|
|
|
|
|
|
|
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১... |
|
মিলে যায় কেরলের সঙ্গে বাংলার প্রাকৃতিক নানা দিক |
সিমা-য় চলছে ‘বিটুইন ডার্কনেস অ্যান্ড ম্যাজিক’ শীর্ষক প্রদর্শনী। লিখছেন মৃণাল ঘোষ |
এখন সিমা গ্যালারিতে চলছে কেরলের ৩৫ জন শিল্পীর কাজ নিয়ে প্রদর্শনী ‘বিটুইন ডার্কনেস অ্যান্ড ম্যাজিক’। কিছু দিন আগে এখানে হয়েছিল মুম্বইয়ের কয়েক জন শিল্পীর প্রদর্শনী। ২০০০ সালে আমরা দেখেছিলাম বাংলার শিল্পীদের কাজ। ভাবনা বা দেশ-কালের ভিতর অজানা তমসাবৃত পরিসরকে আলোতে নিয়ে আসা শিল্পকলার কাজ। এই রূপান্তরণের প্রক্রিয়ায় ‘ম্যাজিক’ বা জাদুর একটা ভূমিকা থাকে। এই সাধারণ সত্য ছাড়াও দক্ষিণ ভারতের শিল্পের ক্ষেত্রে এই শিরোনামটি অন্য একটি তাৎপর্যও বহন করে। আদিম শিল্পের ক্ষেত্রে অন্ধকার ও জাদু দু’টি কথাই খুব প্রাসঙ্গিক। দক্ষিণ ভারতের শিল্পে আধুনিকতার ভিতরেও আদিমতার পরম্পরার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থেকেছে। এই বৈশিষ্ট্যটিই কেরলের আধুনিক শিল্পকলায় বিশ্বগত উত্তরাধিকারের ভিতরও আঞ্চলিক আত্মপরিচয় জাগিয়ে রেখেছে।
প্রদর্শনীতে দেখতে পাই মূলত ১৯৪০-এর দশক থেকে কেরলের চিত্রকলার বিবর্তনের একটি রূপরেখা। প্রদর্শনীর প্রবীণতম শিল্পী কে সি এস পানিকর। তাঁর দু’টি তেলরঙের ক্যানভাসের ডিজিটাল প্রিন্ট ছিল প্রদর্শনীতে। পাশ্চাত্য আধুনিকতার আঙ্গিকের সঙ্গে দেশীয় পরম্পরাগত রূপরীতির প্রজ্ঞাদীপ্ত সম্মিলন তাঁর ছবির একটি বৈশিষ্ট্য। প্রাচীন পুঁথি ও ধর্মীয় নানা রকম ছক ও অলঙ্করণ ব্যবহার করে তিনি আধুনিক বিমূর্ততার একটি ধরন তৈরি করেছিলেন। ‘ওয়ার্ডস অ্যান্ড সিম্বলস’ ছবিটি এ দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। কে জি সুব্রামণিয়নের ছবিতে কেরলের আদিম লৌকিকের উপস্থিতির সঙ্গে আমরা সকলেই পরিচিত। ১৯৯৪-এর ‘বহুরূপী’ ছবিটি এখানে রয়েছে। জাদুসম্পৃক্ত পুরাণকল্পের যে বিশেষ ধরন এই ছবিতে আছে, তার দক্ষিণ ভারতীয় বৈশিষ্ট্য বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। চল্লিশের আর এক জন শিল্পী কে এম বাসুদেবন লাম্বুদিরি। তাঁর একটি গ্রন্থচিত্রণের কিছু সাদা-কালো ড্রয়িং-এ দক্ষিণ-ভারতীয় পরম্পরার উত্তরাধিকার অনুভব করা যায়। |
|
সিমায় আয়োজিত প্রদর্শনীর একটি ছবি |
