নিজেদের দলের লোকেদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কিছু দিনের মধ্যেই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা সিপিএমের সাহায্য চাইবেন, খণ্ডঘোষের সগরাইয়ে সিপিএমের জনসভায় এমনই মন্তব্য করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। এ দিন তিনি বলেন, “বিধানসভায় থাকার সুবাদে কিছু কিছু নথিপত্র আমাদের হাতে আসে। তাতে দেখেছি, পুলিশের দেওয়া রিপোর্ট অনুসারে মাত্র এক বছরে তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে ৩৬৫টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওরা শুধু আমাদের বা কংগ্রেসের উপরে আক্রমণ চালাচ্ছে না, নিজেদের লোকেদের উপরেও আক্রমণ চালাচ্ছে। কে এলাকা থেকে কত তোলা আদায় করতে পারবেন, তা নিয়েই তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটছে।”
সম্প্রতি রায়নার শ্যামসুন্দরে সিপিএমের খণ্ডঘোষ জোনাল কমিটির এক সদস্য তথা এলাকার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থলে গিয়ে আক্রন্ত হন জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা সিপিএমের জেলা সম্পদাকমণ্ডলীর সদস্য উদয়শঙ্কর সরকার। সিপিএমের অভিযোগ, এই ঘটনার পরেও তাদের মিছিল করার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। রাজ্যে তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রায়না বা খণ্ডঘোষে সিপিএম কোনও সভা, মিছিল বা লোকাল ও জোনাল কমিটির সম্মেলনও করতে পারেনি বলে দলের নেতাদের দাবি। এ সবের প্রতিবাদেই এ দিন সগড়াই ফুটবল মাঠে সভা করে সিপিএম। |
সিপিএম নেতাদের অভিযোগ, সভায় আসার সময়ে নানা জায়গায় তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের মারধর করা হয়েছে। রাস্তা অবরোধ করে আটকে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি। সভায় সূর্যকান্তবাবু দাবি করেন, তৃণমূলের যে সব লোকজন তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা চালাচ্ছে, কিছু দিনের মধ্যে তারা নিজেদের দলের হামলার হাত থেকে বাঁচতেই সিপিএমের কর্মীদের কাছে আশ্রয় চাইবেন। বিরোধী দলনেতার মন্তব্য, “আজ যাঁরা আপনাদের সভায় আসতে দিচ্ছে না, গালিগালাজ, মারধর করছে, জরিমানা আদায় করছে আপনাদের কাছ থেকে, তাঁদের এক দিন সভায় জায়গা করে দিতে হবে আপনাদেরই। যাঁরা আপনাদের উপরে এখন হামলা চালাচ্ছেন, তাঁরাই আপনাদের কাছে সাহায্য চাইছেন। এমন দিন আসতে দেরি নেই।” সভায় শিল্পনীতি ও বেকার সমস্যা নিয়েও রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করেন সূর্যকান্তবাবু। সিপিএম নেতারা কর্মী-সমর্থকদের ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ নেওয়ার ডাক দেন।
উদয়শঙ্করবাবুর অভিযোগ, “এ দিন সভায় আসার ব্যাপারে বাধা দেওয়ার কথা বারবার পুলিশকে জানালেও ফল হয়নি। তাই বড় জনসভা করার কথা থাকলেও দশ হাজারের বেশি মানুষ আসতে পারেননি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের আবার দাবি, “রবিবার এই মাঠেই সভা করার কথা তৃণমূলের। আমাদের সভায় কম লোক আসতে দিয়ে তৃণমূল প্রমাণ করতে চায়, মানুষ এখনও ওদের সঙ্গে রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, মানুষ এখন পরিবর্তনের বদলে পরিত্রাণ চাইছেন।”
রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলায় তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মলয় ঘটকের অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, “প্রচুর হাঁক-ডাক করে সভায় হাজার তিনেক লোক জড়ো করতে পেরেছে সিপিএম। মুখরক্ষার জন্য এখন মিথ্যা অভিযোগ করছে।” পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “সভা যাতে নির্বিঘ্নে হয়, সে জন্য এলাকায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। তিন জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পাঁচ জন ডিএসপি এলাকায় ছিলেন। কোনও গোলামালের খবর আসেনি।” |