|
|
|
|
|
|
|
মনোরঞ্জন... |
|
মহাসাফল্যের পাই |
লাইফ অব পাই। মাস্টারপিস এ ছবি মিস করার অর্থ জীবনটা অপূর্ণ থেকে যাওয়া। লিখছেন গৌতম চক্রবর্তী |
পাই পটেল। সালিম সিনাই। শিবা।....আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি এই ভারতীয় বালকরা হলিউডের কোডাক থিয়েটারে অস্কার অনুষ্ঠান মাতিয়ে দিতে পারে।
পুদুচেরির বালক পাই পটেলকে অনেকেই ‘লাইফ অব পাই’ ছবিতে দেখে ফেলেছেন। কানাডার লেখক ইয়ান মার্টেলের বুকারজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে অ্যাং লি-র ছবি। ‘জীবনেও ভোলা যাবে না। অনেক অস্কার। জাদু বাস্তবতা!’ টুইট করেছেন পপ গায়ক রিকি মার্টিন।
১৭ বছরের পাইকে ভালবেসে ফেলেছে ভারতও। শুরুর দিনেই প্রায় চার কোটি টাকার ব্যবসা। ‘ওপেনিং ডে ওপেনিং শো’ থেকেই বলিউড-কাঁপানো খান, কপূরদের সঙ্গে টক্কর! । ‘‘মাস্টারপিস! এ ছবি কেউ মিস করলে আফসোস করবেন,” জানাচ্ছেন সুরকার এ আর রহমান।
সালিম সিনাই, শিবাদের অবশ্য ভারত এখনও পরদায় দেখেনি। সলমন রুশদির বুকারজয়ী উপন্যাস ‘মিডনাইট্স চিলড্রেন’ নিয়ে দীপা মেহতার পরিচালনায় তৈরি ছবি। কানাডা, আমেরিকায় ইতিমধ্যেই সেই ছবি যাঁরা দেখেছেন, কেউ কেউ উচ্ছ্বসিত। বড় দিনের সপ্তাহে, আগামী ২৬ ডিসেম্বর ব্রিটেনে রিলিজ করছে এই ছবি। নায়ক সালিম সিনাইয়ের চরিত্রে সত্য ভাবা নামে এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত বালক। সমালোচনাও কম নয়। ‘‘রুশদি নিজে চিত্রনাট্য লিখে, নিজের গলায় কথা বলে ছবির বারোটা বাজিয়েছেন,” লিখেছে ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকা। লেখক এবং চিত্রনাট্যকারকে গালিগালাজ করেও তাদের আশা, ‘একমাত্র সত্য ভাবা ছবিকে বাঁচাতে পারেন।’
অর্থাৎ, অ্যাং লি-র ছবি নিয়ে সকলে যতটা উচ্ছ্বসিত, দীপা মেহতা নিয়ে অতটা নয়। তবু একটা মিল রয়েছে। ‘পাই’ সুরজ শর্মা ও ‘সালিম’ সত্য ভাবা। দুনিয়ার সিনেমাস্কোপে এরাই আজ ‘ইয়াং ইন্ডিয়া’। |
|
মহাসাগরের স্রোতে
চার দিকে শুধু নীল জল। ওপরে নীল আকাশ। প্রশান্ত মহাসাগরে এ ভাবেই ২২৭ দিন ধরে লাইফবোটে ভেসে চলেছে পাই আর রিচার্ড পার্কার। রিচার্ড পার্কার কোনও মানুষ নয়, ৪৫০ পাউন্ড ওজনের হিংস্র এক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।
পুদুচেরি বোটানিকাল গার্ডেনে পাইয়ের বাবার একটি চিড়িয়াখানা ছিল। ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে চিড়িয়াখানার প্রাণীগুলিকে আমেরিকায় এক সার্কাস কোম্পানিকে বিক্রি করে কানাডার অভিবাসী হওয়ার কথা ভাবেন পাইয়ের মা-বাবা। জাহাজে বাঘ, ওরাংওটাং, জেব্রা সকলকে তোলা হয়। কিন্তু মাঝসমুদ্রে জাহাজডুবি। পাইয়ের মা-বাবা-দাদা সকলের সলিল সমাধি। লাইফবোটে পাইয়ের সঙ্গে একটি জেব্রা, ওরাংওটাং ও হায়না চলে আসে। কয়েক দিন পরে দেখা যায়, বোটের নীচে বসে আছে রিচার্ড পার্কার। অন্য জন্তুদের সে খেয়ে ফেলে। শুধু বেঁচে থাকে পাই। বাঘ মাঝে মাঝে আক্রমণ করতে চায়, কিন্তু কিশোর পাই বুদ্ধি করে তাকে পানীয় জল দেয়, সমুদ্রের মাছ ধরে খাওয়ায়। বাঘটি হিংস্র, কিন্তু চিড়িয়াখানায় বেড়ে উঠেছে। মানুষই তাকে বরাবর খাবার দিয়েছে। পাইকে সে খাবে কী ভাবে?
