মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছেড়ে যেতে চাইলেও তাঁকে মহাকরণে ধরে রাখতে চায় সিপিএম! দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেব তেমনই বলছেন!
আপাতত মন দিয়ে বিরোধী ভূমিকাই পালন করতে চায় সিপিএম। তারা চায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পাঁচ বছরের মেয়াদ সম্পূর্ণ করুক। কিন্তু দু’দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা মন্তব্য করেছিলেন, রাজ্যের কোষাগারের এমন ভয়ঙ্কর অবস্থা জানলে তিনি ক্ষমতায় আসতেই চাইতেন না। এরই পাল্টা শোনা গেল গৌতমবাবুর মুখে। কেষ্টপুরে শুক্রবার দলীয় সভায় সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতমবাবু বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরো সময় পর্যন্ত থাকার ইতিহাস নেই। রেল মন্ত্রকে থাকেননি, কংগ্রেসের সঙ্গেও থাকেননি। এ বার সরকারে যদি উনি পুরো পাঁচ বছর না-থাকতে চান, তা হলে আমরাই তাঁকে ফের ধরে নিয়ে এসে মহাকরণে বসিয়ে দেব!”
কেষ্টপুরে গৌতমবাবুর জনসভার কয়েক ঘণ্টা আগেই মিশনবাজারের ওই মঞ্চ ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মঞ্চ ভেঙে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত এ দিন মিশনবাজারের মাঠে একটি ম্যাটাডোরে দাঁড়িয়েই বক্তৃতা করেন গৌতমবাবু। এবং সেখানেই তাঁর মন্তব্য, “যে ভাবে মমতা ক্ষমতায় এসেছিলেন, মনে হয়েছিল তিনি পাঁচ বছর তো থাকবেনই, এমনকী দশ বছরও থাকতে পারেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, পুরো পাঁচ বছর চলাই মুশকিল! এখন মমতার সমালোচনা করছেন কংগ্রেস, এমনকী তৃণমূলের সমর্থক থেকে নেতা-নেত্রীরাই। আমরা অবশ্য চাই, তিনি পুরো পাঁচ বছর থাকুন।” নিজস্ব কায়দায় গৌতমবাবুর আরও সংযোজন, “আমরা অবশ্য আঠার কাজ করতে পারব না! এক এক করে অনেকেই বেরিয়ে যাচ্ছেন। দলটা ভেঙে যাচ্ছে। মমতা নতুন নতুন মন্ত্রী করছেন। এ ভাবে কত দিন সরকার চলবে? মমতা যা করতে চাইছেন, তাই হাইকোর্ট বাতিল করছে!”
মমতার সরকারকে তোপ দাগলেও নিজেদের ঘর গোছানোর কাজেও জোর দিয়েছেন গৌতমবাবুরা। বেলঘরিয়ায় এ দিনই সন্ধ্যায় দলের এক নেতার স্মরণসভায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেছেন, “দলের ৩-৪%, অর্থাৎ ১২ হাজার কর্মী বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি বা খারাপ অভ্যাসের শিকার। ২ লাখ ৯৪ হাজার পার্টি কর্মীর মধ্যে তাঁরা সংখ্যায় নগণ্য হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।” গৌতমবাবু বলেন, “উত্তর ২৪ পরগনায় দলের কয়েকশো কর্মীকে সাসপেন্ড করেছি। আগামী দিনে আরও কয়েকশো কর্মীকে সাসপেন্ড করব। তাঁদের কাছে তিনটে প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে। এক, বাড়ি বাড়ি কেন চাঁদা তুলতে যাননি, দুই, কেন তাঁরা পার্টি ক্লাসে যাচ্ছেন না এবং তিন, প্রকাশ কারাট থেকে বিমান বসু কারও সভাতেই তাঁরা কেন যান না? জবাব না-পেলে তাঁদের দল থেকে ছ’মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হবে। এ ধরনের কর্মীদের দলে রাখব না!”
গৌতমবাবু তোলেন নিউটাউনের জমি-প্রসঙ্গও। পাশাপাশিই তিনি জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে পঞ্চায়েত ভোটে এক একটা কেন্দ্রে তিন জন সম্ভাব্য প্রার্থীকে তাঁরা তৈরি রাখবেন। গৌতমবাবুর কথায়, “আজকে ওরা আমাদের মঞ্চ ভাঙচুর করছে, কালকে বলবে প্রার্থী হতে দেব না! আমরাও জানাচ্ছি, এ ভাবে দমানো যাবে না। দরকার পড়লে এক একটা কেন্দ্রে তিন জন করে প্রার্থী তৈরি রাখব!” |