘নিশীথে’, নাট্যরূপ সঞ্জীব গোস্বামী এবং সদ্য প্রয়াত নাট্যকার মোহিত চট্টোপাধ্যায় স্মরণে নাটক ‘ঢিসুম-ঢিসুম’। নির্দেশনা কল্যাণ দাশগুপ্ত। দিনের আলোয় আমাদের প্রকৃত স্বরূপ অনেক কঠিন আবরণের আড়ালে আত্মগোপন করে থাকে। মনের সেই কঠিন আবরণটুকু ছিন্নভিন্ন হয়ে খসে পড়ে ‘নিশীথের তন্দ্রাহারা’ নিঃসঙ্গ মুহূর্তের একাকীত্বে। মোহজাল ছিন্ন করে আমরা তখন নিখাদ সত্যের মুখোমুখি। তাই অনুশোচনা আর আত্ববিলাপের, চোখের জলে সমস্ত আবীলতাকে ধুয়ে মুছে আবার বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টার নামই তো জীবন। এমনই এক প্রেম-পীড়ন আর অনুশোচনার অনন্য কাহিনী ‘নিশীথে’। রবীন্দ্র-নাটক কুশীলবদের যথাযথ অভিনয়ে এক অন্য মাত্রা পায়। বিশেষ করে অনুরাধা চরিত্রে যুথিকা নন্দীর অভিনয় নাটককে প্রাণবন্ত করে তোলে। দক্ষিণারঞ্জন-বিমান দাশগুপ্ত এবং মনোরমা-অলোকা বড়াল চরিত্রায়ন নাটকে অন্য মাত্রা যোগ করে। এ ছাড়া স্মৃতিরেখা গঙ্গোপাধ্যায়, উত্তম দাস, পার্থ ধর যথাযথ। নাটকে সংগীত এক অন্য মাত্রা যোগ করে (সঙ্গীতে মৌকনা মুখোপাধ্যায় এবং অভিষেক পাল) রবীন্দ্র নাটক হয়ে ওঠে। মঞ্চসজ্জায় বাগানের দৃশ্য ভালো হলেও অন্য দৃশ্য নিয়ে এবং আলো নিয়ে ভাবা দরকার। দ্বিতীয় নাটক ‘ঢিসুম-ঢিসুম’-অশুভকে জয় করে শুভকে প্রতিষ্ঠা করা-অসুন্দরকে পরিত্যাগ করে সুন্দরের আরাধনা করা বা ভয়ভীতিকে পর্যদস্ত করে অকুতোভয়ে এগিয়ে যাওয়ার সাহসীকতা আমাদের চিন্তায় চেতনায় মননে সমাহিত। সঠিক সময়ে এই ছাই চাপা আগুনকে উস্কে দিতে পারলেই মানুষ হয়ে ওঠে সর্বশক্তিমান-এমনই এক প্রতিবাদের নাটক। আপাত দুর্বল এবং সাহসী একই চরিত্রে দুটি রূপ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যদুপতি চরিত্রে পরিচালক কল্যাণ দাশগুপ্ত। তাঁকে যোগ্য সহযোগিতা করেছে যুথিকা নন্দী, স্মৃতিরেখা গঙ্গোপাধ্যায়, কমলেশ রায়, জয়দীপ বড়াল, অভিনব সেনগুপ্ত, উত্তম দাস, পার্থ ধর ও অলোকা বড়াল।
তবে পৃথক ভাবে জগা মিত্তির চরিত্রে অনুজ কুমার নন্দী এবং ফকির চরিত্রে প্রশান্ত পাল অভিনয়ে এবং কন্ঠস্বরে নাটককে এক উচ্চমাত্রায় পৌঁছে দেয়। পরিচালককে ধন্যবাদ প্রতিটি চরিত্রের প্রতি সমান নজর দিয়ে দলগত অভিনয়কে সমৃদ্ধ করেছেন। মঞ্চসজ্জায় পার্কের দৃশ্য অসাধারণ (কল্যাণ দাশগুপ্ত), আলো (বিমান দাশগুপ্ত, শঙ্কর চক্রবর্তী), আবহ (রূপক দে সরকার) এবং রূপসজ্জা (কালিদাস চট্টোপাধ্যায় ও শক্তিপদ আইচ), নাটকের সফল মঞ্চায়নের সমান অংশীদার।

মুম্বইয়ে নাটক
জলপাইগুড়ি রূপায়ণ নাট্য সংস্থার পথ চলা শুরু ২০০৯ সালে। এই অল্প সময়ের মধ্যেই নাট্যদলটি প্রযোজনা করেছে বেশ কয়েকটি ছোট নাটক। যার মধ্যে ‘হীরামন’ নাটকটি ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নাট্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। মোহিত চট্টোপাধ্যায় রচিত নাটকটির আবহ পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দীপঙ্কর রায়ের। মঞ্চ সৃজনে মিতুল সামাজিক। নবি মুম্বই-এ বাংলা নাটকের চর্চাকে ধরে রেখেছে এমন একটি নাট্যদল। ‘সার্থক রূপায়ণ’-এর ২৯তম নাট্য প্রতিযোগিতায় (১-২ ডিসেম্বর) অংশ নেয়। জলপাইগুড়ির শহরের ‘ইচ্ছেডানা’ ও এই নাট্যদলটি। সেখানে ‘হীরামন’ নাটকটি অভিনয় করে রূপায়ণ পেয়েছে পাঁচটি পুরস্কার। তৃতীয় শ্রেষ্ঠ প্রযোজনা ও নির্দেশনা। এ ছাড়া অভিনয়ের জন্য পুরস্কৃত হলেন দীপঙ্কর রায়, মৌপিয়া চক্রবর্তী ও শ্যামাপ্রসাদ পান্ডে। ইচ্ছেডানার ‘গুড়িয়া মানে’ নাটকটিও এই প্রতিযোগিতায় দুটি পুরস্কার পেয়েছে।