বাঘে-মানুষে সহাবস্থানের এই কাহিনি পুরোটাই থ্রিডিতে। এর আগে অ্যাকশন-প্যাক্ড ‘ক্রাউচিং টাইগার হিডেন ড্রাগন’ থেকে রোমান্টিক ‘ব্রোকব্যাক মাউন্টেন’ অনেক ছবিতেই মন কেড়েছেন অ্যাং লি। কিন্তু জীবনের এই প্রথম থ্রিডি ছবিতে আগের সব রেকর্ডই ছাপিয়ে গেলেন তিনি। সিনেমায় থ্রিডি মানে এখন ‘হ্যারি পটার’, জেম্স ক্যামেরনের ‘অবতার’ বা ‘টাইটানিক’। হলে বসেই আপনার নাকে মুখে জল ঢুকে যাবে, চোখের সামনে বড় হয়ে ছুটে আসবে আগুনের গোলা বা বিষাক্ত তির। অ্যাং লি-র প্রথম কৃতিত্ব, এই ছবিতে ‘থ্রিডি’ প্রযুক্তির সংজ্ঞা তিনি বদলে দিয়েছেন। চোখের সামনে সীমাহীন সমুদ্র, উড়ুক্কু মাছের লাফালাফি। ‘লাইফ অব পাই’ বোঝাল, থ্রিডি মানে শুধুই চমক আর ভায়োলেন্স নয়। কখনও কখনও চোখের আরাম এবং মনের প্রশান্তি।
প্রশান্তির পিছনে অনেক যন্ত্রণা ছিল। ছবির প্রযোজক ডেভিড উওমার্ক এ বার গোয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এসে বলেছিলেন, উপন্যাসটা প্রথম পড়ে তিনি কিছুতেই ছবি করতে যাননি। জল, বাঘ আর একটা বাচ্চা ছেলে। যে কোনও একটা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়। আর একসঙ্গে তিনটে? পরিচালক অবশ্য শুরু থেকে জিদ ধরে বসেছিলেন। ‘স্বপ্ন দেখতাম, ছবিটা করতেই হবে,’ বলছিলেন অ্যাং লি।
পৃথিবী জুড়ে তিন হাজার ছেলের অডিশন থেকে দিল্লির স্কুলের ১৭ বছরের সুরজ শর্মাকে বেছেছিলেন অ্যাং লি। সুরজ জীবনেও অভিনয় করেনি, অডিশন দিতে গিয়েছিল তার ভাই। ভাই বলেছিল, ‘একা যাব না, তুই গেলে স্যান্ডউইচ খাওয়াব।’ ভাই ক্যামেরার সামনে অডিশন দেয়। কিন্তু লবিতে স্যান্ডউইচলোভী সুরজকে দেখে অভিনয়শিক্ষক তাঁকে বলেন, ‘তুইও যা। স্ক্রিন টেস্টটা দিয়েই আয়।’ মাস দুয়েক পরেই চমক! অ্যাং লি চিঠি দিয়ে মুম্বইয়ে ডেকেছেন সুরজকে। সামনে বসে কাস্টিং ডিরেক্টর আভা কাউফম্যান, পিছনে অ্যাং। সুরজ ঢুকতেই দু’জনে পরস্পরের দিকে তাকালেন। ‘মনে মনে বলছিলাম, এই তো পাই! এত দিনে এল,’ বলছিলেন কাউফম্যান।
কিন্তু সুরজ সাঁতার জানে না। জীবনেও অভিনয় করেনি। মা-বাবা দু’জনেই অঙ্কের শিক্ষক। শু্যটিংয়ের জন্য এক বছর স্কুল কামাই হবে শুনে তাঁরা নারাজ। অ্যাং লি বোঝালেন তাঁদের, ‘গল্পটার সঙ্গে একাত্ম হলে এই এক বছরে স্কুলের থেকে আরও অনেক বেশি শিখবে ও। শিখবে কী ভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়, হতাশায় কেনই বা ভেঙে পড়তে নেই।’ কাউফম্যানের সঙ্গে ‘অফ দ্য রেকর্ড’ রসিকতাও করেছিলেন, ‘যে ছেলের মা-বাবা দু’জনেই অঙ্কের শিক্ষক, সে-ই তো আসল পাই।’
