রাইসিনার দরজায় পৌঁছল ক্ষোভের আগুন
ময় যত গড়াচ্ছে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ তীব্রতর হচ্ছে। দিল্লিতে, দিল্লির বাইরে। এ দিন সন্ধ্যায় বিক্ষোভ পৌঁছে যায় খাস রাষ্ট্রপতি ভবনের দরজায়। নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে রাইসিনা চত্বরে ঢুকেও পড়েন এক প্রতিবাদিনী। পুলিশ তাঁকে সরিয়ে দিলে তিনি ফুঁসতে ফুঁসতে বলেন, “ভিতরে ঢুকতে কেন অনুমতি লাগবে? আমাদের হেনস্থা করার সময় কি কারও অনুমতির দরকার হয়?”
এই পরিস্থিতিতে তাৎপর্যপূর্ণ শোনাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের মন্তব্য “দিল্লি সত্যিই নিরাপদ নয়। ওই মেয়েটির সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর সাহস আমার নেই। আমি লজ্জিত, আমি কিছু করতে পারিনি।”
নিরাপত্তার অভাব যে কতটা, তার আরও একটা জ্বলন্ত নজির এ দিনই তৈরি হয়েছে। আবার। রবিবার রাতে ঘটনাস্থল ছিল চলন্ত বাস। আজ সন্ধ্যায় রাজধানীরই ওয়েলকাম এলাকায় তিন প্রতিবেশীর হাতে গণধর্ষিতা হয়েছেন ৪০ বছরের এক মহিলা। চার সন্তানের জননী বাড়িতে একা ছিলেন। সেই সময়ে তাঁকে মাদক মেশানো পানীয় খাইয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। গফ্ফর নামে এক অভিযুক্ত ধরা পড়েছে। দু’জন পলাতক।
মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে থাকা ছাত্রীর ধর্ষণে অভিযুক্তদের মধ্যে অবশ্য বাকি দু’জন আজ গ্রেফতার হয়েছে। এখন দাবি, দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির। ইন্ডিয়া গেট, যন্তরমন্তর, সফদরজঙ্গ হাসপাতাল, সর্বত্র গমগম করছে একটাই স্লোগান ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। অন্ধকার নেমেছে, উজ্জ্বলতর হয়েছে মোমের আলো।
অ্যাসিড-হামলার ক্ষত মুখ জুড়ে। রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে
বিক্ষোভে সামিল সেই তরুণীও। শুক্রবার। ছবি: এপি
রাজপথে জড়ো হওয়া তরুণ-তরুণীদের একটি দল আজ প্রথমে ইন্ডিয়া গেটের দিকে মিছিল করে আসেন। পরে তাঁরা রওনা হন রাষ্ট্রপতি ভবনের দিকে। সকালে গিয়েছিল একদল খুদে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আজ দেখা করতে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনও। এক সময়ে নারায়ণনের গাড়িও কার্যত ঘিরে রেখে বিক্ষোভ চলে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি যন্তরমন্তর থেকে সনিয়া গাঁধীর বাড়ির সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। সফদরজঙ্গ হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভে যোগ দেন হাসপাতালের কয়েক জন ফিজিওথেরাপিস্টও।
ক্ষোভের আগুন নেভাতে চেষ্টার কসুর করছে না কেন্দ্র-রাজ্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব চার্জশিট পেশ করে আদালতে প্রতি দিন শুনানির জন্য আবেদন করা হবে। স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের পাশাপাশি খুনের চেষ্টারও অভিযোগ আনা হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের জন্য আদালতে আর্জি জানানো হবে। সংসদে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবি উঠেছিল। কিন্তু স্বরাষ্ট্রসচিবের বক্তব্য, আইন অনুযায়ী এই অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডই সর্বোচ্চ শাস্তি।
দিল্লি সত্যিই নিরাপদ নয়। ওই মেয়েটির সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর সাহস নেই। আমি লজ্জিত।
শীলা দীক্ষিত

রবিবারের ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে রাম সিংহ, মুকেশ, পবন গুপ্ত ও বিনয় শর্মা নামে চার জনকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। গত রাতে এক কিশোর গ্রেফতার হয়। প্রাপ্তবয়স্ক নয় বলে তার নাম প্রকাশ করা হয়নি, তবে সে সত্যিই অপ্রাপ্তবয়স্ক কি না, তা পরীক্ষা করা হবে। আর এক জন, অক্ষয় ঠাকুর ধরা পড়ে বিহারের ঔরঙ্গাবাদে। এর জন্য আজ দিল্লি পুলিশের ঢালাও প্রশংসা করেছেন স্বরাষ্ট্রসচিব। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী যদিও প্রশ্ন তুলেছেন, তদন্তে তৎপরতা দেখালেও এই ধরনের ঘটনা রোখার ক্ষেত্রে দিল্লি পুলিশ ব্যর্থ কেন। প্রসঙ্গত, দিল্লির আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতে। আজ এ নিয়ে নতুন বিতর্ক উস্কে দিয়ে শীলা দীক্ষিত যুক্তি দিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা রাজ্য সরকারের বিষয় হওয়া উচিত, কেন্দ্রের নয়। দিল্লি শহর জুড়ে পুলিশ সিসিটিভি বসাতে উদ্যোগী হলেও তাতে কতটা কাজের কাজ হচ্ছে, তা নিয়েও সন্দিহান তিনি। রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি স্বরাষ্ট্রসচিবকে তলব করেছে।
পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ দিল্লি হাইকোর্টও। ধর্ষণের সময় বাসটি যে যে রাস্তা দিয়ে গিয়েছিল, সেখানে কত জন পুলিশ অফিসার ডিউটি করছিলেন, তা জানতে চেয়েছিল আদালত। কিন্তু পুলিশ রিপোর্টে তা জানানো না হওয়ায় অসন্তুষ্ট কোর্ট। পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমারের অবশ্য দাবি, ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই পুলিশের টহলদারি জিপ ওই তরুণী ও তাঁর বন্ধুকে উদ্ধার করেছিল। তরুণীর বন্ধু শুধু বলতে পেরেছিলেন সাদা ডিলাক্স বাসের কথা। এটুকু তথ্য সম্বল করেই তাঁরা তদন্ত শুরু করেছিলেন। স্বরাষ্ট্রসচিবের দাবি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তাদের দোষী প্রমাণ করতে অসুবিধা হবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.