নাট্যোৎসব
জলপাইগুড়ির মালবাজারে দু’দিন ব্যাপী নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছিল অ্যাক্টোওলা নাট্য সংস্থা। সহযোগিতায় ছিল ডামডিল যুব নাট্য সংস্থা। এ বার দ্বিতীয় বর্ষে পা দিল এই নাট্যোৎসব। মাল সুভাষিনী বালিকা বিদ্যালয়ের রবীন্দ্রভবনে উৎসবের প্রথম দিন মঞ্চস্থ হল দুটি নাটক। প্রথমার্ধে ডামডিল যুব নাট্য সংস্থার শিশুরা মঞ্চস্থ করে রবীন্দ্রনাথের বিসর্জন। দ্বিতীয়ার্ধে ছিল শিলিগুড়ি থিয়েটার অ্যাকাদেমির নাটক জলঘড়ি। দ্বিতীয় দিনের প্রথমার্ধে মঞ্চস্থ হয় সুদীপ সেনের উপন্যাস অবাক পৃথিবী অবলম্বনে অ্যাক্টোওলার নাটক অনধিকার প্রবেশ। দ্বিতীয়ার্ধের নাটক ছিল সুচিত্রা ভট্টাচার্যের উপন্যাস অবহাগন অবলম্বনে জলপাইগুড়ির ইচ্ছেডানার নাটক গঙ্গাস্নান। দু’দিনই নাট্যপ্রেমীর ভীড়ে জমজমাট ছিল রবীন্দ্রভবন।

সুরে মেতেছে শিলিগুড়ি
প্রধানগরের এক চার্চে বড়দিন উপলক্ষে ক্যারল। —নিজস্ব চিত্র।
‘ক্যারল’-এর সুরে রোজই নামছে সন্ধে। শিলিগুড়ি শহরের চার্চ রোড কিংবা প্রধাননগরের চার্চ, সর্বত্রই বিকেল থেকে দেখা যায় সব বয়সের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা ‘ক্যারল’-এর সুরে গলা মেলাচ্ছেন। বড়দিনের সাজে সাজছে শিলিগুড়ি। বাতাসে ছুটির গন্ধ। খুশির আবহ চারদিকে। শিলিগুড়ির সবচেয়ে পুরনো চার্চ, যার নামে চার্চ রোড হয়েছে তার প্রতিষ্ঠাতা জর্জ মবার্ট ও স্কটিশ মিশনারিরা। বর্তমানে এটা সিএনআইএ-র অন্তর্ভূক্ত। বড়দিনে চার্চও সেজে ওঠে রঙিন কাগজের মোড়কে ও বাতির রোশনাইয়ে। একাধিক চার্চ রয়েছে শহরের প্রধাননগরে। যার মধ্যে পড়ে সেন্ট মেরিস চার্চ, প্রেপিটেরিয়ান চার্চ ও ডায়োসেশন সিএনআই চার্চ। বড়দিন উপলক্ষে হচ্ছে ক্রিসমাস ক্যারল। এর অর্থ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে আনন্দ গান। শিলিগুড়িতে প্রতি বছর ক্যারল-এর আয়োজন করা হয়। ২২শে ডিসেম্বর সিটি সেন্টারে অনুষ্ঠান রয়েছে।

প্রস্তুতি
শীতের জলপাইগুড়ি সাজছে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে। ২১ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে উত্তরবঙ্গ চলচ্চিত্র উৎসব। উদ্বোধন করবেন রঞ্জিত মল্লিক ও জুন মাল্য। ২২ শে আলোচনা: ‘চলচ্চিত্র ও নাটক’। হাজির থাকছেন অশোক বিশ্বনাথন, হরিমাধব মুখোপাধ্যায় ও পার্থ রাহা। এই উৎসব চলবে ২৫শে ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর্য নাট্য সমাজ রবীন্দ্র ভবনের ব্যবস্থাপনায় শুরু হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ বাংলা নাটক প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা চলছে ১৯৫৬ সাল থেকে। ২৫শে ডিসেম্বর অনামী জলপাইগুড়ির নাটক ‘নতুন বাড়ির পলেস্তারা’, ২৬শে তরুণ নাট্য সংস্থা ধূপগুড়ির ‘ঢিসুম-ঢিসুম’, ২৭শে কলকাতা নবাঙ্কুরের ‘শ্যামা এবং’, ২৮শে। উদিচী জলপাইগুড়ির ‘জীবন যেমন’, ২৯শে কোচবিহার কম্পাসের ‘আবৃত’, ৩০শে আনর্ত জলপাইগুড়ির ‘পদ্য গদ্য প্রবন্ধ’ ও ৩১ ডিসেম্বর কোচবিহার ইনস্টিটিউট অফ পারফর্মিং আর্ট-এর নাটক। পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের আয়োজনে জলপাইগুড়ি বই মেলা হচ্ছে। ৭-১৩ জানুয়ারি রবীন্দ্র ভবন প্রাঙ্গণে থাকছে ৭০টি স্টল। ৩০-৩১ জানুয়ারি জলপাইগুড়ি চিত্তপটের উৎসবে ওড়িশার নাট্যচেতনার ‘চ্রিং চ্রিং’। নির্দেশনা সুবোধ পট্টনায়েক।

জলপাইগুড়ির মালবাজারে নাট্যোৎসব। সুদীপ দত্তের তোলা ছবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.