মায়ের সঙ্গে এসে অ্যাং লি-কে একদিন প্রণাম করল সুরজ। মা বললেন, ‘আজ থেকে আপনি ওর গুরু। আপনার হাতেই তুলে দিলাম।’ অ্যাং লি জানাচ্ছেন, এই প্রণাম জিনিসটা চিনের সংস্কৃতিতে নেই। তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। তার পরই শিষ্যকে নিয়ে উড়ে গেলেন তাইওয়ান। সাঁতার শেখা, বডি বিল্ডিং, এক্সারসাইজ। একাগ্রতা বাড়ানোর জন্য প্রাণায়াম।
তাইল্যান্ডে স্টুডিওর জলাশয়ে তত দিনে ঢেউ সৃষ্টি করে বানানো হয়েছে প্রশান্ত মহাসাগর। ছবির ৯০ শতাংশ জুড়ে ডিজিটাল বাঘ, বাকি ১০ শতাংশে আসল বাঘ। দিনের পর দিন সুরজকে বাঘেদের চলাফেরা, হাবভাব দেখতে শিখিয়েছেন অ্যাং লি। সামনে নীল স্ক্রিন, নীচে নীল জল। সেখানেই লাইফবোট থেকে ছিটকে পড়া, রিচার্ড পার্কারকে নজরে রাখা সব অভিব্যক্তি দেখিয়ে চলেছে সুরজ। স্টার্ট সাউন্ড! ক্যামেরা রোলিং! “ছবিটা প্রথম দেখলাম নিউ ইয়র্কের প্রিমিয়ারে। এত রঙিন! আমি তো চোখের সামনে নীল ছাড়া কিছুই দেখিনি,” বলছেন সুরজ।
এ ভাবেই তৈরি হল বছরের সেরা সেলুলয়েড-স্বপ্ন। যে স্বপ্ন সিনেমার দর্শক থেকে উপন্যাসের পাঠক সবাইকে একযোগে ভাসিয়ে দিল। “ভয়ে ভয়েই দেখতে গিয়েছিলাম। ওই রকম ভাল বই নিয়ে ছবি! দেখলাম, অ্যাং লি-ও একটা মাস্টারপিস তৈরি করে ফেলেছেন,” বলছেন কিংফিশার সাম্রাজ্যের যুবরাজ সিদ্ধার্থ মাল্য।
ভারত: এক খোঁজ
কোনও কোনও লেখক একটি বই লেখার জন্যই জন্মান। দর্শনের ছাত্র, কানাডার বাসিন্দা ইয়ান মার্টেলও সে রকম। প্রথম বেরোনোর পরই ২০০২ সালে বুকার পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিল ‘লাইফ অব পাই’। তার আগে ও পরে বেশ কিছু উপন্যাস লিখেছেন মার্টেল। প্রতিটিই সুপারফ্লপ! “ভারত আমার প্রেরণা। যত রকমের জীবজন্তু, তত রকমের ধর্ম,” ই-মেলে বলছিলেন তিনি।