এখান থেকে আমরা যদি একেবারে এখনকার অল্টারনেটিভ আর্টের ক্ষেত্রে চলে আসি, তাহলে মূল্যবোধ ও প্রকাশভঙ্গির বিরাট পরিবর্তন দেখতে পাব। গিরি স্কারিয়া-র তিন মিনিটের একটি সিঙ্গল চ্যানেল ভিডিও রয়েছে প্রদর্শনীতে। তাতে একটি পুরোনো কামান থেকে গোলা ছোড়া হচ্ছে। এই সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একটি ম্যাজিকধর্মী ফ্যান্টাসি। আটটি স্থাপত্যসুলভ ব্লক পর পর ওই কামানের উপর এসে বসছে। তার পরেই শুরু হচ্ছে ফায়ারিং। শেষে ওই ব্লকগুলি আবার শূন্যে মিলিয়ে যাচ্ছে। প্রাক-আধুনিক যুগের এই অস্ত্রের সঙ্গে উত্তর-আধুনিক প্রক্রিয়ার সমন্বয়।
এই জটিলতার নানা দিক পরিস্ফুট হয়েছে মধ্যবর্তী পর্যায়ের বিভিন্ন শিল্পীর কাজে। সাম্প্রতিক শিল্পীদের কাজেও দু’টি প্রবণতা পাশাপাশি উপস্থাপিত হয়েছে। এক দিকে রয়েছে বিশ্বায়ন-সঞ্জাত ভোগবাদী পরিস্থিতিতে মূল্যবোধের ভাঙন এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। আর এক দিকে মানবতার সদর্থকতার প্রতি আস্থা। কেরলের সঙ্গে বাংলার প্রাকৃতিক দিক থেকে যেমন কিছু মিল আছে, তেমনি আছে আদর্শের দিক থেকেও। মার্ক্সবাদী ভাবধারার বিকাশ ওখানে বিশ্বাসের ভিতকে দৃঢ় করেছিল। আজও অবশেষ রয়ে গেছে।
এই বিশ্বাসের ক্ষেত্রটিরই একটি দৃষ্টান্ত অজয়কুমার-এর ‘সাঁওতাল পরিবার’ ছবিটি। ভাস্কর্যের সূত্রে রামকিঙ্করের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন শিল্পী। কিন্তু ওই চিত্রীয় পরিমণ্ডলের ভিতরই আজকের সময়ের বিরুদ্ধে সূক্ষ্ম সমালোচনাও রয়ে গেছে। রাজন কৃষ্ণান ‘মেমোরিয়াল’ শীর্ষক বড় ক্যানভাসে যখন ময়ূরের বিস্তৃত পেখম মেলে থাকার ছবিটি আঁকেন, তখন সেটা সৌন্দর্যের প্রতি বিশ্বাসের আবহই পরিস্ফুট করে। ভি মধু-র ‘সিক্রেট প্র্যাকটিস’ ছবিটি সাম্প্রতিক বিমূর্ততার ভিতর ঐতিহ্যের স্পন্দন।
পাশাপাশি রয়েছে দায়বোধ ও প্রতিবাদী চেতনা। পি এস জালাজা তরুণ শিল্পী। তিনি বাস্তববাদী আঙ্গিকে এঁকেছেন একটি রাজনৈতিক বক্তৃতা ও তাকে ঘিরে বিপুল সংঘর্ষের প্রতিমাকল্প। মানু বিন্নি জর্জ-এর ছবিতে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার অসামান্য সমন্বয়। চিরন্তন ও সাম্প্রতিকের দ্বন্দ্বকে তুলে ধরেছেন তিনি। কে সুধীশ-এর ‘রিফিউজিজ’ ছবিতেও রয়েছে বিপর্যস্ত মানুষের রূপায়ণ। অনেক প্রখ্যাত শিল্পী এই প্রদর্শনীতে রয়েছেন যেমন বাবু জেভিয়ার, ভাগ্যনাথ, কে প্রভাকরণ, এ রামচন্দ্রন, এন এন রিমজন প্রমুখ। তা সত্ত্বেও কেরলের তরুণ শিল্পীদের কাজ বিশেষ মাত্রা দিয়েছে। |
|
|
|
|
|