গণ্ডগোল থামছে না কেশপুরে। বৃহস্পতিবার রাতে কেশপুর থানা এলাকার মগরাতে তিরবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল গোপাল মুর্মু (৪৮) নামে এক তৃণমূল সমর্থকের। তৃণমূলের অভিযোগ, তাদের সভায় সিপিএমের লোকেরা তির-ধনুক নিয়ে হামলা চালিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যদিও সিপিএম অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, এটা তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের ফল। সম্প্রতি ওই এলাকায় স্কুল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ হয়েছিল। তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী ভোটে জিতে যাওয়ায় গণ্ডগোল বাড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে তৃণমূলের শাসক ও বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর মধ্যেই সংঘর্ষ বেধেছিল বলে দাবি সিপিএম নেতৃত্বের।
বস্তুত এই এলাকা আগে পুরোপুরি সিপিএমের দখলেই ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরে অধিকাংশ তৃণমূলে যোগ দিলেও অন্দরে-অন্দরে কিছু লোক এখনও সিপিএমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। বিশেষত গ্রামবাসীদের মধ্যে কে-কোন দলের সমর্থকতা নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতেই গণ্ডগোলের খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী গ্রামে গিয়েছিল। ছয় জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। কিন্তু তাঁরা কে-কোন দলের ঠিক ভাবে জানা যায়নি। জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী শুধু বলেন, “পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। ছয় জনকে ধরা হয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত বাকিদের ধরতে তল্লাশি চলছে।” |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ওই এলাকায় তৃণমূলের পতাকা নামিয়ে সিপিএমের পতাকা তুলে দেয় কে বা কারা। তৃণমূল পাল্টা সিপিএমের পতাকা নামিয়ে নিজেদের পতাকা তোলে। মঙ্গলবার ফের দেখা যায় তৃণমূলের পতাকার পাশে সিপিএমের পতাকা উড়ছে। যা দেখে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। ভেতরে-ভেতরে সিপিএম ফের জায়গা করে নিচ্ছে আশঙ্কা থেকে বৃহস্পতিবার মগরাতে দলীয় কর্মসূচি নেয় তৃণমূল। এলাকার মানুষকে নিয়ে সভার ডাক দেওয়া হয়। অভিযোগ, সভা চলাকালীন সিপিএমের লোকেরা তির-ধনুক হাতে হামলা চালান। শুক্রবার মগরা গ্রামে যান জেলা তৃণমূলের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল। ছিলেন আশিস চক্রবর্তী, শিবু পানিগ্রাহী ও আরিফ আহমেদ। আশিসবাবু অভিযোগ করেন, “সভায় সিপিএমের বাহিনী আক্রমণ চালায়। প্রথমে তির ছোড়ে। পরে লাঠি নিয়ে হামলা করে। তাতে আমাদের দলের প্রায় ২০ জন সমর্থক আহত হয়েছেন। এক জনের মৃত্যুও হয়েছে। দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে কেশপুরের মানুষকে কথা বলতে দেয়নি সিপিএম। এখন আবার গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করছে।”
কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “কেশপুরে সংঘর্ষে যাওয়ার মতো বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের নেই। কীর্তন দলের লাল পতাকায় কাস্তে-হাতুড়ি-তারা এঁকে বিক্ষুব্ধ তৃণমূলেরই কেউ পতাকা তুলে দিয়েছিল বলে শুনেছি। তা নিয়েই ওদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এর সঙ্গে আমাদের দলের কোনও যোগ নেই।” |