ভারতে দু’বার এসেছিলেন ইয়ান। প্রথম বার হৃষীকেশ, উত্তরকাশী। আসার আগে এক বন্ধু টিপস দিয়েছিল, ভারতীয়রা উদ্ভট ইংরেজি বলে। যেমন ধর, ব্যাম্বুজ্ল (bamboozle)। ইংরেজি শব্দটার অর্থ, ঠকানো। ‘চিটিং’ বললেই হয়। কিন্তু বন্ধু বলেছিল, ভারতীয়রা ওই রকম বোম্বাস্টিক ইংরেজি পছন্দ করে। ব্যাকপ্যাকার ইয়ান তখন ট্রেনের টিকিট কাটতে গিয়েও কপট রাগ দেখাতেন, ‘‘ঠিক ভাড়া নিন। ব্যাম্বুজ্ল করবেন না।” কাউন্টারের লোকটিও অক্লেশে বুঝে ফেলত, “না স্যার, ঠিক ভাড়াই নিয়েছি।”
দর্শনশাস্ত্রে প্রশিক্ষিত, এই রসিক মনের ছাপ ‘লাইফ অব পাই’তেও। সিনেমার খাতিরে বইয়ের কিছু জিনিস বাদ দেওয়া হয়েছে। বালক পাই হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান তিনটি ধর্মের প্রতিই আগ্রহী। তার বাবা ঠাট্টা করেন, ‘‘ওফ, ব্যাটা এক্কেবারে রামকৃষ্ণ।” কে রামকৃষ্ণ, সে সব ফুটনোটে দিয়ে জায়গা নষ্ট করেননি মার্টেল। যার ইচ্ছা বুঝে নেবে। এ রকমই মাস্তানি!
ভারতে দ্বিতীয় বার। মাথেরনের হোটেলে তখন একটি উপন্যাস লেখার চেষ্টায় ইয়ান। উপন্যাসটা এগোয়নি, মাঝপথেই যাবতীয় খসড়া ফেলে দিয়ে সটান পুদুচেরি। সেখানে ছয় মাস থাকতে থাকতেই প্লটটা হানা দেয়।
সেই প্লট, চরিত্র সকলে চোখের সামনে। মহাসমুদ্রে রিচার্ড পার্কার! বালক পাই ভাবে, ‘তুমি ওকে শান্ত করতে পারো না, কিন্তু প্রশিক্ষণ দিতে পারো।’ আমাদের মনেই থাকে হিংস্র বাঘ। তাকে ‘ট্রেইন’ করাই চ্যালেঞ্জ!
কিন্তু মানুষ? সে কি বোঝে গল্পের মর্ম? না কি সবেতেই বাস্তবতা খোঁজে? শেষে জাহাজ কোম্পানির লোকেরা পাইয়ের গল্প মানে না। বলে, ‘লাইফবোটে মারপিট হয়েছিল। এক অন্ধ চিনা নাবিক পাইয়ের মাকে মেরে ফেলেছিল। তাকে পাই খুন করে। মানে, সবই প্রতীক। মা ওরাং ওটাং। বৃদ্ধ নাবিক ছিল হায়না। আর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আসলে পাই। বেঁচে থাকার জন্য নাবিককে খুন করে সে।’
প্রতিবাদ করে না পাই, ‘দুটো গল্প বলেছি। যেটা খুশি, আপনি নেবেন।’
তা হলে কে পাই? রিচার্ড পার্কারই বা কে? অ্যাং লি এবং ইয়ান মার্টেল দু’ জনেই চূড়ান্ত রায় দেননি। ছবি দেখে আপনার যেটা ইচ্ছা, বেছে নেবেন।
|
কেন দেখবেন |
শুধুই থ্রিডি? চমৎকার অভিনয়? লাইফ অব পাই উপন্যাস এবং সিনেমা দুটিতেই নানা ভাবে ছড়িয়ে রয়েছে নানা ইঙ্গিত। সেগুলি কখনও স্পষ্ট হয় না। তবু দর্শকদের দেওয়া হল কিছু চাবি...
• উপন্যাসটি তিনটি অংশে বিভক্ত, ১০০টি অধ্যায়। দান্তের ‘ডিভাইন কমেডি’ও তিন ভাগে, ১০০টি পর্বে বিভক্ত। মহাসাগরে অ্যাডভেঞ্চার আর নরকদর্শন এক!
• বাঘের নাম রিচার্ড পার্কার। এডগার অ্যালান পো-র ‘দ্য ন্যারেটিভ অফ আর্থার গর্ডন পিম’ গল্পের নায়ক ছিল এক নাবিক। তার নাম রিচার্ড পার্কার। বাস্তবে, ১৮৪৬ ও ১৮৮৪ সালে দুটি জাহাজডুবি হয়েছিল। দুটি জাহাজেই রিচার্ড পার্কার নামে দুই নাবিক ছিল। দু’ জনেরই ভাগ্য এক। খিদের জ্বালায় অন্য নাবিকেরা তাদের খুন করে ঝলসে খায়। মানুষের মধ্যে যে লুকোনো নরখাদক প্রবৃত্তি, সেটাই উঠে এল রিচার্ড পার্কার নামে।
• অন্য এক দিক দিয়ে রিচার্ড পার্কার পাইকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। পাইকে যদি প্রতি মুহূর্তে রিচার্ড পার্কার চ্যালেঞ্জ না করত, সে অবসন্ন হয়ে যেত, মৃত্যুও ঘটতে পারত। বরং পাই এক সময় মহাসমুদ্রে ভাবে, সে যে বেঁচে আছে, এটাই ঈশ্বরের দয়া! কাউকেই পুরো ভাল বা মন্দ তকমা দেওয়া যায় না। তুমি তাকে কী ভাবে দেখছ, সেটাই আসল।
• রিচার্ড পার্কার নতুন নয়। ইংরেজি সাহিত্যে বাঘের শক্তি, ডোরাকাটা সৌন্দর্য, জ্বলন্ত চোখ ঐশ্বরিকতার প্রতীক। অষ্টাদশ শতকে ইংরেজ কবি উইলিয়াম ব্লেক লিখেছিলেন, ‘টাইগার টাইগার বার্নিং ব্রাইট।’
• পাই একটি দ্বীপে পৌঁছায়। সেখানে প্রচুর গাছপালা, মিঠে জলের জলাশয়। সূর্যাস্তের পরেই অন্য ঘটনা। দ্বীপটা বদলে যায়। জলাশয় ভরে ওঠে অ্যাসিডে। সবুজ গাছেরা হয়ে ওঠে মাংসাশী। উপন্যাসে ছিল, ‘দ্বীপের কাদায় পায়ের পুরো ওজন চাপিয়ে দিলাম। ডুবলাম না। তবু বিশ্বাস হল না।....এই দ্বীপে শারীরিক আরাম আর আধ্যাত্মিক মৃত্যুর ফাঁদ ছেড়ে তাই বেরিয়ে পড়লাম।’ সোজা কথায়, যত খুশি খানাপিনার শারীরিক আরাম আমাদের আধ্যাত্মিক তৃষ্ণাকে শেষ করে দেয়।
• ওরাং ওটাংকে নিয়ে তিন দিন, তিন রাত লাইফবোটে ভেসে থাকে পাই। পুনরুত্থানের আগে তিন দিন, তিন রাত কবরে ছিলেন যিশুখ্রিস্ট।
• নৌকোয় তখন পাইয়ের সারা শরীরে মাছের আঁশ। উপন্যাস জানায়, ‘হিন্দু তিলকের মতো।’
• নিঃসীম সমুদ্রে কোনও ক্রমে বেঁচে থাকা। লেখকের বয়ান, ‘মিস্টিকদের মতো যন্ত্রণা সয়ে যায় পাই’।
• সারা ছবিতে তিনটে ঘরানা মিলেমিশে। এক দিকে জাহাজডুবির পর লাইফবোটে বেঁচে থাকার অ্যাডভেঞ্চার। সঙ্গে জীবজন্তুর স্বভাব। জাহাজডুবি, মৃত্যু সব পেরিয়েও বহু কষ্টে বেঁচে থাকে পাই। প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা তাকে বড় করে দেয়। ফলে, এটি বড় হয়ে ওঠার গল্প। এবং সব কিছুর নীচে এক আধ্যাত্মিক অভিযানের ইঙ্গিত। |
|
|
|
|
|
|